Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Kolkata

WB municipal election 2022: রাজারহাটে দিনভর কার্যত ‘মাছি’ তাড়াল পুলিশ

এমন ‘শান্তিপূর্ণ’ নির্বাচনে চার নম্বর ওয়ার্ডের বাবলাতলায় পৌঁছে দেখা গেল, সেখানে ‘ভোট উৎসব’ চলছে। একটি এটিএমের সামনে মহিলা-পুরুষদের ভিড়।

 রাজারহাটের তেঁতুলতলা পল্লিশ্রী সঙ্ঘের বুথে ভোট দেওয়ার সময়ে ঘেরা জায়গায় নজর অন্য এক ব্যক্তির।

রাজারহাটের তেঁতুলতলা পল্লিশ্রী সঙ্ঘের বুথে ভোট দেওয়ার সময়ে ঘেরা জায়গায় নজর অন্য এক ব্যক্তির। নিজস্ব চিত্র।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৭:৫৭
Share: Save:

তাঁর পাল্কির গানে কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত লিখেছিলেন, ‘উড়ছে কতক ভনভনিয়ে, আসছে কারা হনহনিয়ে’।

শনিবার দীর্ঘ সাত বছর পরে হওয়া বিধাননগর পুর নির্বাচনে রাজারহাট এলাকায় দিনভর হনহনিয়ে এসে ভনভনিয়ে উড়ে বেড়ালেন তাঁরা, বুথ থেকে বুথে। মাছি তাড়ানোর মতো করে পুলিশ তাঁদের লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করল ঠিকই। কিন্তু এলাকাছাড়া করতে পারল না।

এ দিন নির্বাচন ‘অবাধ ও শান্তিপূর্ণ’ করতে প্রশাসন সাড়ে চার হাজার পুলিশকর্মীকে মোতায়েন করেছিল। তবে বাসিন্দাদের অভিযোগ, ‘‘স্থানীয় ভোটারেরা নন, এ দিন বরং অবাধে ও নিশ্চিন্তে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন মোটরবাইকে চেপে আসা বহিরাগতেরাই। বিরোধী দলের প্রার্থীরা কেউ কেউ চিৎকার-চেঁচামেচি করেছেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে শাসক ও বিরোধী, দুই প্রার্থীকেই সরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু সরানো যায়নি অপরিচিত ওই সব লোকজনকে।’’

এ দিন সকাল থেকে সল্টলেকের মতোই বাগুইআটি, স্কুলপাড়া, হাতিয়াড়া, জ্যাংড়া, বাবলাতলা ও নারায়ণপুরের মতো রাজারহাটের দুই বিধানসভা এলাকার বিভিন্ন প্রান্তে বড় বড় জমায়েত দেখা গিয়েছে। যা দেখে অনেকেরই প্রশ্ন, ওঁরা কি আদৌ ভোটার, না কি বহিরাগত?

সকালে ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে কৃষ্ণপুর স্পোর্টিং ক্লাবের বুথের পাশেই দেখা গেল তৃণমূলের দলীয় অফিস। পাশেই খালের কালভার্টের মতো সরকারি সম্পত্তির উপরে ভোটের দিনেও ঝুলছে তৃণমূলের দলীয় পতাকা। পার্টি অফিসে পুলিশ তালা দিতে বললেও সে কথা প্রথমে কানেই তুলতে চাননি দলীয় কর্মীরা। পরে সংবাদমাধ্যম পৌঁছে যাওয়ায় পার্টি অফিস থেকে বেরিয়ে যান কয়েক জন। তাঁদের দাবি, ভোটারদের ‘সাহায্য’ করতেই নাকি তাঁরা সেখানে বসে ছিলেন। খানিকটা দূরে কৃষ্ণপুর চঞ্চলকুমারী বালিকা বিদ্যালয়ের একটি ভোটকেন্দ্রে ঢুকে দেখা গেল, বিরোধী দলের এজেন্টরা কেউ নেই। এক পুলিশকর্মীর কথায়, ‘‘তৃণমূল ও নির্দল প্রার্থীর এজেন্ট রয়েছেন শুধু। শান্তিপূর্ণ ভোট হচ্ছে।’’

এমন ‘শান্তিপূর্ণ’ নির্বাচনে চার নম্বর ওয়ার্ডের বাবলাতলায় পৌঁছে দেখা গেল, সেখানে ‘ভোট উৎসব’ চলছে। একটি এটিএমের সামনে মহিলা-পুরুষদের ভিড়। একদা সিন্ডিকেট-কাণ্ডে নাম
জড়ানো শাহনওয়াজ় আলি মণ্ডল (ডাম্পি) ওই ওয়ার্ডের প্রার্থী। হাসিমুখে ডাম্পি বললেন, ‘‘আমি এখন পরিণত। আগের মতো নেই। নিজের উদ্যোগে বিরোধী দলের এজেন্টকে বুথে বসিয়ে এসেছি। মানুষ ভোট দিচ্ছেন।’’ এর মধ্যেই এক জনকে বলতে শোনা গেল, ‘‘ভোটার নেই। সবাই শুয়ে-বসে রয়েছে। একটু পরে ডাকলে যাব।’’ হাতে কাগজ নিয়ে কয়েক জন মহিলা টোটোয় চেপে তাড়াহুড়ো করে কোথাও যাচ্ছেন। তাঁদের বলতে শোনা গেল, ‘‘কোন দিকে যাব, কিছু তো বলল না।’’

নারায়ণপুরের কাছে একটি বুথে তিন নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী আরাত্রিকা ভট্টাচার্যকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন তাঁর বাবা তথা রাজারহাট-নিউ টাউনের বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায়। তাঁদের সঙ্গে সেখানে গিয়েছিলেন আরও বেশ কয়েক জন। যদিও সংবাদমাধ্যমকে দেখে তাঁরা বেরিয়ে যান। এক জন বললেন, ‘‘ক্যামেরা আছে। এখন নয়।’’

পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের দশদ্রোণ এলাকার একটি বুথে দেখা গেল, সিপিএম প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা বর্মণ চিৎকার করছেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘বাইরের লোকজন এসে ইভিএম ঘিরে রেখেছে।’’ তাঁকে ঘিরে ধরে আবার পাল্টা চিৎকার করছেন তৃণমূল সমর্থকেরা। বুথের বাইরে লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে পুলিশ। সন্দীপন চৌধুরী নামে এক যুবক জানালেন, তাঁর ভোট পড়ে গিয়েছে। ওই ভোটকেন্দ্রের আশপাশে প্রবল ভিড়। পুলিশ এসে ভিড় সরালেও খানিক পরেই সেই বহিরাগতেরা আবার ফিরে আসেন। শেষে পুলিশের এক পদস্থ আধিকারিক ব্যঙ্গের সুরে বললেন, ‘‘এখন যান। আবার পরে আসবেন।’’

পরবর্তী ঘটনাস্থল হাতিয়াড়ার একটি মাদ্রাসা। সেখানে বহিরাগতদের নিয়ে তৃণমূলের সঙ্গে তুমুল গোলমাল হয় সিপিএম এবং নির্দল প্রার্থীর সমর্থকদের। দু’তরফেরই অভিযোগ, বহিরাগতেরা এসে ছাপ্পা ভোট দিচ্ছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE