নিয়ন্ত্রণ-বিধি শিথিল হওয়ার পরে দ্বিতীয় দিনেও বাস নিয়ে দুর্গতি কমল না নিত্যযাত্রীদের। তবে, শুক্রবার বেসরকারি বাসের সংখ্যা সামান্য বেড়েছে। সাধারণের জন্য লোকাল ট্রেন এখনও চালু না হওয়ায় রেলপথের সমান্তরাল বেশ কিছু রুটের বাসে এ দিন ভিড় হয়েছিল ভালই। অভিযোগ, ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে চলার বিধি মানেনি বহু বাসই। অধিকাংশ রুটেই যাত্রীদের থেকে দেদার বেশি ভাড়া আদায় করা হয়েছে বলেও অভিযোগ। তবে, এ দিন সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে ব্যারাকপুর-সলপ রুটে সম্পূর্ণ ভুয়ো ভাড়ার তালিকা দেখিয়ে যাত্রীদের থেকে যথেচ্ছ ভাড়া আদায়ের ঘটনা। ২০১৮ সালের সরকারি বিজ্ঞপ্তির অনুকরণে তৈরি করা হয়েছিল ভাড়ার ওই ভুয়ো তালিকা। যা দেখিয়ে ১২ থেকে শুরু করে ৩২ টাকা পর্যন্ত ভাড়া যাত্রীদের কাছ থেকে আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।
শহরের অন্যান্য রুটে ভুয়ো তালিকা ব্যবহার করা না হলেও যাত্রীদের সর্বত্রই বেশি ভাড়া গুনতে হয়েছে। ৯৩, ৭৯বি ও বারুইপুর-বারাসত রুট ছাড়াও ব্যারাকপুর এবং বিরাটি থেকে অল্প সংখ্যায় মিনিবাস চলেছে। সর্বত্রই ন্যূনতম ১২ থেকে ১৫ টাকা ভাড়া দিতে হয়েছে যাত্রীদের। ‘সিটি সাবার্বান বাস সার্ভিস’-এর সাধারণ সম্পাদক টিটু সাহা এ দিন বলেন, ‘‘সরকারি নির্দেশিকা ছাড়া এ ভাবে বেশি ভাড়া নেওয়ার বিরোধী আমরা। পরিষেবা স্বাভাবিক করার স্বার্থে দ্রুত ভাড়ার বিষয়টির নিষ্পত্তি করুক সরকার।’’ বাসের আকাল সামাল দেওয়া প্রসঙ্গে পরিবহণমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এ দিন বলেন, ‘‘প্রয়োজনে বাস ভাড়া নিয়ে চালানোর কথা ভাবা হচ্ছে।’’
এ দিন রাজ্য পরিবহণ নিগম শহরের প্রধান রুটগুলিতে বাস নামালেও বেসরকারি বাসের অভাবে ছোট রুটগুলিতে যাত্রীদের ভুগতে হয়েছে। ডানলপ, সাঁতরাগাছি, মধ্যমগ্রাম, উল্টোডাঙা, ধর্মতলা, বারুইপুর, রবীন্দ্র সদন-সহ বিভিন্ন জায়গায় সকাল এবং সন্ধ্যায় বাসের অপেক্ষায় যাত্রীদের হা-পিত্যেশের ছবি ধরা পড়েছে। বাস না-পেয়ে শাটল ট্যাক্সি, ম্যাক্সি ট্রাক, এমনকি সাইকেল ভ্যানেও ৫০-৬০ টাকা ভাড়া গুনে যাত্রীদের যাতায়াত করতে দেখা গিয়েছে।
এ দিন যাত্রীদের ভিড় সামাল দিতে পরিবহণ নিগম সকালের দিকে প্রায় ৯০০টি বাস রাস্তায় নামায়। বেলার দিকে বাসের সংখ্যা সামান্য কমলেও সরকারি বাসের উপস্থিতি দিনভর ভালই ছিল। এ দিন থেকে ফেরি চলাচলও শুরু হয়েছে। আগামী সপ্তাহের গোড়ায় ট্রামও চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে রাজ্যের।
তবে, আগামী সোমবার থেকে যাত্রীদের চাপ সামলানোই আসল চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করছেন পরিবহণ দফতরের আধিকারিকেরা। বেসরকারি বাস রাস্তায় সে ভাবে না নামলে শুধু সরকারি বাস দিয়ে পরিস্থিতি সামলানো যে কার্যত অসম্ভব, তা মানছেন পরিবহণ দফতরের কর্তারাও। ‘বাস-মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক প্রদীপনারায়ণ বসু এবং ‘মিনিবাস অপারেটর্স কোঅর্ডিনেশন কমিটি’র সাধারণ সম্পাদক স্বপন ঘোষ বলেন, ‘‘উপায় নেই বলেই পরিষেবা বন্ধ রাখতে হয়েছে। মালিকেরা তো বাস চালাতেই চান। সরকার একটু সদয় হলেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে।’’ ‘বাস-মিনিবাস সমন্বয় সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য ঠেকাতে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। সরকার সমস্যাটি দ্রুত অনুধাবন করলে মানুষের ভোগান্তি কমবে।’’