Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Pollution

Pollution in Ganga: বারণ রয়েছে, শুনছে কে? দূষণ গঙ্গার ঘাটেও!

রিপোর্ট জানাচ্ছে, গঙ্গার ঘাট সংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গের ৩৫টি শহর, বসতিতেই উন্মুত্ত আবর্জনা এলাকা (ওপেন ডাম্পসাইট) রয়েছে।

কুমোরটুিল ঘাটে আবর্জনার স্তূপ। সোমবার।

কুমোরটুিল ঘাটে আবর্জনার স্তূপ। সোমবার। ছবি: সুমন বল্লভ

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০২১ ০৬:৩৪
Share: Save:

এ যেন ‘যেখানে নিষেধাজ্ঞা, সেখানেই নিয়মভঙ্গের ভয়’। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, এর ‘ফাঁদে’ পড়েই পশ্চিমবঙ্গের গঙ্গা দূষণ ক্রমবর্ধমান। যার ব্যতিক্রম নয় কলকাতাও।

এই প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞেরা কেন্দ্রীয় আবাসন ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের একটি রিপোর্টের কথা উল্লেখ করছেন। যে রিপোর্টে উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং পশ্চিমবঙ্গ— এই পাঁচটি রাজ্যের গঙ্গাতীর সংলগ্ন ৯৭টি শহর ও বসতির (যাদের বলা হয় ‘গঙ্গা টাউনস’) ঘাটগুলির পরিচ্ছন্নতা নিয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। যদিও রাজ্য সরকার এবং কলকাতা পুরসভার তরফে বলা হয়েছে, রিপোর্টে উল্লেখিত রাজ্যের গঙ্গার ঘাটগুলির পরিস্থিতির সঙ্গে বাস্তবের সম্পর্ক নেই। রাজ্যের পুর ও নগরোয়ন্নমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মেনে গঙ্গার ঘাট আবর্জনামুক্ত রাখতে রাজ্য সরকার সব পদক্ষেপ করছে। এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি আধিকারিক, পুরসভারগুলির সঙ্গেও নিয়মিত বৈঠক করা হচ্ছে।’’

এমনিতে ২০১৯ সালের লোকসভার নির্বাচনী প্রচার থেকে শুরু করে গত বছর গঙ্গায় মৃতদেহ ভেসে যাওয়ার ঘটনায় তুমুল তরজা হয় কেন্দ্র ও রাজ্যের ক্ষমতাসীন দলে। সম্প্রতি সেই ‘বিবাদ’ই ফের মাথাচাড়া দিয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। কারণ, ৩৫টি গঙ্গার ঘাটে আবর্জনা, নোংরা ফেলা রোখার বার্তা-সহ (অ্যান্টি-লিটারিং মেসেজ) স্থায়ী বোর্ড লাগানোর জন্য দরপত্র ডেকেছে কলকাতা পুরসভা। ফেব্রুয়ারিতে ডাকা প্রথম বারের দরপত্রে সাড়া না মেলায় সম্প্রতি দ্বিতীয় বার তা ডাকা হয়েছে। পুরসভার জঞ্জাল অপসারণ দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত, প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য দেবব্রত মজুমদার জানাচ্ছেন, গত কয়েক বছর ধরেই ঘাটের দূষণ রোধে বোর্ড, ঘাট পরিষ্কারে সাফাইকর্মী নিয়োগ-সহ সব পদক্ষেপ করা হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘কেন্দ্রের সমীক্ষকেরা নিজেদের মতো এসে দেখে চলে যান। ফলে তাঁদের রিপোর্টে কী আছে, বলতে পারব না।’’

