ভালবাসা: এমন ভাবেই চলে যত্ন। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়
পথে চাপা পড়ে থাকা কুকুর-বেড়াল দেখলে অন্যদের মতোই মন খারাপ হয়ে যেত তাঁর। তাই হাত গুটিয়ে না বসে থেকে, নেমে পড়েছিলেন ওদের সেবায়। গত ১৫ বছর ধরে সেই কাজটাই নিয়মিত করে চলেছেন দমদম ক্যান্টনমেন্ট এলাকার ওই পুলকার চালক বছর সাতচল্লিশের জিতেন ওরফে জিতু রোজ়ারিয়ো।
নিজের সামান্য আয় থেকেই ১৫টির বেশি পথ-কুকুরকে নিয়মিত খাওয়ান তিনি। শনিবার দুপুরে দমদম ক্যান্টনমেন্ট এলাকার একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের সামনে গিয়ে দেখা গেল, রাস্তার কুকুরদের খাওয়াচ্ছিলেন তিনি। নিজে থাকেন দমদমের নলতা কালীবাড়ি এলাকায়। অকৃতদার জিতু বিশ্বাস করেন, “জীবকে ভালবাসলে ঈশ্বরের সেবা করা যায়। সে কারণেই নিয়মিত ওদের জন্য এই কাজটা করার চেষ্টা করে যাই।’’ এ কাজে পূর্ণ সমর্থন রয়েছে তাঁর মা ভারতী রোজ়ারিয়োর। তিনিই ওদের জন্য বাজার থেকে ছেলের কিনে আনা মেটে-মাংস প্রতিদিন রান্না করে দেন। ভারতী বলছিলেন, “ছেলেকে দেখে আর প্রতিদিন এই কাজ করতে করতেই ওদের প্রতি টান এসে গিয়েছে।”
স্থানীয় ব্যবসায়ী তাপস ঢালির কথায়, “কিছু দিন আগের ঘটনা। নিজেদের মধ্যে লড়াই করে একটি কুকুরের গলায় গভীর ক্ষত হয়ে গিয়েছিল। সেখানে পোকা হয়ে প্রায় মরণাপন্ন অবস্থা হয় কুকুরটির। জিতু একাই ওর সেবায় এগিয়ে যায়। পোকা বার করে ওষুধ লাগিয়ে ওকে সুস্থ করে তোলে।” স্থানীয়দের অনেকেই জানালেন, পনেরো বছরেরও বেশি সময় ধরে এক ভাবে এ কাজ করে চলেছেন ওই যুবক।
অবলা জীবগুলির মতোই ছোটদের প্রতি কড়া নজর আর স্নেহ রয়েছে তাঁর। তাই তার গাড়ির খুদে আরোহীরাও জিতু কাকুকে খুব ভালবাসে। ওঁকে দেখেই পথকুকুরদের জন্য ভালবাসা নিয়ে বেড়ে উঠছে কুঁড়িরা।
ষোলোটি কুকুরকে একসঙ্গে পিটিয়ে মারার সাক্ষী এ শহরের এমন হৃদয় আরও প্রসারিত হোক, এগিয়ে আসুন আরও অনেক জিতু, বলছিলেন কয়েক জন অভিভাবক। আর জিতু? “ওদের জন্য কিছু করে আনন্দ পাই। আমরা ছাড়া আর কে করবে বলুন? অল্প করেও যদি সবাই চেষ্টা করি। ওদের কষ্ট থাকবে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy