Advertisement
০৮ নভেম্বর ২০২৪

হাসপাতাল চত্বরে পুজো, ঠুঁটো কর্তৃপক্ষ

মহেশতলা পুর এলাকার ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের অধীন এই হাসপাতাল। স্থানীয় কাউন্সিলর তৃণমূলের সুকান্ত বেরা আবার ঘটনাচক্রে পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের চেয়ারম্যান পারিষদ।

দখল: পিছনে বজবজ ইএসআই হাসপাতাল ভবন। তারই সামনের মাঠে কালীপুজোর প্রস্তুতি। ছবি: অরুণ লোধ

দখল: পিছনে বজবজ ইএসআই হাসপাতাল ভবন। তারই সামনের মাঠে কালীপুজোর প্রস্তুতি। ছবি: অরুণ লোধ

জয়তী রাহা
শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৭ ০১:৩২
Share: Save:

এক দিকে হাসপাতালের শয্যায় ছটফট করছেন মুমূর্ষু রোগী। অন্য দিকে, মাইকে তারস্বরে বাজছে গান, নাম-সংকীর্তন, মন্ত্রপাঠ— অভিযোগ, বছরের একাধিক দিন এ ভাবেই জমজমাট থাকে বজবজ ইএসআই হাসপাতাল চত্বর। উৎসবের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ রোগীরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, এই যন্ত্রণা উপশম করার কোনও দাওয়াই জানা নেই তাঁদের।নিয়মিত চিকিৎসা করাতে ওই হাসপাতালে মাকে নিয়ে যান অরিজিৎ সাউ। পেশায় নিরাপত্তাকর্মী অরিজিতের কথায়, ‘‘বছর খানেক আগে মা তখন ভর্তি ছিলেন হাসপাতালে। সে দিন একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান উপলক্ষে জোরে মাইক বাজছিল। রোগীদের সমস্যা হওয়ায় আয়োজকদের কাছে মাইক বন্ধ করার অনুরোধ করেছিলাম। বন্ধ হয়নি।’’
অন্য এক বাসিন্দা জানান, প্রায় চার দশক ধরে হাসপাতালের ভিতরে মাঠে একটি দুর্গাপুজো হয়। কালীপুজোও পুরনো। এমনকী মহেশতলা পুর এলাকার প্রায় সমস্ত স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হয় এ মাঠেই। বিভিন্ন ধর্মের অনুষ্ঠানও হয় এখানে, এ সবের জন্য যথেষ্ট হট্টগোল যে হয় এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক কর্মী বলেন, ‘‘এখানে কাজ করছি দীর্ঘ বছর। এ সব বন্ধ করতে কখনও কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগী হতে দেখিনি। বরং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে বসে অনুষ্ঠান করাটা আলোচনার মাধ্যমে মেনে নেন তাঁরা।’’
মহেশতলা পুর এলাকার ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের অধীন এই হাসপাতাল। স্থানীয় কাউন্সিলর তৃণমূলের সুকান্ত বেরা আবার ঘটনাচক্রে পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের চেয়ারম্যান পারিষদ। সুকান্তবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁর বক্তব্য, ‘‘এটা তো দীর্ঘ বছর ধরে হয়ে আসছে। ওখানে কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠান করতে বাধা দেওয়া বা মাইক বাজানোয় নিষেধাজ্ঞা জারি করা আমার পক্ষে সম্ভব না।’’ তাঁর দাবি, ‘‘আগে একটা কালীপুজো হতো হাসপাতালের সদরে, আরেকটি হতো ভিতরে। এ বছর দু’টি মিলিয়ে একটা পুজো করে দিয়েছি। তবে এ বার এই পুজোর গন্ধ বেশি ছড়িয়েছে, তাই বৃহস্পতিবারই সুপারের কাছে পুজো কমিটির লোক লিখিতভাবে জানিয়ে এসেছে, যে কালীপুজোয় কোনও মাইক বাজানো হবে না।’’
বজবজ ইএসআই হাসপাতালের সুপার শান্তনু চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মাত্র দু’বছর এখানে এসেছি। তার আগে থেকেই এ সব হয়। হঠাৎ করে ছবিটা বদলানো আমার পক্ষে সমস্যার। তবে মাইক না বাজানোর বিষয়টি লিখিতভাবে পুজো কমিটির থেকে আদায় করব।’’ ইএসআই হাসপাতালের প্রশাসনিক দায়িত্ব রাজ্যের শ্রম দফতরের। ইএসআই-এর সম্পত্তির দায়িত্বে কেন্দ্রীয় শ্রম দফতর। এ প্রসঙ্গে রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন, ‘‘ইএসআই চত্বরে কোনও কিছু করতে হলে ইএসআই কর্তৃপক্ষের অনুমতি প্রয়োজন। সেটা ছাড়া যে কোনও অনুষ্ঠানই অবৈধ। এই বিষয়টি লিখিত ভাবে কেন্দ্রীয় শ্রম দফতরকে জানানো হবে।’’ তিনি জানান, ইএসআই হাসপাতালগুলির ক্ষেত্রে আরও একটি সমস্যা রয়েছে। ইএসআই চত্বরগুলি পাঁচিল ঘেরা না হওয়ায় মাঝেমধ্যেই যে কেউ ঢুকে পড়ার অভিযোগ আসে। পাঁচিলের জন্য টাকা চেয়ে তিন-চার বছর ধরে কেন্দ্রের কাছে বারবার চিঠি দেওয়া হচ্ছে। সেটা হলে বন্ধ হবে এ সব। ’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE