Advertisement
E-Paper

গোটা উড়ালপুলই ভাঙার দাবি এলাকাবাসীর

রাজ্য সরকারের তরফে ইতিমধ্যেই ওই উড়ালপুলের বিপজ্জনক অংশ ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সোমবার লালবাজারের তরফে জানানো হয়েছিল, বুধবার কেএমডিএ এবং কলকাতা পুলিশের একটি যৌথ প্রতিনিধিদল ভেঙে পড়া বিবেকানন্দ উড়ালপুল পরিদর্শনে যাবে।

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৯ ০২:০৭
শঙ্কা: পোস্তা উড়ালপুলের উপরে বিপজ্জনক ভাবে রেখে দেওয়া হয়েছে লোহার রড। বুধবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী

শঙ্কা: পোস্তা উড়ালপুলের উপরে বিপজ্জনক ভাবে রেখে দেওয়া হয়েছে লোহার রড। বুধবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী

২০১৬ সালের ৩১ মার্চ দুপুরে উড়ালপুল ভেঙে পড়ার দগদগে স্মৃতি এখনও তাঁকে তাড়িয়ে বেড়ায়। ভয়ে, আতঙ্কে ভেঙে পড়া বিবেকানন্দ উড়ালপুলের নীচ দিয়ে এখনও হাঁটাচলা করতে পারেন না পেশায় ওষুধ ব্যবসায়ী শম্ভুনাথ রায়। গণেশ টকিজের মোড়েই ওষুধের দোকান তাঁর। চোখের সামনে আস্ত উড়ালপুলের একাংশ ভেঙে পড়তে দেখেছিলেন। তার পরে তিন বছর কেটে গিয়েছে। দিনে দিনে বেরিয়ে এসেছে বিবেকানন্দ উড়ালপুলের কঙ্কালসার ছবিটা। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, অবিলম্বে গোটা উড়ালপুলটাই ভেঙে ফেলতে হবে।

রাজ্য সরকারের তরফে ইতিমধ্যেই ওই উড়ালপুলের বিপজ্জনক অংশ ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সোমবার লালবাজারের তরফে জানানো হয়েছিল, বুধবার কেএমডিএ এবং কলকাতা পুলিশের একটি যৌথ প্রতিনিধিদল ভেঙে পড়া বিবেকানন্দ উড়ালপুল পরিদর্শনে যাবে। তার পরে জানানো হবে, কবে থেকে ভাঙার কাজ শুরু হবে। কিন্তু এ দিন বিকেলে কেএমডিএ-র জনা চারেক ইঞ্জিনিয়ার উড়ালপুলের পোস্তার দিকের অংশ পরিদর্শন করেন। পরে পোস্তা থানায় কেএমডিএ-র ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে কলকাতা পুলিশের একটি বৈঠক হয়। তবে ওই উড়ালপুলের বিপজ্জনক অংশ ভাঙার কাজ কবে শুরু হবে, সে বিষয়ে এ দিনের বৈঠকে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। বৈঠকে উপস্থিত পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘উড়ালপুল কবে থেকে ভাঙা হবে, সে বিষয়ে কেএমডিএ-র তরফে পুলিশকে স্পষ্ট কিছু জানানো হয়নি।’’

এ দিন পোস্তা থেকে গিরিশ পার্ক পর্যন্ত বিবেকানন্দ উড়ালপুলের পাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে একাধিক বার হোঁচট খেতে হল। কোথাও নেড়া উড়ালপুলের উপরে বিপজ্জনক ভাবে রাখা হয়েছে বড় বড় লোহার রড। যে কোনও সময়ে ওই রডগুলি নীচে পড়ে গেলে বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কোথাও আবার দেখা গেল, ভাঙা উড়ালপুলের একাধিক অংশ বিপজ্জনক ভাবে ঝুলছে।

বিবেকানন্দ উড়ালপুলের ভেঙে পড়ার ঘটনায় মোট ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ৮০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হন। ওই ঘটনার পরে গোটা উড়ালপুলটাই ভেঙে ফেলার দাবি জানিয়ে হাইকোর্টে মামলা করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ‘উড়ালপুল হটাও অভিযান সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক বাপি দাসের অভিযোগ, ‘‘উড়ালপুল ভেঙে পড়ার পরে তিন বছর কেটে গেলেও কোনও কাজ হয়নি। বিবেকানন্দ রোডে উড়ালপুলটি আমাদের বাড়ির গা ঘেঁষে বিপজ্জনক ভাবে গিয়েছে। এখন মাঝেমধ্যেই ওই উড়ালপুল থেকে চাঙড় ভেঙে পড়ে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, পোস্তা থেকে গিরিশ পার্ক পর্যন্ত বিস্তৃত ওই উড়ালপুলের বিভিন্ন অংশ মাঝেমধ্যেই নীচে খসে পড়ে। কেএমডিএ-র এক আধিকারিক বলেন, ‘‘গত তিন বছর ধরে উড়ালপুলটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকায় বৃষ্টির জল জমে বেশ কিছু অংশ বিপজ্জনক হয়ে রয়েছে। অবিলম্বে সেই অংশগুলি ভেঙে ফেলতে হবে।’’

উড়ালপুল ভেঙে পড়ার পরে দফায় দফায় একাধিক সংস্থাকে দিয়ে সমীক্ষা করানো হয়। বছরখানেক আগে খড়্গপুর আইআইটি এবং রাইটস-এর তরফে জানানো হয়েছিল, দু’কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ ওই উড়ালপুলের নকশা-সহ একাধিক ক্ষেত্রে ত্রুটি রয়েছে। উড়ালপুলটি ভেঙে পড়ার তিন বছর পরে এখনও আতঙ্কে স্থানীয় বাসিন্দারা। গণেশ টকিজের কাছেই দু’টি স্কুল রয়েছে। সেখানকার পড়ুয়াদের ভাঙা উড়ালপুলের নীচ দিয়েই হেঁটে স্কুলে যেতে হয়। শশী কপূর নামে এক ছাত্রের কথায়, ‘‘উড়ালপুলের নীচ দিয়ে হেঁটে যেতে আমাদের বেশ ভয় করে। আমরা চাই, পুরো উড়ালপুল ভেঙে ফেলা হোক।’’

কেএমডিএ সূত্রের খবর, চলতি মাসের শেষে অথবা অগস্টের শুরুতে উড়ালপুল ভাঙার কাজ শুরু হতে পারে। উড়ালপুল ভাঙার আগে স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়িতে নোটিস পাঠানো হবে। ভাঙার কাজ শুরু হলে উত্তর কলকাতার কালীকৃষ্ণ ঠাকুর স্ট্রিট, বিবেকানন্দ রোড এবং রবীন্দ্র সরণির একাংশে যান চলাচল বন্ধ থাকবে। তাই ওই সমস্ত এলাকায় তীব্র যানজটের আশঙ্কা থাকছে। সেই সঙ্গে মহাত্মা গাঁধী রোড, রবীন্দ্র সরণি, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়েও যানজট হবে। লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘উড়ালপুল ভাঙার কাজ

শুরু হলে বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করা হবে। যানজট ঠেকাতে রাস্তায় পর্যাপ্ত পুলিশ থাকবে।’’

Vivekananda Flyover Posta Accident
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy