Advertisement
E-Paper

হোর্ডিং-বিধি মানার বালাই নেই শহরে

পুজোর মুখে বিজ্ঞাপনী হোর্ডিংয়ের দাপটে শহর জুড়েই এমন হাঁসফাঁস অবস্থা বলে অভিযোগ। এমনিতেই হোর্ডিং লাগানো নিয়ে শহরে নিয়ম মানার কার্যত বালাই নেই কোনও মহলে।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:১৬
 মুখ ঢেকে যায়: হোর্ডিংয়ের ঠেলায় রাস্তা দেখারও জো নেই শোভাবাজারে। বাধ্য হয়ে রেলিংয়ের ফাঁক দিয়েই উঁকি এক পথচারীর। মঙ্গলবার। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

মুখ ঢেকে যায়: হোর্ডিংয়ের ঠেলায় রাস্তা দেখারও জো নেই শোভাবাজারে। বাধ্য হয়ে রেলিংয়ের ফাঁক দিয়েই উঁকি এক পথচারীর। মঙ্গলবার। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

বাড়ির সকলেই ব্যস্ত। ছেলেরা চাকরিতে, বৌমার সংসার আর নাতি-নাতনিরা নিজেদের জগতে। তাঁর দিনের বেশির ভাগটাই কাটে গ্রে স্ট্রিটের দিকের বাড়ির খোলা জানলার সামনে। চশমার মোটা কাচের ফাঁক দিয়ে বছর সত্তরের সন্ধ্যা দাস দিনভর রাস্তা দেখেন। চোখে পড়ে, এই সময়টায় প্রবল ভিড় হয় হাতিবাগানে!

তবে বৃদ্ধার সেই জানলায় পর্দা পড়ল বলে! বিজ্ঞাপনী হোর্ডিংয়ে ইতিমধ্যেই ঢেকে গিয়েছে জানলার বেশির ভাগ। বাকি অংশের সামনে হোর্ডিং লাগানোর বাঁশ উঠে এসেছে। সে সব দেখিয়ে সন্ধ্যাদেবী মঙ্গলবার বলেন, ‘‘এরা কি বাঁচতে দেবে না? দম আটকে মরে যাব তো! হাঁটুর ব্যথায় বাড়ি থেকে বেরোতে পারি না। পুজোর চার দিন এই রাস্তায় কত লোক হয়। জানলায় বসে লোক দেখা তো দূর, তাঁদের পা-ও দেখা যায় না।’’

শুধু ওই বৃদ্ধাই নন, পুজোর মুখে বিজ্ঞাপনী হোর্ডিংয়ের দাপটে শহর জুড়েই এমন হাঁসফাঁস অবস্থা বলে অভিযোগ। এমনিতেই হোর্ডিং লাগানো নিয়ে শহরে নিয়ম মানার কার্যত বালাই নেই কোনও মহলে। সেটাই লাগামছাড়া মাত্রা পায় দুর্গাপুজোয়। উৎসব শুরু হতে বাকি দু’সপ্তাহের একটু বেশি। এখন থেকেই কোথাও বাড়ির গা-বেয়ে লম্বা উঠে গিয়েছে বাঁশের গায়ে লাগানো সার সার হোর্ডিং। কোথাও ফুটপাতের মুখ এমন ভাবে হোর্ডিংয়ে ঢাকা পড়েছে যে, সেখানে দাঁড়িয়ে বোঝাই যায় না সামনে কোন বাস আসছে। উত্তর থেকে দক্ষিণ কলকাতা ঘুরে আবার দেখা গেল, বেশির ভাগ সেতুর গায়ে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বাঁশের কাঠামো লাগানো। দিন কয়েকের মধ্যেই তাতে বিশাল হোর্ডিং উঠবে। কাঠামোগুলি কি আদৌ নিরাপদ? এ প্রশ্নের অবশ্য উত্তর নেই পুলিশ বা প্রশাসনের কাছে। ঢাকুরিয়া সেতুর কাছে একটি বেসরকারি হাসপাতালের সামনে চায়ের দোকানের মালিক শ্যামল জানা বললেন, ‘‘কোন দিন আমাদের উপরেই সব ভেঙে পড়বে। কারও মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত এই শহরে কিছু হয় না!’’ একই দাবি উল্টোডাঙার মমতা সাধুখাঁর। তাঁর বাড়ির বারান্দাও হোর্ডিংয়ে ঢাকা পড়েছে। বললেন, ‘‘এক মাস এ রকমই থাকে। কিছু বলার উপায় নেই। কিন্তু, হোর্ডিংয়ের বাঁশগুলো এখন থেকেই নড়বড়ে। যে কোনও দিন ভেঙে পড়তে পারে।’’

উল্টোডাঙায় ঢাকা পড়েছে বাড়ির বারান্দাও। মঙ্গলবার। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

দিন কয়েক আগেই হোর্ডিং ভেঙে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে চেন্নাইয়ে। শুভশ্রী রবি নামে বছর তেইশের এক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী নিজের স্কুটিতে ফিরছিলেন। সে সময়ে রাস্তার ধারে লাগানো একটি রাজনৈতিক দলের হোর্ডিং তাঁর উপরে ভেঙে পড়ে। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে শুভশ্রী রাস্তায় লুটিয়ে পড়লে পিছন থেকে আসা একটি জলের ট্যাঙ্কার তাঁকে পিষে দেয়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ওই কর্মীর। এই ঘটনার পরেই বেআইনি হোর্ডিং দ্রুত খুলে ফেলতে হবে বলে কড়া অবস্থান নিয়েছে মাদ্রাজ হাইকোর্ট। পুজোর মুখে শহরের হোর্ডিং-দৌরাত্ম্য দেখে অনেকেরই প্রশ্ন, চেন্নাইয়ে এমন হলে কলকাতায় সম্ভব নয় কেন?

কলকাতা পুরসভার বিজ্ঞাপন দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার অবশ্য বললেন, ‘‘হোর্ডিং লাগানোর ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম আছে। কিন্তু, পুজোয় সেগুলো মানা হয় না। তা ছাড়া পুজোর এক মাস আগে থেকে কোনও বিজ্ঞাপনী হোর্ডিং থেকেই আমরা রাজস্ব আদায় করি না।’’ এই নিয়ম শিথিলতার কারণেই পুজোর শহরে হোর্ডিং-বিপদ বাড়ছে বলে মত ওই দফতরেরই একাধিক পুরকর্তার।

তাঁরা জানাচ্ছেন, পুর-বিজ্ঞাপন নীতি অনুযায়ী, শহরের কোনও রাস্তাতেই পথচারীদের দৃষ্টি আটকে হোর্ডিং লাগানো বেআইনি। কারও বাড়ির জানলা বা বারান্দা ঢেকেও হোর্ডিং লাগানো যাবে না। পুরসভার কিছু ‘নো অ্যাড জ়োন’ রয়েছে। সেখানেও হোর্ডিং নয়। বড় মোড়ের কাছে হোর্ডিং লাগালে রাস্তা থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব ছেড়ে রাখতে হয়। এ ছাড়াও হোর্ডিং লাগানোর আগে পুরসভা থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়। হোর্ডিংটি ধরে রাখার জন্য যে কাঠামো বানানো হয়েছে, তার ধারণক্ষমতা পরীক্ষা করে তবেই পুরসভা অনুমতি দেয়। স্থায়ী হোর্ডিং মাটি থেকে ন্যূনতম সাড়ে আট ফুট উচ্চতায় লাগাতে হবে। তবে এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘পুজোর সময়ে এর কিছুই মানা হয় না। দেখবেন, একটার উপরে অন্য হোর্ডিং পড়ে গিয়েছে। পুজো নিয়ে মেতে থাকাই যেখানে রীতি, সেখানে কে কী করবে?’’

ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের সম্পাদক শাশ্বত বসু অবশ্য বলছেন, ‘‘হোর্ডিং থেকে বিপদ কোনও পুজোয় হয়নি। বিপদ ঠেকাতে আমরা সব প্রস্তুতি নিচ্ছি।’’

KMC Hoarding Durga Puja 2019
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy