Advertisement
E-Paper

ডায়ালিসিসই হল না, মারা গেলেন প্রসূতি

প্রসবের পরে ডাক্তারেরা বাড়ির লোককে জানিয়েছিলেন, ছেলে হয়েছে। মা ও ছেলে সুস্থ আছে। কিন্তু মাত্র আধ ঘণ্টার মধ্যেই পুরো পরিস্থিতি বদলে যায়। বাড়ির লোকেদের ফের ডেকে পাঠিয়ে ডাক্তারেরা জানান, মায়ের অবস্থা খুব খারাপ।

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৭ ০১:৪৪
তনিমা মাঝি

তনিমা মাঝি

প্রসবের পরে ডাক্তারেরা বাড়ির লোককে জানিয়েছিলেন, ছেলে হয়েছে। মা ও ছেলে সুস্থ আছে। কিন্তু মাত্র আধ ঘণ্টার মধ্যেই পুরো পরিস্থিতি বদলে যায়। বাড়ির লোকেদের ফের ডেকে পাঠিয়ে ডাক্তারেরা জানান, মায়ের অবস্থা খুব খারাপ। দুটো কিডনিই কাজ করছে না। অবিলম্বে ডায়ালিসিসের জন্য অন্যত্র নিতে হবে। ডায়ালিসিস করা অবশ্য শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠেনি। এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতাল ঘুরতে ঘুরতে অ্যাম্বুল্যান্সেই মারা যান বরাহনগরের তনিমা মাঝি।

স্বাস্থ্য ভবন এবং স্থানীয় থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন তনিমার পরিবারের লোকেরা। তাঁদের বক্তব্য, চিকিৎসায় গাফিলতি এবং হাসপাতালের দায়িত্ববোধের অভাবেই মাত্র ২৬ বছরের ওই তরুণীর জীবনটা শেষ হয়ে গেল।

এই ঘটনায় অভিযোগের কাঠগড়ায় দু’টি হাসপাতাল— বরাহনগর পুর মাতৃসদন এবং আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ। প্রথমটিতে সিজারিয়ান প্রসবের পরে তনিমার অবস্থার আচমকাই অবনতি হয়। রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা এক ধাক্কায় তলানিতে গিয়ে ঠেকে। বিকল হয়ে যায় কিডনিও। সেখান থেকে ডায়ালিসিসের জন্য তাঁকে রেফার করা হয় আর জি করে। অভিযোগ, দুপুর দেড়টা নাগাদ তনিমাকে নিয়ে সেখানে পৌঁছন বাড়ির লোকেরা। কিন্তু কর্তব্যরত ডাক্তারেরা জানান, ১টা বেজে গিয়েছে। আর ডায়ালিসিস হবে না। অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়া হোক। তনিমার পরিবারের লোকেরা আলিপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে পৌঁছনোর পথেই সব শেষ হয়ে যায়।

খাস কলকাতা শহরে, প্রসব হতে গিয়ে কোনও মহিলার মৃত্যুকে যথেষ্ট লজ্জাজনক বলেই মনে করছেন স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশ। প্রশ্ন উঠেছে, ঠিক কী ঘটেছিল যার জেরে বরাহনগর পুর মাতৃসদনে প্রসবের পরে ওই অবস্থা হয়েছিল তনিমার? বরাহনগর পুরসভার চেয়ারপার্সন অপর্ণা মৌলিক বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে বিশদে কিছু বলা সম্ভব নয়। কোনও একটা সমস্যা হয়েছিল। আমরা সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে এখানে আর কাজ করতে দিচ্ছি না। ওঁকে আসতে বারণ করা হয়েছে।’’

আরও পড়ুন: জেলের মধ্যে নিগ্রহ কি ইন্দ্রাণীকেও

তদন্তে গাফিলতি প্রমাণিত হয়েছে বলেই কি এই ব্যবস্থা? অপর্ণাদেবী মন্তব্য করতে চাননি। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক সুস্মিতা চৌধুরীকে প্রশ্ন করা হলে তাঁর জবাব, ‘‘সিজারিয়ানে সমস্যা হয়নি। সব মাপকাঠি ঠিকঠাক ছিল। আচমকাই অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। অ্যানাস্থেশিয়ার ডোজে গোলমাল ছিল, নাকি কোনও ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার জেরে এমন হয়েছে, সেটা বুঝতে পারছি না। সম্ভবত শক-এ চলে গিয়েছিলেন তনিমা।’’ হাসপাতাল সূত্রে অবশ্য অ্যানাস্থেশিয়ার ডোজে হেরফেরের কথা স্বীকার করা হয়নি। এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘সিজারিয়ানের পরে সেলাইয়ের সময়ে হয়তো কিছু সমস্যা হয়েছিল।’’ সুস্মিতাদেবী অবশ্য সে কথা মানতে চাননি।

তনিমার পিসি শিবানী দেবনাথ জানান, বরাহনগর পুর মাতৃসদনে তনিমার প্রসব হয়েছিল ২২ জুন সকাল সওয়া ১০টা নাগাদ। পৌনে ১১টা নাগাদ জানানো হয়, অবস্থা খুব খারাপ। আরও কিছুক্ষণ চিকিৎসা চালানোর পরে তাঁদের রেফার করা হয় আর জি করে। শিবানীর অভিযোগ, ‘‘সাড়ে ১২টা নাগাদ আমরা হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আর জি করে পৌঁছই সওয়া ১টা নাগাদ। সেখানে ডাক্তারেরা প্রাথমিক পরীক্ষা করে জানান, রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা এবং নাড়ির গতি দুই-ই খুব কম। কিডনি বিকল হওয়ায় ডায়ালিসিস দরকার। কিন্তু ১টা বেজে গিয়েছে বলে আর ডায়ালিসিস হবে না বলে ওঁরা জানিয়ে দেন। ওই অবস্থায় আমরা ফের তনিমাকে অ্যাম্বুল্যান্সে তুলি। কিন্তু ডায়ালিসিসের সুযোগ আর হয়নি। অন্য হাসপাতালে যাওয়ার আগেই সব শেষ হয়ে যায়। আর জি করে ডায়ালিসিস হলে হয়তো এই পরিণতি আটকানো
যেতে পারত।’’

কেন দুপুর ১টার পরে ডায়ালিসিস হয়নি আর জি করে? এই প্রশ্নে স্তম্ভিত স্বাস্থ্য ভবনের কর্তারা। এক শীর্ষকর্তা জানান, বিকেল ৪টে পর্যন্ত ডায়ালিসিস হয়। এমন এক জন মুমূর্ষু মানুষকে ফিরিয়ে দেওয়ার কোনও কারণই ছিল না। কেন ফেরানো হল, তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন আর জি কর কর্তৃপক্ষ।

তনিমার পরিজনেদের দাবি, শুধু খতিয়ে দেখা নয়, দোষ প্রমাণিত হলে দু’টি হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট ডাক্তারদের শাস্তি হোক। শিবানী জানান, জন্মেই মা-কে হারানো শিশুটির বয়স এখন সাত দিন। যাদের জন্য শিশুটি মা-কে পেল না, তাদের চিহ্নিত করার দায়িত্ব নিক স্বাস্থ্য দফতর।

হাসপাতালে ভর্তির আগে তনিমা জানিয়েছিলেন, ছেলে হলে নাম রাখবেন সোনু। আপাতত সোনু-র মায়ের মৃত্যুর বিচারই তাঁদের একমাত্র কাম্য বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যেরা।

Tanima Majhi Pregnant Death ডায়ালিসিস Dialysis বরাহনগর R G Kar Medical College
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy