মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।-ফাইল চিত্র।
স্বাস্থ্যের মতো রাজ্যে এ বার বেসরকারি স্কুল শিক্ষায় ফি, ডোনেশন নিয়ন্ত্রণেও সেল্ফ রেগুলেটরি কমিটি গড়ে তোলা হল।
বুধবার কলকাতার টাউন হলে বেসরকারি স্কুল কর্তৃপক্ষদের নিয়ে এক বৈঠকে স্কুলে স্কুলে যথেচ্ছ ফি, ডোনেশন নিয়ন্ত্রণ করতে ওই কমিটি গড়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কমিটিতে সরকারি প্রতিনিধি ছাড়াও রাখা হয়েছে কলকাতার ৯টি নামী স্কুলকে। থাকছেন কলকাতার দুই আর্চবিশপও। দার্জিলিংয়ের এক প্রতিনিধিকেও ওই কমিটিতে রাখা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, শিক্ষা সচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি, কলকাতা পুলিশের কমিশনার ও প্রত্যেকটি জেলার ডিপিও’কে নিয়ে ওই কমিটিকে বছরে অন্তত ৪ বার মিটিং করতে হবে। আর সেই মিটিংয়ে কী কী আলোচনা হল, কী কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, তা যাতে জনগণ জানতে পারেন, সে জন্য সে সবই ওয়েবসাইটে জানিয়ে দিতে হবে। কোনও গোপনীয়তা রাখা চলবে না।
বেশির ভাগ বেসরকারি স্কুলে যে যথেচ্ছ ভাবে ফি, ডোনেশন নেওয়া হচ্ছে, তার জন্য ওই বৈঠকেই কয়েকটি স্কুল কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘আমার কাছে খবর আছে, সবচেয়ে বেশি ফি, ডোনেশন নেয় কলকাতার লা মার্টিনিয়ার স্কুল। এও জানি, অনেক স্কুলে শৌচালয় না থাকলেও নানা ছুতোয় তারা বেশি বেশি করে ফি নিচ্ছে। যে কোনও ছুতোয় ডোনেশন নিচ্ছে। এটা চলবে না।’’
টাউন হলের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন,
• স্কুলের ফি’জ ঠিক করতে আজই সেল্ফ রেগুলেটরি কমিটি তৈরি করে ফেললাম।
• সেই রেগুলেটরি কমিটিতে সরকারি প্রতিনিধি হিসাবে থাকছেন শিক্ষা সচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি, কলকাতা পুলিশের কমিশনার।
• আর স্কুলগুলির প্রতিনিধি হিসাবে থাকবেন লা মার্টিনিয়ার, মডার্ন হাই, সেন্ট জেভিয়ার্স, হেরিটেজ, ডিপিএস, শ্রীশিক্ষায়তন, লরেটো, সেন্ট লরেন্স, সাউথ পয়েন্ট স্কুলগুলির প্রতিনিধিরা। থাকবেন দু’জন আর্চবিশপও।
• ওই কমিটিতে থাকবেন দার্জিলিং থেকে এক জন প্রতিনিধিও। প্রতি জেলা থেকে এক জন ডিপিও।
• বছরে ওই কমিটিকে অন্তত ৪ বার মিটিং করতে হবে।
• সেই সব মিটিঙের আলোচ্য বিষয় ওয়েবসাইটে জানাতে হবে।
• অথচ, সামার ক্যাম্পের নাম করে অনেক স্কুল টাকা নেয়।
• এখনও অনেক স্কুলে্ ভাল শৌচালয় নেই।
• শুনেছি, বেশি ডোনেশন দিলে ভাল পড়ানো হয় স্কুলে। এটা কি ঠিক?
• চড়া ডোনেশন বন্ধ করতেই হবে।
• সবচেয়ে বেশি ডোনেশন নেয় লা মার্টিনিয়র স্কুল।
• যে রাজ্যে থাকি, সেই রাজ্যের ভাষা জানাটা খুব জরুরি।
• বাংলায় থাকব আর বাংলা ভাষা জানব না, বাংলায় পড়ব না, তা হবে না।
• বাংলায় থাকতে হলে বাংলায় পড়াশোনা করতে হবে।
আরও পড়ুন- ‘কে কত বড় নেতা, কত বড় মস্তান, নামটা শুনি!’
• আগামী বছর থেকেই আমি এটা চালু করব।
• দশম শ্রেণিতে বাংলা ভাষা বাধ্যতামূলক।
• স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে একটা অসাধু চক্র কাজ করছে।
• খাতা, বইপত্র, পেন, পেন্সিল, এই সব স্টেশনারি কেন স্কুল থেকেই কিনতে হবে? কেন সে সব কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের?
• শুনছি ডোনেশনের নামে যথেচ্ছাচার চলছে।
• নানা ভাবে ছাত্রছাত্রীদের বাবা, মা, অভিভাবকদের কাছ থেকে ডোনেশন নেওয়া হচ্ছে স্কুলে স্কুলে, এমন অনেক অভিযোগ আমি পাচ্ছি। কাউকে আলাদা ভাবে অভিযুক্ত করছি না। কিন্তু সেটা যাতে আর না হয়, চার ওপর সবাইকে নজর রাখতে বলব।
• সাধারণ পরিবারের ছেলেমেয়েদের কি স্কুলে লক্ষাধিক টাকা দিয়ে পড়াশোনা চালানো সম্ভব?
• ফি’জ আর সেশন ফি’জ কেন আলাদা ভাবে রাখা হয় স্কুলে
টাউন হলের বৈঠকে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তড়িঘড়ি ওই কমিটি গড়ে দিয়ে ‘চমক’ দিতে চেয়েছেন বলে মনে করছে সিপিএম। দলের নেতা মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ‘‘সমস্যা হলেই মুখ্যমন্ত্রী চমক দেন। যাঁদের বিরুদ্ধে বেশি ফি নেওয়ার অভিযোগ, অভিভাবকদের নিয়মিত বিক্ষোভ যাঁদের বিরুদ্ধে, সেই স্কুলগুলিকে নিয়েই ফি, ডোনেশন নিয়ন্ত্রণে সেল্ফ রেগুলেটরি কমিটি উনি (মুখ্যমন্ত্রী) গড়লেন কী ভাবে? এটা শিক্ষা অধিকার আইনের বিরোধী। সরকারি স্কুলগুলিতেও যে উন্নয়ন ফি’র নামে বেশি টাকা নেওয়া হচ্ছে, তার কী হবে?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy