Advertisement
E-Paper

ছিল পচা পুকুর, ছ’মাসে হল থিম পার্ক

ছিল পুকুর। বছর ৩০ ধরে জঞ্জাল ফেলার কাজে বাসিন্দারা ব্যবহার করতেন সেটি। পুকুরটা বুজতে বুজতে এক সময়ে হয়ে গিয়েছিল পচা ডোবা। তার উত্তর দিকে একটা রাস্তা ছিল বটে, তবে কেউ তা ব্যবহারই করতেন না। এঁদো ডোবার চার দিকের বাড়িগুলি জানালা খুলতে পারেনি গত ২০ বছর।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৭ ০২:৩৬
সজ্জা: সংস্কার করা পুকুরের পাশে পরিমলবাবু। নিজস্ব চিত্র

সজ্জা: সংস্কার করা পুকুরের পাশে পরিমলবাবু। নিজস্ব চিত্র

ছিল পুকুর। বছর ৩০ ধরে জঞ্জাল ফেলার কাজে বাসিন্দারা ব্যবহার করতেন সেটি। পুকুরটা বুজতে বুজতে এক সময়ে হয়ে গিয়েছিল পচা ডোবা। তার উত্তর দিকে একটা রাস্তা ছিল বটে, তবে কেউ তা ব্যবহারই করতেন না। এঁদো ডোবার চার দিকের বাড়িগুলি জানালা খুলতে পারেনি গত ২০ বছর।

এখন পুরোপুরি বদলে গিয়েছে এলাকা। ডোবা থেকে জঞ্জাল উঠেছে ৫০ লরি। মাটি কেটে সেখানে ফিরে এসেছে টলটলে জলের পুকুরটি। খেলে বেড়াচ্ছে হাঁস। পুকুরের ধারে লাগানো হয়েছে ঘাস। সেখানে খেলছে বাচ্চারা। বসানো হয়েছে বেঞ্চ। সকাল-সন্ধ্যা আড্ডায় মাতছেন পাড়ার প্রবীণেরা। পুকুর দেখতে এখন লোক আসছেন এ পাড়া-ও পাড়া থেকে। নাম দেওয়া হয়েছে ‘মাদার অব আর্থ’ পার্ক।

কলকাতা পুরসভার ৯৯ নম্বর ওয়ার্ডের ৪ নম্বর বিদ্যাসাগর কলোনির ওই ‘থিম পার্ক’ গড়ে উঠেছে মাত্র ছ’মাসের চেষ্টায়। শুধু ডোবা নয়, ভোল বদলেছে সংলগ্ন এলাকারও। উত্তর দিকের রাস্তা সংস্কার করে বাঁধানো হয়েছে। লাল, সবুজ, হলুদ রং করা হয়েছে রাস্তায়। দেওয়ালে কোথাও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ডলফিন, কোথাও বা বিশাল আকারের মাছ। কোথাও দেওয়াল জুড়ে ইতিহাস-ভূগোলের নানা তথ্য। রয়েছে পৃথিবীর সব দেশের পতাকা, রয়েছে সার্ক অন্তর্ভূক্ত দেশগুলির নানা তথ্য। ভারতের বিভিন্ন রাজ্য সম্পর্কে নানা তথ্যও রয়েছে দেওয়ালে দেওয়ালে।

শুধু তাই নয়, পুকুর ঘিরে এবং রাস্তার দু’পাশের বাড়িগুলির একই রঙ করা হয়েছে। পয়লা বৈশাখে টুনি লাইট দিয়ে সাজানো হয়েছিল পুকুর পাড়। বাচ্চারা পায়রা উড়িয়ে শপথ নিয়েছে, আর সেখানে জঞ্জাল ফেলতে দেবে না কাউকে। গাছ লাগিয়ে, রোজ রাস্তা পরিষ্কার করে তারা সাফসুতরো রাখবে এলাকা।

এই পরিবর্তনে কিন্তু কলকাতা পুরসভা কিংবা রাজ্য সরকারের কোনও ভূমিকা নেই। কলকাতা ১০ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘পরিমল দে নামে এলাকার এক প্রবীণ নাগরিক নিজের সঞ্চয়ের টাকায় এই অসাধ্য সাধন করেছেন। প্রতিটি ওয়ার্ডে এমন এক জন করে লোক থাকলে পুরসভার যে টুকু খামতি রয়েছে তা-ও মিটে যাবে।’’

নিজের কড়ি খরচ করে এমন বাই উঠল কেন পরিমলবাবুর? অসমের কোকরাঝোড়ের প্রাক্তন বাসিন্দা, অসমের কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের একদা ঘনিষ্ঠ মানুষটি বলেন, ‘‘ধীরে ধীরে পুকুরটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। জঞ্জালের গন্ধে গোটা এলাকার বাতাস ভারী হয়ে উঠেছিল। রোগ ছড়াচ্ছিল। যে কেউ এসে জঞ্জাল ফেলে যাচ্ছিল। বাধা দেওয়ার কেউ ছিল না। ভাবলাম কত দিন আর বাঁচব। একটা দাগ তো রেখে যাই। সারা জীবনে উপার্জন খারাপ করিনি। তার একটা অংশ দিয়ে নিজের বাড়ির আশপাশটা অন্তত বাঁচাই।’’ দেওয়ালে আঁকা ছবিগুলি দেখিয়ে বলছিলেন পরিমলবাবু।

তাঁর স্বপ্ন, ‘‘এলাকার স্কুলের ছেলেমেয়েরা এই পার্কে এসে, পুকুরে এসে প্রকৃতিকে জানবে। দেওয়ালের লেখা পড়ে দেশকে, প্রতিবেশী দেশকে চিনবে। নিজের এলাকাকে সাজানোর ইচ্ছা জাগবে ওদের মধ্যে।’’

পরিমলবাবুর পাড়ার লোকেরাও এককাট্টা হয়ে দাঁড়িয়েছেন তাঁর পিছনে। এক তরুণের কথায়, ‘‘জেঠু যে কাজটা করেছেন, তা আমাদেরই রক্ষা করতে হবে। আমরা পাড়ার ছেলেরাই থিম পার্কটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছি।। আর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ফিরতে দেব না পাড়ায়।’’

Pond Theme Park
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy