Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

জামিন নিয়ে প্রতাপের হাসি, দেখল পুলিশ

পুলিশকে জানিয়েই সে আলিপুর কোর্টে গিয়ে আগাম জামিনের আবেদন করেছিল। তা মঞ্জুরও হয়েছিল। সেই জামিন পাকা করার জন্য এ বার বুক ফুলিয়ে পুলিশের সামনে দিয়েই আদালতে গিয়ে আত্মসমর্পণ করল গোপালনগর-কাণ্ডের ‘নায়ক’ প্রতাপ সাহা। পুলিশকে নিগ্রহ ও বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের সভায় হামলা চালানোর ঘটনায় যে কিনা মূল অভিযুক্ত!

শিবাজী দে সরকার
শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৫ ০৩:৫৮
Share: Save:

পুলিশকে জানিয়েই সে আলিপুর কোর্টে গিয়ে আগাম জামিনের আবেদন করেছিল। তা মঞ্জুরও হয়েছিল।

সেই জামিন পাকা করার জন্য এ বার বুক ফুলিয়ে পুলিশের সামনে দিয়েই আদালতে গিয়ে আত্মসমর্পণ করল গোপালনগর-কাণ্ডের ‘নায়ক’ প্রতাপ সাহা। পুলিশকে নিগ্রহ ও বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের সভায় হামলা চালানোর ঘটনায় যে কিনা মূল অভিযুক্ত! এবং যে পুলিশকর্মীদের নিগ্রহ করার অভিযোগে গ্রেফতার এড়াতে ওই তৃণমূল নেতাকে আগাম জামিন নিতে হয়েছিল, বৃহস্পতিবার জামিন নিশ্চিত করে তাঁদেরই অনেকের সামনে দিয়ে সাঙ্গপাঙ্গ সমেত হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেল সে!

পুলিশকে হেনস্থা, সরকারি কাজে বাধাদান ও রূপার মতো নেত্রীর সভায় হামলা চালিয়ে স‌ংবাদের শিরোনামে আসা প্রতাপ এ ভাবে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাওয়ায় পুলিশের নিচুতলায় সংশয় তৈরি হয়েছে। সাধারণ অনেক পুলিশকর্মীর আশঙ্কা, ১৮ এপ্রিল কলকাতা পুরসভার ভোটের দিনে গিরিশ পার্কে পুলিশকে গুলি করার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত যে গোপাল তিওয়ারি, প্রতাপের পথ ধরে সে-ও একই ভাবে আগাম জামিন পেয়ে যেতে পারে। গোপাল আপাতত ফেরার।

এমন আশঙ্কার কারণ কী?

পুলিশের নিচুতলার ওই অংশের দাবি: প্রতাপের মতো গোপালও তৃণমূলের বেশ কিছু নেতা-মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ। সেই সুবাদে পুলিশকে গুলি চালিয়েও শেষ পর্যন্ত তার পার পেয়ে যাওয়ার ঘোরতর সম্ভাবনা।

লালবাজারের কর্তারা এই তত্ত্বকে উড়িয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু অন্য কিছু ঘটনার মধ্যেও ‘অন্য রকম’ গন্ধ পাচ্ছেন নিচুতলার পুলিশকর্মীরা। তাঁরা বলছেন, পুরভোটের আগে হাঙ্গামায় অভিযুক্ত কাশীপুরের দুই তৃণমূল নেতা স্বপন চক্রবর্তী ও আনোয়ার খান এলাকায় বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে স্রেফ রাজনৈতিক প্রতিপত্তির জোরে। ‘‘বস্তুত ভোটের ফল প্রকাশের দিন কাশীপুর থানার ওসি যে ভাবে ১ নম্বর ওয়ার্ডের জয়ী তৃণমূল প্রার্থী সীতা জয়সোয়ারাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন, তাতেই আমরা বুঝে গিয়েছি যে, শাসকদলের সঙ্গে কর্তাদের মাখামাখির বহর কতটা!’’— কটাক্ষ করছেন পুলিশেরই এক জন। ওঁদের মতো একাধিক পুলিশকর্মীর বক্তব্য, ‘‘গোপাল না হয় গা ঢাকা দিয়েছে। প্রতাপ যে করেই হোক, আগাম জামিন নিয়েছে। কিন্তু কাশীপুরের স্বপন বা আনোয়ার তো পালাওয়নি, আগাম জামিনও নেয়নি!’’