তবে কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট সর্বশেষ রিপোর্টে কলকাতার গঙ্গা-দূষণের ‘হতশ্রী’ দশা ধরা পড়েছে। পরিচ্ছন্নতার নিরিখে এক লক্ষের বেশি জনসংখ্যা বিশিষ্ট গঙ্গাতীর পার্শ্বস্থ শহরগুলির মধ্যে কলকাতা ১৭তম স্থানে! তার আগে এই রাজ্যেরই ন’টি শহর রয়েছে। রিপোর্ট বলছে, কলকাতার অধিকাংশ ঘাটেই আবর্জনা-বিরোধী প্রচার নেই। মন্ত্রকের এক কর্তা জানাচ্ছেন, ঘাট সংলগ্ন আবর্জনাপ্রবণ এলাকা (গারবেজ ভালনারেবল পয়েন্টস বা জিভিপি), নালাবাহিত বর্জ্য গঙ্গায় মেশা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্লান্ট, ঘাট এলাকায় আবর্জনা বিরোধী প্রচার-সহ ছ’টি মাপকাঠির ভিত্তিতে ৯৭টি শহরের র‌্যাঙ্কিং করা হয়েছে। ওই কর্তার কথায়, ‘‘৩০ জন সমীক্ষক পাঁচটি রাজ্যের মোট ৮৬৩টি ঘাট ঘুরে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার আলোকচিত্র-সহ অন্যান্য প্রমাণের ভিত্তিতে এই কাজ করেছেন।’’

মন্ত্রক সূত্রে এ-ও জানা যাচ্ছে, চলতি বছরেও সমীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। অন্য বারের মতো সমীক্ষার ‘নিরপেক্ষতা’ বজায় রাখতে বিশেষজ্ঞ সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

রিপোর্ট জানাচ্ছে, গঙ্গার ঘাট সংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গের ৩৫টি শহর, বসতিতেই উন্মুত্ত আবর্জনা এলাকা (ওপেন ডাম্পসাইট) রয়েছে। ঘাট সংলগ্ন আবর্জনাপ্রবণ অঞ্চল রয়েছে ২৭টি শহরে। আবার রাজ্যের ২৬টি শহরের গঙ্গার স্রোতে আবর্জনা নিয়ত ভাসমান। সব ক্ষেত্রেই দেশের মধ্যে যা সর্বাধিক। তবে রাজ্য প্রশাসনের একাংশ এ-ও মনে করিয়ে দিচ্ছেন, আবর্জনা-বিরোধী প্রচারের নিরিখের শীর্ষেও যে পশ্চিমবঙ্গ, রিপোর্টে সেটাও রয়েছে! বলা হয়েছে, ২৭টি শহরের ঘাটে আবর্জনা ফেলার পাত্র রয়েছে। ২৬টি শহরের ঘাট নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে এক নদী বিশেষজ্ঞের বক্তব্য, ‘‘এ এক অদ্ভুত বৈপরীত্য! নিয়ম মানার কথা বেশি বলা হলেও নিয়ম ভাঙার প্রবণতাই বেশি!’’ আর এক পরিবেশবিজ্ঞানী বলছেন, ‘‘প্রচারের এত বার্তা দেখেও যদি শিক্ষিত নাগরিকদের একাংশ ঘাট এলাকা অপরিষ্কার করেন, সরকার কী করতে পারে?’’

যদিও রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের তরফে কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রকের কাছে পাঠানো সাম্প্রতিক ত্রৈমাসিক রিপোর্ট (মার্চ-মে) জানাচ্ছে, রাজ্যের ৬৪৩টি ঘাট রক্ষণাবেক্ষণে সব পদক্ষেপই করা হয়েছে। সব ঘাটে ‘অ্যান্টি লিটারিং মেসেজ’ রয়েছে। চন্দ্রিমাদেবীর কথায়, ‘‘কেন্দ্রের ওই রিপোর্ট ২০২০ সালের। তার সঙ্গে বর্তমানের পরিস্থিতির তফাত আছে।’’ যার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের বক্তব্য, ‘‘যথাযথ প্রচার থাকলে কি কলকাতা পুরসভা ফের দরপত্র আহ্বান করত? ঘাটের দূষণ না কমাতে পারলে গঙ্গা দূষণও কমবে না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pollution ganga
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE