দাতা: চুল দেওয়ার আগে-পরে প্রিয়াঙ্কা।
কলকাতার একটি বিজ্ঞাপন সংস্থায় সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করতাম। বছর তিনেক আগে স্বামী কর্মসূত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসে। চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে আমিও ওর সঙ্গে চলে এলাম। টেক্সাসে আবার নতুন করে সংসার গোছানোর পালা শুরু হল।
এই সময়ে এক দিন ডাক্তারখানায় গিয়েছি, দেখি উল্টো দিকে একটি বছর চারেকের শিশু মায়ের সঙ্গে বসে আছে। ওর মাথায় একটিও চুল নেই। অন্য বাচ্চাদের দেখেছি, মায়েরা এক জায়গায় বসিয়ে রাখতে হিমসিম খান। কিন্তু এ খুবই শান্ত হয়ে বসে আছে। শিশুটির মায়ের সঙ্গে আর এক জন অপেক্ষারত রোগীর বাক্যালাপে বুঝলাম, জন্ম থেকেই ও হাড়ের ক্যানসারে আক্রান্ত। কেমোথেরাপি নিয়ে নিয়ে মাথার সব চুল বছর দুয়েক আগেই উঠে গিয়েছে। এমনিতেই অসুস্থ থাকে, তার উপরে বাকি বাচ্চাদের থেকে দেখতে অন্য রকম বলে নিজেকে একটু গুটিয়েও রাখে। খুব খারাপ লেগেছিল শিশুটিকে ও ভাবে দেখে। ক’দিন পরে আমার নতুন শহরের এক বান্ধবী কথায় কথায় জানাল, এখানে ‘লক্স অব লাভ’ নামে একটি সংস্থা আছে যারা এমন শিশুদের জন্য উইগ বানায়। পরদিনই ইন্টারনেট থেকে ওদের ফোন নম্বর পেলাম। ফোন করে আমার ডাক্তারখানার অভিজ্ঞতার কথা বললাম ওদের। সঙ্গে জানালাম, আমিও তাদের সংস্থায় চুল দিতে চাই, যাতে ওই শিশুটির মতো কয়েক জনের সাহায্য হয়। ওই সংস্থার প্রতিনিধিরা আমার কথা শুনে খুব খুশি হলেন। এক জন বললেন, “ম্যাডাম, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সহ সারা বিশ্বে এমন লক্ষ লক্ষ শিশু আছে যারা ক্যানসার বা কোনও কঠিন ব্যাধির কারণে সব চুল পড়ে যাওয়ায় খুব হতাশায় ভোগে। আমরা প্রতিটি শিশুর মুখের সঙ্গে মানানসই উইগ তৈরি করি। আপনাদের দেওয়া চুলের উইগ যখন হাতে পায়, তখন ওদের খুশি দেখার মতো হয়! ওরা যেন নতুন করে নিজেদের ফিরে পায়!” আমার নিজের এক বান্ধবীকে ক্যানসারে হারিয়েছিলাম। ওর কেমো নেওয়া চেহারাটা বারবার মনে পড়ছিল সেই সব কথা শুনে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
এর মাস ছয়েক পরে মাথা নেড়া করলাম। ওই সংস্থার নিয়মমতো, চুলে রং করিনি সেই ছ’মাস। বিনুনি বাঁধা অবস্থায় (কমপক্ষে ১০ ইঞ্চি হতে হবে) গোড়া থেকে কেটে প্লাস্টিকের প্যাকেটে বন্ধ করে চুল দান করলাম শিশুদের উইগ বানানোর জন্য। নেড়া না হয়েও ১৬ ইঞ্চি বিনুনি এমনিই দিতে পারতাম। কিন্তু মন বলল, আমার মাথা নেড়া ছবিটার কিছু মূল্য আছে। আমার ছবি এই শিশুদের বার্তা দিক, ‘পাশে আছি’। এর পরে ওই সংস্থা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে একটি চিঠি পাঠিয়েছিল।
বাড়ি ছেড়ে অচেনা দেশে এসে থাকতে বেশ মন খারাপ লাগত। কলকাতায় কয়েক জনকে বইখাতা কিনে দিতাম আমি। এখানে চলে আসার পরে ওদের কথাও খুব মনে হতো। এই সংস্থার চিঠিটা যেন সেই মন খারাপ থেকে কিছুটা মুক্তি দিয়েছিল। আমার এই ছোট্ট উদ্যোগের মাধ্যমে যে একটি অচেনা শিশু নিজের আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে পারে, তা ভেবেই যে কতটা শান্তি আর স্বস্তি পেলাম!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy