Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

যদি কামড়ায়! ‘ছক’ কষেই কুকুর-নিধন

ডেপুটি সুপার জানান, নার্সিং হস্টেলে আড়াইশোর কাছাকাছি আবাসিক রয়েছেন। নার্সিং পড়ুয়া ছাড়াও সেখানে এনআরএস হাসপাতালের ১৬০ জন নার্স থাকেন।

অভিযুক্ত: সোমা বর্মণ (উপরে) ও মৌটুসি মণ্ডল। ভিডিয়ো-চিত্র

অভিযুক্ত: সোমা বর্মণ (উপরে) ও মৌটুসি মণ্ডল। ভিডিয়ো-চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:১৬
Share: Save:

কালো প্লাস্টিক, লাঠি এবং বিস্কুটের ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছিল শনিবারই। আর কুকুরছানাগুলিকে পেটানোর জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল রবিবারের দুপুর। কারণ, ওই সময়েই এনআরএস হাসপাতালের নার্সিং হস্টেলের চত্বর সবচেয়ে ফাঁকা থাকে। কুকুর-হত্যার অভিযোগে ধৃত নার্সিং পড়ুয়া মৌটুসি মণ্ডল এবং সোমা বর্মণ তাঁদের কাছে এই ‘পরিকল্পনা’র কথা জানিয়েছেন বলে দাবি ওই হাসপাতালের ডেপুটি সুপার দ্বৈপায়ন বিশ্বাসের।

দ্বৈপায়নবাবুর কথায়, ‘‘মৌটুসিরা জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে জানিয়েছে, খাবার দিয়ে কুকুরছানাগুলিকে ওরা এক জায়গায় ডেকেছিল। তার পরে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মেরেছে। এখন বলছে, মেরে জখম করে প্লাস্টিকে বেঁধে ফেলে দেবে ভেবেছিল। বাচ্চাগুলো মরে যাবে, তা নাকি বোঝেনি।’’ এন্টালি থানায় মৌটুসিদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় উপস্থিত এক পুলিশ আধিকারিকও বলেন, ‘‘এটা এক দিনের ব্যাপার নয়। কয়েক দিন ধরেই পরিকল্পনা করে ঠান্ডা মাথায় সব করেছে। এখন বলছে, ভুল হয়ে গিয়েছে। লাঠিটাও পেয়েছি আমরা।’’

ডেপুটি সুপার জানান, নার্সিং হস্টেলে আড়াইশোর কাছাকাছি আবাসিক রয়েছেন। নার্সিং পড়ুয়া ছাড়াও সেখানে এনআরএস হাসপাতালের ১৬০ জন নার্স থাকেন। মৌটুসি এবং সোমার ঘর দোতলায়। তাঁর দাবি, ধৃতেরা জানিয়েছেন, রবিবার দুপুরে হস্টেলে সেই সময়ে ২০ জন আবাসিক ছিলেন। পরিকল্পনা মতো তাঁদের অনেকে দুপুর ১১টা নাগাদ হস্টেলের চাতালে জড়ো হন। কুকুরছানাগুলোকে আগে চিহ্নিত করে রাখা হয়েছিল। বিস্কুট দিয়ে ওদের এক জায়গায় জড়ো করার দায়িত্ব ছিল দুই নার্সিং পড়ুয়ার উপরে। একটি মা কুকুরকে দূরে বেঁধে রাখা হয়। এর পরে দুপুর সাড়ে ১১টা নাগাদ শুরু হয় লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর।

আরও পড়ুন: ‘বাড়ির পোষা কুকুরটাকে খুবই ভালবাসে মৌটুসি!’

দ্বৈপায়নবাবুর বক্তব্য অনুযায়ী, তদন্তকারী কমিটির সামনে মৌটুসি বলেছেন, ওই সময়ে দু’একটা কুকুরছানা পালায়। তাদের ফের ধরে এনে মারার দায়িত্ব ওঁর আর সোমার উপরেই পড়েছিল। সেই সময়ে বাকিরা মৃত ছানাগুলিকে প্লাস্টিকে ভরতে শুরু করেন। দ্বৈপায়নবাবুর দাবি, ‘‘শেষ কুকুরছানাটিকে মারার সময়ে আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজের ছাত্র ভিডিয়ো তুলে ফেলেছিলেন হয়তো। ওটা খুব কাজে লেগেছে। এমনিতে নার্স হস্টেল হওয়ায় ভিতরে আমাদের সিসি ক্যামেরা নেই। এই ঘটনা দু’জনের কাজ নয়। অনেকে ছিলেন। তাঁদেরও খোঁজ করছি আমরা। ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হয়ে যাবে।’’ তাঁর আরও দাবি, জিজ্ঞাসাবাদের সময় দুই পড়ুয়া জানিয়েছেন, কুকুরছানাগুলোকে মেরে ফেলার পরে দূরে বেঁধে রাখা কুকুরটিকে মারধর করা হয়। এর পরে কুকুরগুলিকে ক্যান্টিনের ফেলে দেওয়া পচা ভাত এবং বাকি জঞ্জালের সঙ্গে প্লাস্টিকে বেঁধে হস্টেলের পাশে আস্তাকুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: খেটো বাঁশের খান পাঁচেক ঘায়ে থামিয়ে দিয়েছিল কান্না!

থানার তদন্তকারী আধিকারিকেরও দাবি, মৌটুসি তাঁদের বলেছেন, কুকুরবাচ্চাগুলো তাদের কামড়াত, পা জড়িয়ে ধরত। ফলে তাদের ভয় করত। ঠিকঠাক চলাফেরা করতে পারতেন না। সুপারকে এ নিয়ে লিখিত জানিয়েছিলেন। তাতেও কোনও কাজ না হওয়ায় সিনিয়র দিদিদের সঙ্গে মিলে তাঁরা কুকুরগুলোকে পেটানোর সিদ্ধান্ত নেন। যাঁর তোলা ভিডিয়ো ফুটেজের ভিত্তিতে মৌটুসিদের চিহ্নিত করা হল, ডেন্টাল কলেজের সেই পড়ুয়া সৌরভ চক্রবর্তী এ দিন বলেন, ‘‘ভাগ্যিস, ভিডিয়োটা তুলেছিলাম। না হলে এদের ধরাই যেত না।’’

দুই নার্সিং পড়ুয়ার গ্রেফতারির পরে হাসপাতালের নার্সেরাও এনআরএস চত্বর থেকে সব কুকুরদের দ্রুত সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার দাবি তুলেছেন। তাঁরা জানান, পুরসভাকে বলে হাসপাতাল কুকুরমুক্ত করা হোক। নয়তো তাঁরা আন্দোলনে নামবেন। হাসপাতালের সুপার সৌরভ চট্টোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘পুরসভাকে বলেছি, হাসপাতাল চত্বরের কুকুরগুলোকে দ্রুত নির্বীজকরণে সাহায্য করা হোক।’’ পুরসভা কর্তৃপক্ষ সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

NRS NRS Hospital Puppies
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE