Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Pool car owner

লকডাউনেও হাসপাতালে অভুক্তদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন ‘হসপিটাল-ম্যান’, কিন্তু কত দিন...

লকডাউনের আগে পর্যন্ত বিভিন্ন রেস্তরাঁয় বেঁচে যাওয়া খাবার সংগ্রহ করতেন। ওই সব রেস্তরাঁর অনেকে তাঁকে চিনেও গিয়েছিলেন। কিন্তু লকডাউন ঘোষণার পর খাবারে টান। কী করবেন? নিজের জমানো অর্থ এবং কয়েক জনের সাহায্যে এখনও খাবার দিয়ে চলেছেন তিনি।

হাসপাতাল চত্বরে অভুক্তদের খাবার দিচ্ছেন পার্থ চৌধুরী। নিজস্ব চিত্র।

হাসপাতাল চত্বরে অভুক্তদের খাবার দিচ্ছেন পার্থ চৌধুরী। নিজস্ব চিত্র।

সোমনাথ মণ্ডল
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২০ ১৮:২৮
Share: Save:

তীব্র শ্বাসকষ্ট হওয়ায় চার বছরের নাতিকে চিত্তরঞ্জন সেবা সদনে ভর্তি করতে হয়। তার পর থেকে হাসপাতাল চত্বরই ঘরবাড়ি দাদু-দিদার। লকডাউন ঘোষণা হওয়ায় খাবারের দোকান বন্ধ। বাড়ি থেকে যাতায়াতের উপায় নেই। কী ভাবে খাবার জুটবে?

দেড় মাস ধরে মা চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। বাড়ি থেকেই যাতায়াত করতেন নবাব শেখ। লকডাউনের জেরে কাজ বন্ধ। হাসপাতালেই আছেন নবাব। কী খাবেন?

রাত ১০টা। এসএসকেএম, শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে লম্বা লাইন। জেলা থেকে পরিজনদের চিকিৎসার প্রয়োজনে কলকাতায় এসেছেন। দোকান বন্ধ, খাবারের আশায় নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়িয়ে রয়েছেন বহু মানুষ। কিন্তু খাবার?

আরও পড়ুন: কাল মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকের পর, পরশুই লকডাউন বাড়ানোর ঘোষণা মোদীর?

মুশকিলআসানে ‘হসপিটাল-ম্যান’। লকডাউন তো কি? গাড়িতে খাবারের ডালা সাজিয়ে হাসপাতালে হাজির পার্থ চৌধুরী। তিনি এখন ‘হসপিটাল-ম্যান’ হিসাবেই পরিচিত হয়ে উঠেছেন। কখনও দুধ-কলা-পাউরুটি, কখনও আবার ভাত-ডাল-সব্জি তুলে দিচ্ছেন রোগীর আত্মীয়দের হাতে। খাবারের গুণমান নিয়ে প্রশ্ন নেই রোগীর আত্মীয়দের মনে। প্রত্যেকের মুখে একই কথা, ‘হসপিটাল-ম্যান’ না থাকলে অভুক্ত থেকেই মরতে হত!

আরও পড়ুন: এক লাফে ৮৯৬ বেড়ে দেশে করোনা আক্রান্ত ৬৭৬১, মৃত্যু ২০০ ছাড়াল

শুক্রবার দুপুর ১২টা। চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হাসপাতালের ভিতরে লম্বা লাইন। কারও হাতে থালা। কেউ আবার খালি হাতেই দাঁড়িয়ে রয়েছেন। লাইনের শুরুতে একটি প্লাস্টিকের টুল পাতা। গাড়ির ভিতরে রাখা ডেচকিতে রান্না করা ডাল নাড়ছেন পার্থবাবু। অন্য দু’টি পাত্রে রয়েছে ভাত আর আলু চোখা। সঙ্গে আর কেউ নেই। একাই থালায় ভাত তুলছেন। তাতে দিচ্ছেন ডাল-আলুচোখা। তার পর থালা রেখে দিচ্ছেন ওই টুলে। এক এক করে সেখান থেকে খাবার নিয়ে যাচ্ছেন লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা রোগীর আত্মীয়েরা। এর কিছু সময় পর একই দৃশ্য দেখা যাবে এসএসকেএম হাসপাতাল, শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে গেলেও।

পার্থ চৌধুরী গত কয়েক বছর ধরে এ ভাবেই হাসপাতাল চত্বরে সেবা করেন অভুক্তদের মুখে খাবার তুলে দিয়ে। শর্ত একটাই, খাবার পাবেন রোগীর আত্মীয়েরা। তবে অন্য কেউ খাবার চাইলে, বারণ করেন না ‘হসপিটাল-ম্যান’।

কেন শুধুমাত্র রোগীর পরিবারকে খাবার দেন? চিত্তরঞ্জন হাসপাতালে খাবার দিতে দিতে পার্থবাবু বললেন, “শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলাম। তখন উপলব্ধি করি, রোগীর আত্মীয়েরা খাবারের জন্য এ দিক ও দিক ছুটে বেড়ান। তখন কারও মাথা ঠিক থাকে না। সুস্থ হয়ে ওঠার পর সংকল্প করি, রোগীর আত্মীয়দের মুখে খাবার তুলে দেব।”

দেখুন সেই ভিডিয়ো:

পার্থবাবু লকডাউনের আগে পর্যন্ত বিভিন্ন রেস্তরাঁয় বেঁচে যাওয়া খাবার সংগ্রহ করতেন। ওই সব রেস্তরাঁর অনেকে তাঁকে চিনেও গিয়েছিলেন। কিন্তু লকডাউন ঘোষণার পর খাবারে টান। কী করবেন? কয়েক বছর ধরে রোগীর পরিবারের মুখে খাওয়া তুলে দেওয়ার সংকল্প কি বন্ধ হয়ে যাবে? না, এখনও পর্যন্ত তা হয়নি। নিজের জমানো অর্থ এবং কয়েক জনের সাহায্যে এখনও খাবার দিয়ে চলেছেন তিনি।

তবে আগে ১৫০-২০০ জনকে খাবার দিতে পারতেন। এখন সংখ্যাটা দিন দিন কমছে। পেশায় পুলকার চালক পার্থবাবুর প্রশ্ন, ‘‘এ ভাবে কত দিন চালাতে পারব? লকডাউনের সময়সীমা যদি বেড়ে যায়, তা হলে কী হবে?’’

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hospital Food Patient
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE