কৃষ্ণনগরের প্রশাসনিক বৈঠকে গত শুক্রবার পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশে বসা ডিজি-কে লক্ষ করে বলেছিলেন, ‘‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশকে আরও ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ হতে হবে।’’
কীসের ভিত্তিতে তাঁর ওই মন্তব্য, তা মঙ্গলবারই পরিষ্কার হয়ে গেল চারু মার্কেট এলাকায়। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির দুই-আড়াই কিমির মধ্যে দুই পাড়ার গোলমাল রুখতে হিমশিম খেল পুলিশ। লাঠি চালিয়েও দু’পক্ষকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি তারা। বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশের ব্যর্থতা নিয়ে সরব হন রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। বলেন, ‘‘পুলিশকে আগে থেকে জানিয়েও ফল হয়নি। পুলিশ সতর্ক থাকলে ঘটনা এড়ানো যেত।’’
পুলিশ জানায়, সোমবার রাতে ডোমপাড়ায় একটি বিয়ের অনুষ্ঠান চলছিল। অভিযোগ, রেললাইনের ও পারে চারু মার্কেট থানা এলাকার ঝালদার মাঠ বস্তির দুই যুবক সেই বিয়েবাড়িতে এসে মদ খেয়ে বচসায় জড়িয়ে পড়ে। এর পরেই ওই বিয়েবাড়িতে ঢিল পড়তে শুরু করে।
আরও পড়ুন: অবশেষে নড়ল পুলিশ, তদন্তে তৈরি বিশেষ দল
ডোমপাড়ার রঞ্জিতা মল্লিকের বিয়ে ছিল সোমবার। পাত্রীর দাদা বিনোদ মল্লিকের অভিযোগ, ‘‘বরযাত্রীরা আসার পর থেকেই ঝালদার মাঠের ছেলেরা লাগাতার ঢিল ছুড়তে থাকে। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ ছিল যে, বিয়ে পণ্ড হওয়ার মতো অবস্থা হয়েছিল। কোনওক্রমে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হয়।’’ পুলিশ সূত্রে খবর, ঢিল ছোড়াকে ঘিরে রাতেই দু’পাড়ার মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। অভিযোগ, ডোমপাড়ার বাসিন্দা সাগর মল্লিককে মারধর করে রেললাইনে ফেলে দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই ফের দু’পাড়ার ঝামেলা শুরু হয়। লাইনের দু’প্রান্ত থেকেই ইট পড়তে শুরু করে। ঝালদার মাঠের বাসিন্দাদের অভিযোগ, সোমবার রাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও মঙ্গলবার সকাল থেকে ডোমপাড়ার বাসিন্দারা ফের গণ্ডগোল শুরু করেন। পাল্টা একই অভিযোগ করেন ডোমপাড়ার বাসিন্দারাও। ঢিলের আঘাতে জখম ডোমপাড়ার কিশোর বিশাল সরকার বলে, ‘‘ওরাই প্রথমে মদ খেয়ে ঝামেলা করেছিল। আমরা কিছু বলিনি। সকালেও ওরা আবার এল।’’
মঙ্গলবার দুপুরে সংঘর্ষের পরে ঘটনাস্থলে যায় চারু মার্কেট, টালিগঞ্জ ও চেতলা থানার পুলিশ। লালবাজার থেকে অতিরিক্ত বাহিনী যায়। পুলিশ লাঠি চালায়। বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ করেন বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, ‘‘রেললাইনের ধারে দীর্ঘদিন ধরে মদ-জুয়ার আসর বসে। থানাকে বহু বার জানানো হয়েছে। কোনও কাজ হয়নি।’’ আরও বলেন, ‘‘রাতে গণ্ডগোলের খবর পেয়ে পুলিশকে ফোন করি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে পুলিশ জানায়। কিন্তু ওরা পরিস্থিতি বুঝতে পারেনি।’’ ঘটনাস্থলে থাকা ডিসি (সাউথ) প্রবীণ ত্রিপাঠী মন্তব্য করতে চাননি। দু’পাড়ার তরফেই টালিগঞ্জ ও চারু মার্কেট থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। রাত পর্যন্ত চার জন গ্রেফতার হয়েছে।