তা হলে ওরা নিশ্চিন্তে নিজের এলাকায় কী ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে, নিচুতলার পুলিশমহলে সেই প্রশ্ন প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। কর্তৃপক্ষের কী বক্তব্য?

থানার পুলিশ বলছে, লালবাজারের নির্দেশ না-আসায় অভিযুক্ত তৃণমূল নেতাদের ছোঁয়া যাচ্ছে না। পুলিশের নিচুতলার খবর, আলিপুরের প্রতাপ ও কাশীপুরের আনোয়ার-স্বপনকে ভোটের আগেই ধরতে চেয়েছিল স্থানীয় থানা। তাতে এলাকায় গোলমাল বাঁধতে পারে— এই যুক্তি দেখিয়ে সে যাত্রা গ্রেফতারের পরিকল্পনা বাতিল করা হয় বলে আক্ষেপ করেছেন কাশীপুর থানার এক অফিসার। তাঁর দাবি, ‘‘স্বপন ও আনোয়ারের মধ্যে এমনিতে বেদম টক্কর থাকলেও ভোটের ঠিক মুখে গ্রেফতার এড়াতে ওরা হাত মিলিয়ে নেয়। তার পরে দু’পক্ষই তৃণমূলের ‘সরকারি’ প্রার্থীর হয়ে ভোট করতে ময়দানে নামে।’’

অন্য দিকে লালবাজারের কর্তাদের যুক্তি: পুলিশের রুল-বুক অনুযায়ী যা যা করা উচিত, থানাকে তা-ই করতে বলা হয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন, কাশীপুরের ঘটনায় ইতিমধ্যে বেশ কয়েক জন ধরা পড়েছে। মঙ্গলবার যেমন গ্রেফতার হয়েছে স্বপনের ‘ডান হাত’ হাফিজুল। আবার গিরিশ পার্ক-কাণ্ডে গোপালের এক শাগরেদ-সহ দশ জন গ্রেফতার হয়েছে। গোপালের বাড়িতে তল্লাশিতে মিলেছে আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরকের সম্ভার।

কিন্তু আলিপুর-কাণ্ডে কেউ ধরা পড়ল না কেন? স্বপন-আনোয়ারই বা কেন বাইরে? তাদের তো তৃণমূলের বিজয় মিছিলেও দেখা গিয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে!

লালবাজারের তরফে এর বিশেষ স্পষ্ট ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। উল্টে আলিপুর জেলা ও দায়রা আদালতের নির্দেশ মতো এ দিন নিম্ন আদালতে আত্মসর্মপণ করে আগাম পাওয়া জামিন পাকা করে ফেলেছে প্রতাপ সাহা। ‘‘জেলা ও দায়রা আদালতের আগের দিনের নির্দেশ মতো এ দিন আমার মক্কেল আলিপুরের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট সঞ্জীব দারুকার এজলাসে আত্মসর্মপণ করে জামিন পেয়েছেন।’’— বলেন প্রতাপের কৌঁসুলি অরিন্দম দাস।

নিচুতলার পুলিশের কারও কারও অভিযোগ, সপ্তাহ দুয়েক আগে দায়রা আদালতে যখন প্রতাপের আগাম জামিনের আর্জির মামলাটি ওঠে, তখন সরকারপক্ষের কৌঁসুলি কোনও রকম বিরোধিতা করেননি। তদন্তকারী পুলিশও দাঁড়িয়ে ছিল নীরব দর্শক হয়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE