Advertisement
E-Paper

দফায় দফায় জেরাতেও জবাব এড়াচ্ছে প্রিয়াঙ্কা

খুন হওয়ার আগে জুনিয়রের শেষ কয়েক ঘণ্টার কার্যকলাপের হদিস পাওয়াই আপাতত সিবিআইয়ের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সুপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২১ ০৩:৫৮
জুনিয়র মৃধা

জুনিয়র মৃধা

বেলঘরিয়ার সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার জুনিয়র মৃধাকে খুনে ধৃত প্রিয়াঙ্কার এক নিকটাত্মীয়ের প্রাক্তন স্ত্রীর কাছ থেকে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছে সিবিআই। সেগুলি যাচাই করে দেখছেন তদন্তকারীরা। সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, মামুলি কিছু তথ্য জানানো ছাড়া প্রিয়াঙ্কা অন্য কোনও বিষয় নিয়ে এখনও মুখ খোলেনি। বরং, শ্বশুরবাড়ি সংক্রান্ত অধিকাংশ প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়েছে।

খুন হওয়ার আগে জুনিয়রের শেষ কয়েক ঘণ্টার কার্যকলাপের হদিস পাওয়াই আপাতত সিবিআইয়ের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারই খোঁজে রয়েছেন তদন্তকারীরা। তাঁদের ধারণা, কিছু প্রশ্নের উত্তর মিললেই এই জটিল রহস্যের জট ছাড়ানো যাবে।

যে সব প্রশ্ন সিবিআইয়ের নজরে রয়েছে তা হল, জুনিয়রকে শেষ কার সঙ্গে দেখা গিয়েছিল? ফোনে তিনি শেষ কার সঙ্গে কথা বলেছিলেন, কী কথা বলেছিলেন, কখন বলেছিলেন? তার কত ক্ষণ পরে তিনি গুলিবিদ্ধ হন? গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরে তাঁর ফোন থেকে কাকে ফোন করা হয়েছিল, কী কথা হয়েছিল? এই প্রশ্নগুলির জবাব মিললেই জুনিয়র খুনের রহস্যভেদ করা অনেক সহজ হবে বলে অনুমান তদন্তকারীদের।

তদন্তের শুরু থেকেই প্রিয়াঙ্কার শ্বশুরবাড়ি নজরে রয়েছে সিবিআইয়ের। কিন্তু হাইকোর্টের নির্দেশ, জোরালো প্রমাণ ছাড়া এই মামলার অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা চলবে না। ফলে অনেক সতর্ক ভাবে পদক্ষেপ করতে হচ্ছে তদন্তকারীদের। সিআইডি যখন এই মামলার তদন্ত চালাচ্ছিল, তখনই প্রিয়াঙ্কার এক নিকটাত্মীয়ের প্রাক্তন স্ত্রী জানিয়েছিলেন, তিনি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তদন্তকারীদের কিছু তথ্য জানাতে চান। কিন্তু সিআইডি তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদই করেনি।

তদন্তে নেমে সিবিআই ওই মহিলার কথা জানতে পারে। গত সপ্তাহে তাঁকে ডেকে জেরা করেন তদন্তকারীরা। বেশ কিছু তথ্যের পাশাপাশি তিনি সিবিআইয়ের হাতে কিছু নথিও তুলে দিয়েছেন। জানা গিয়েছে, ওই তরুণীর সঙ্গেও জুনিয়রের পরিচয় ছিল। কয়েকটি পার্টিতে প্রিয়াঙ্কাই জুনিয়রকে নিয়ে গিয়েছিল। সেখানেই দু’জনের পরিচয় হয়। সূত্রের খবর, জুনিয়রের সঙ্গে প্রিয়াঙ্কার সম্পর্ক কত দূর এগিয়েছিল, তাঁরা কী পরিকল্পনা করেছিলেন, এমনকি প্রিয়াঙ্কার শ্বশুরবাড়ি বিষয়টিকে কী ভাবে দেখত— সব কিছুই আভাস তদন্তকারীদের দিয়েছেন ওই তরুণী। তার দিন দুয়েক পরেই সিবিআই প্রিয়াঙ্কাকে গ্রেফতার করে।

জুনিয়রের মা-বাবার ধারণা, কোনও চাপের জন্য মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না প্রিয়াঙ্কা। সেই জন্যই বেশিরভাগ প্রশ্ন হয় সে এড়িয়ে যাচ্ছে, অথবা বলছে ‘মনে নেই’। জুনিয়রের বাবা সমরেশ মৃধা বলছেন, “যে দিন আমাদের মুখোমুখি প্রিয়াঙ্কাকে বসানো হল, সে দিন সে বার বার তদন্তকারীদের বলে, আমাকে মেরে ফেলুন, ফাঁসি দিন, যা ইচ্ছা করুন। এর বেশি কিছু বলতে পারব না। আমি আগে যা বলেছি, এখনও তাই বলছি, পরেও তা-ই বলব। আমি জুনিয়রকে ভালবাসতাম, ওকে খুন করিনি। এর বেশি কিছু আমি জানি না।”

সমরেশবাবু জানান, তাঁর ধারণা, জুনিয়রের খুন সম্পর্কে প্রিয়াঙ্কা এমন কিছু জানে, যা ওর পক্ষে বলা সম্ভব নয়। কারণ, ওর উপরে হয়তো চাপ আছে। তাঁদের আশা, তদন্তকারীরা নিশ্চয়ই সেই দিকটি খতিয়ে দেখবেন। বৃদ্ধ বলেন, “গত দশ বছরে ছেলের খুনের কিনারা করতে অনেক দৌড়ঝাঁপ করেছি। সিবিআই-তদন্তে দশ বছর লেগেছে। সিআইডি বছরের পর বছর তদন্ত দীর্ঘায়িত করেছে। গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করার জন্য এই সময় যথেষ্ট। কিন্তু আমরা হাল ছাড়িনি। আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় আমাদের সঙ্গে থেকেছেন বলেই দীর্ঘ লড়াই লড়তে পেরেছি। আগামী দিনেও লড়ব।”

প্রিয়াঙ্কার স্বামী জয়দীপ চৌধুরী এই মামলায় হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিনের আবেদন করেছেন। আজ, বৃহস্পতিবার ওই মামলার শুনানি হওয়ার কথা। জয়ন্তনারায়ণবাবু জানান, সমরেশবাবুর আইনজীবী হিসেবে তিনি জয়দীপবাবুর আগাম জামিনের বিরোধিতা করবেন।

Junior Mridha priyanka CBI
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy