Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Accidental Deaths

রেল দুর্ঘটনায় মৃত স্বামীর পরে মেয়েকেও পথে ফেলে রেখে হাঁটা দিলেন বধূ,তদন্তে হতবাক পুলিশও

গত ২ মার্চ লেক টাউনের একটি স্কুলের কাছ থেকে বছর চারেকের ওই মৃত শিশুকন্যাটিকে উদ্ধার করে পুলিশ। শিশুটির ঘাড়ের পিছনে আঘাতের চিহ্ন দেখে প্রাথমিক ভাবে পুলিশের ধারণা হয়, তাকে কেউ খুন করে ফেলে দিয়ে গিয়েছে।

An image of Death

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৪ ০৬:৫৪
Share: Save:

বানজারা মহিলা। দুর্ঘটনায় পড়লে যে মানুষের সাহায্য চাইতে হয়, সেই বোধ সম্ভবত কাজ করেনি ঘটনার অভিঘাতে। ট্রেনের ধাক্কায় স্বামীর মৃত্যুর সময়ে তাঁর কোল থেকে ছিটকে পড়েছিল চার বছরের মেয়ে। কিন্তু কাউকে কিছু না জানিয়ে স্বামীর দেহ ফেলে রেখে, গুরুতর জখম সন্তানকে কোলে নিয়েই মা হাঁটা দিয়েছিলেন গন্তব্যের উদ্দেশে। এরই মধ্যে মারা যায় শিশুটি। তখন তাকেও রাস্তায় ফেলে দিয়ে চলে যান মা। লেক টাউনে এক শিশুকন্যার রহস্য-মৃত্যুর ঘটনায় তদন্তে নামার পরে এমন কাহিনি সামনে আসায় হতবাক পুলিশও। বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশকর্তারা জানাচ্ছেন, দুর্ঘটনার কবলে পড়লে যে স্থানীয় লোকজনের সাহায্য চাইতে হয়, পুলিশে খবর দিতে হয়, সেই ধারণাও হয়তো ছিল না ওই বানজারা মহিলার।

গত ২ মার্চ লেক টাউনের একটি স্কুলের কাছ থেকে বছর চারেকের ওই মৃত শিশুকন্যাটিকে উদ্ধার করে পুলিশ। শিশুটির ঘাড়ের পিছনে আঘাতের চিহ্ন দেখে প্রাথমিক ভাবে পুলিশের ধারণা হয়, তাকে কেউ খুন করে ফেলে দিয়ে গিয়েছে। কিন্তু পরে তদন্তে জানা যায়, সেই দিন, অর্থাৎ ২ মার্চ বেলার দিকে উল্টোডাঙায় ট্রেন থেকে নেমে দমদমের দিকে রেললাইনের উপর দিয়ে হাঁটছিলেন বিন্দি নামে এক মহিলা, তাঁর স্বামী রমেশ ও বিন্দির বাবা। কোলে ছিল বিন্দি ও রমেশের দুই মেয়ে। দক্ষিণেশ্বরের কাছে একটি অস্থায়ী আস্তানায় থাকছিলেন সকলে। লাইন ধরে হাঁটার সময়ে ট্রেনের ধাক্কায় রেলের সেতুর উপর থেকে ছিটকে পড়ে যান রমেশ। তাঁরই কোলে ছিল ছোট মেয়ে কোয়েল। বিন্দির কোলে ছিল তাঁদের বড় মেয়ে। বড় মেয়েকে বাবার জিম্মায় রেখে রেল সেতুর একটি অংশে আটকে থাকা ছোট মেয়েকে কোলে তুলে নীচে নেমে আসেন বিন্দি। স্বামীর দেহ ফেলে রেখেই ফের হাঁটতে শুরু করেন। কিছু দূর হাঁটার পরে বুঝতে পারেন, মেয়েরও মৃত্যু হয়েছে। তখন তাকে ওই স্কুলের কাছে ফেলে দিয়ে চলে যান বিন্দি ও তাঁর বাবা।

তদন্তে নেমে পুলিশ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখতে শুরু করে। ২ তারিখের ফুটেজে দেখা যায়, একটি শিশুকে এক পুরুষ ও এক মহিলা রাস্তায় ফেলে দিয়ে যাচ্ছেন। পুলিশের দাবি, ওই পুরুষ ও মহিলা বিন্দি ও তাঁর বাবা। দক্ষিণদাঁড়ি রেল গেট পর্যন্ত হেঁটে তাঁরা ঘুরতে ঘুরতে লেক টাউনের ওই স্কুলের কাছে পৌঁছন।

বিধাননগর কমিশনারেট জানাচ্ছে, ওই বানজারা পরিবারটি অনেক দিন ধরেই এখানে রয়েছে। পরিবারের কেউ ভিক্ষা করেন, কেউ বা তেল বিক্রি করেন। কমিশনারেটের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখার পরে বিন্দি ও তাঁর বাবাকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বিন্দির স্বামী যে ট্রেনের ধাক্কায় মারা গিয়েছেন, তার সত্যতা যাচাই করা হয় জিআরপি-র সঙ্গে কথা বলে। ওই মহিলা এতটা উদাসীন কী ভাবে হলেন, সেটা আমাদের কাছেও বিস্ময়ের। তবে, ওঁদের সঙ্গে কথা বলে যেটা মনে হয়েছে, তা হল, আমাদের মতো শহুরে মানুষ যে ভাবে চিন্তাভাবনা করেন, তার সঙ্গে ওঁদের চিন্তাভাবনা ও জীবনযাপনের বিস্তর ফারাক আছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death police investigation Accidental Deaths
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE