Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Humayun kabir

Humayun Kabir: চাকরির নামে ঘর ঝাঁট-মোছার কাজ! রাজ্যের মন্ত্রীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ স্নাতক তরুণীর

মন্ত্রীর বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা এবং জাত তুলে অপমানের অভিযোগ। মুখ্যমন্ত্রীর দফতর, রাজ্যপালের কাছে লিখিত অভিযোগ জানান তরুণী।

রাজ্যের কারিগরি শিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ!

রাজ্যের কারিগরি শিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ! ছবি: সংগৃহীত।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২২ ০৫:৩৫
Share: Save:

রাজ্যের কারিগরি শিক্ষামন্ত্রী, প্রাক্তন আইপিএস হুমায়ুন কবীরের বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা এবং জাত তুলে অপমানের লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ডেবরার এক আদিবাসী তরুণী।

সবিতা লায়েক নামে স্নাতক ওই তরুণীর অভিযোগ, কারিগরি শিক্ষা দফতরে অস্থায়ী চাকরি দেওয়ার নামে হুমায়ুন তাঁকে নিজের কসবা রাজডাঙার বাড়িতে রেখে জোর করে পরিচারিকার কাজ করিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘ঘর ঝাঁট-মোছা, কাপড় কাচা, বাসন মাজা, তিন-চারটে কুকুরের মল পরিষ্কার—সবই করানো হত। কাজে সামান্য ভুল হলেই মন্ত্রী ও তাঁর স্ত্রী ‘নিচু জাত’ বলে গালিগালাজ করতেন।’’

তাঁকে দফতরের নিয়োগপত্রও দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ তরুণীর। তবে প্রতি মাসে দফতর থেকে তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বেতনের টাকা জমা হত। সবিতার দাবি, কাজ পছন্দ না হওয়ায় এক দিন মন্ত্রী ও তাঁর স্ত্রী তাঁকে বার করে দেন। তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। এর পরে ২০২১ সালের ১০ অগস্ট কারিগরি দফতর থেকে তাঁকে চিঠি দিয়ে জানানো হয় যে, তিনি স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে এসেছেন।

হুমায়ুনও ওই তরুণীকে বাড়িতে রাখার কথা মানছেন। তবে তাঁর দাবি, মেয়েটি তাঁর বাড়ির অফিসে ব্যক্তিগত সহায়ক (পিএ) হিসাবে ছিলেন। পরিচারিকার কাজ তাঁকে দিয়ে করানো হত না। এক বছর কাজ করলে তাঁকে নিয়োগপত্রও দেওয়া হত। হুমায়ুনের অভিযোগ, মেদিনীপুরে তাঁর কিছু ‘শত্রু’ আছে। তাঁরাই এ সব করাচ্ছে।

তরুণীর দাবি, কয়েক মাস তিনি অপেক্ষা করেছিলেন। ভেবেছিলেন, ফের তাঁকে কাজে ডাকা হবে। তা না হওয়ায় সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর দফতর, রাজ্যপাল ও পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার দীনেশ কুমারের কাছে লিখিত অভিযোগ জানান তিনি। পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত হচ্ছে।’’
দরিদ্র আদিবাসী পরিবারের মেয়ে সবিতা লেখাপড়া শিখেছেন খুবই কষ্ট করে। তাঁর দাদু গুঁইরাম লায়েক ডেবরার ব্রাহ্মণশ্মশান পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য। সবিতা জানান, দাদু বিধানসভা ভোটে মন্ত্রীর হয়ে খুব খেটেছিলেন। জেতার পরে আমার চাকরির জন্য অনুরোধ করেন উনি। ২০২১ সালের ১৫ মে মন্ত্রী জানান, কারিগরি শিক্ষা দফতরে আমার চাকরি হয়েছে।’’

তাঁর অভিযোগ,‘‘মন্ত্রীর ডাকেই ওঁর বাড়িতে যাই। কিন্তু উনি আমাকে বাড়ির ঝি করে রাখেন। গরিব, আদিবাসী বলেই কি এই অপমান সইতে হবে?’’
হুমায়ুনের অবশ্য দাবি, ‘‘আইন মেনেই মেয়েটিকে আনা হয়েছিল এবং দফতরে ‘নন টেকনিক্যাল কনট্র্যাকচুয়াল ওয়ার্কার’ হিসেবে আমার বাড়ির অফিসে নিয়োগ করা হয়েছিল। ভিজিটeরদের দেখাশোনা, চিঠিপত্র নথিভুক্ত করা ছিল ওর কাজ। পরিচারিকার কাজ ও করত না।’’
কারিগরি শিক্ষা দফতরের এক প্রাক্তন কর্তা বলছেন, ‘‘কাউকে অস্থায়ী ভাবে নিয়োগ করা হলেও নিয়োগপত্র বা নিদেনপক্ষে বিভাগীয় নির্দেশিকা থাকতেই হবে। আর কোনও কর্মীকে দিয়ে কোনও ভাবেই মন্ত্রীর বাড়িতে কাজ করানো যায় না।’’ বাম আমলে দু’দফায় ওই বিভাগের মন্ত্রী ছিলেন বংশগোপাল চৌধুরী। তাঁর কথায়, ‘‘মন্ত্রীর পিএ বা অ্যাটেনডেন্টের আলাদা নিয়োগ প্রক্রিয়া আছে। এই ভাবে কাউকে গ্রাম থেকে তুলে বাড়িতে এনে কাজ করানো যায় না।’’

(সহ-প্রতিবেদন: দেবমাল্য বাগচী, বরুণ দে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Humayun kabir Minister
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE