চারতলা জায়সবাল হাসপাতালে ঢুকে মনে হবে যেন, অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থা সেখানে বেশ আঁটোসাঁটো। বিভিন্ন জায়গায় ঝুলছে পর্যাপ্ত সংখ্যায় লাল রঙের সিলিন্ডার। সব ক’টিরই মেয়াদ রয়েছে ২০১৮ সাল পর্যন্ত।
কিন্তু মোড়ক দেখেই কি বোঝা যায় অন্দরটা? সুরক্ষা ব্যবস্থায় ফাঁক রয়েছে এতই যে আশঙ্কায় থাকেন কর্তৃপক্ষই।
আপাত দৃষ্টিতে এই হাসপাতালে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা ঠিকঠাক মনে হলেও আরও উন্নত মানের পরিকাঠামো থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন খোদ সুপার থেকে স্থানীয় বিধায়ক, কাউন্সিলরও। তাই মুর্শিদাবাদে হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পরেই রবিবার সকালে তড়িঘড়ি ঘুসুড়ির লক্ষ্মীদেবী তুলসীদাস জায়সবাল হাসপাতাল ঘুরে অগ্নি নির্বাপক সিলিন্ডারগুলি পরীক্ষা করেন স্থানীয় কাউন্সিলর কৈলাস মিশ্র।
আগুন নেভানোর জন্য অঢেল যন্ত্র থাকলেও উত্তর হাওড়া, বালি, বেলুড়, লিলুয়ার বাসিন্দাদের একমাত্র ভরসার ২৬০ শয্যার এই হাসপাতালে কি পূর্ণাঙ্গ অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা রয়েছে? এ দিন হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেল, চারতলায় ওঠানামার জন্য দু’টি লিফ্ট ও একটি সিঁড়ি রয়েছে। প্রতি তলে, সমস্ত বিভাগ, অপারেশন থিয়েটার, রান্নাঘর, অফিসর সামনে ও ভিতরে আগুন নেভানোর সিলিন্ডার থাকলেও ভূগর্ভস্থ জলের পাইপলাইন নেই। দুর্ঘটনা ঘটলে জল তবে মিলবে কী ভাবে? এমনকী, র্যাম্প বা আপৎকালীন বেরোনোর রাস্তা, অতিরিক্ত সিঁড়ি কিছুই নেই। ফলে অগ্নিকাণ্ডের মতো বড়সড় কোনও ঘটনা ঘটলে দু’টি ব্লকেরই রোগীদের ভরসা মাঝের একটি মাত্র সিঁড়ি কিংবা লিফ্ট। হাসপাতালের এক কর্মীর কথায়, ‘‘অনেক সময়ই দেখা যায় আগুন লাগলে লিফ্ট বন্ধ করে দিতে হয়। তখন ভরসা একটি মাত্র সিঁড়ি। এটা খুবই বিপজ্জনক।’’ কৈলাসবাবু বলেন, ‘‘পরিকাঠামোয় এখনও কিছু ঘাটতি রয়েছে। বিধায়ক বেশ কিছু প্রস্তাব পুরমন্ত্রী-সহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠিয়েছেন। হাসপাতাল চত্বরে দীর্ঘ দিন দু’টি পুকুর বুজে ছিল। তা সাফাই করানো হয়েছে। আশা করি বাকি কাজও তাড়াতাড়ি হবে।’’ হাসপাতালের সুপার সুখেন্দু বিশ্বাস বলেন, ‘‘পুকুর দু’টি সাফাই হওয়ায় কিছুটা সমস্যা মিটেছে। তবে ভূর্গভস্থ জলাধারের জন্য ইতিমধ্যেই প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।’’
হাসপাতাল সূত্রের খবর, গোটা জায়সবাল হাসপাতালে পরিপূর্ণ অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে গেলে একটি র্যাম্প, অন্তত আরও তিনটি সিঁড়ি ও আপৎকালীন বেরোনোর রাস্তা তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি প্রতিটি তলে বিদ্যুতের পুরনো তার সরিয়ে ফেলে নতুন তার লাগাতে হবে। এমনকী, ভূর্গভস্থ জলাধার তৈরি করে প্রতিটি তলেই পাইপ সিস্টেমে জলের উৎসের ব্যবস্থা করা দরকার। স্থানীয় বিধায়ক বৈশালী ডালমিয়া বলেন, ‘‘একটা হাসপাতালের সঙ্গে অনেকগুলি প্রাণ জড়িয়ে থাকে। তাই সেখানে পরিকাঠামো বা অন্য কোনও ঘাটতি মানা যায় না। জায়সবাল হাসপাতালটি সাজিয়ে তোলার অনেক সুযোগ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন স্তরে যোগাযোগ করছি।’’
একই সমস্যা এলাকার আরও এক সরকারি হাসপাতালেও। পাঁচশো শয্যা বিশিষ্ট হাওড়া জেলা হাসপাতালের দু’টি ভবনে পর্যাপ্ত অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র রয়েছে। সেগুলি সবই কাজ করে। আছে একটি ভূগর্ভস্থ জলাধারও। কিন্তু এত বড় হাসপাতালে আগুন লাগলে লড়াই করার মতো প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নেই।
সবচেয়ে বড় কথা, হাসপাতালের দু’টি ভবনেই রয়েছে মাত্র একটি করে সিঁড়ি। ফলে আগুন লাগলে সেগুলিই বেরোনোর এক মাত্র পথ। রোগীদের নিয়ে যাওয়ার জন্য কোনও র্যাম্প নেই। প্রধান ভবনে চারটি লিফ্ট আছে, সেগুলি সচলও বটে। কিন্তু বড় অগ্নিকাণ্ডের সময়ে লিফ্ট বন্ধ করে দিতে হচ্ছে বলে আগে বহু ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে। তাই লিফ্ট দিয়ে সিঁড়ি বা র্যাম্পের ঘাটতি বোধহয় মেটে না।
হাসপাতালের এসএনসিইউ এবং সিসিইউ ওয়ার্ডগুলিতে এসি থাকায় সেখানে আছে স্মোক ডিটেক্টর ও ফায়ার অ্যালার্ম। হাসপাতালের সুপার নারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে আগুন নেভানোর ব্যবস্থা রয়েছে। তবে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণের জন্য আমরা ইতিমধ্যেই রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে আবেদন জানিয়েছি।’’ কিন্তু তিনি জানান, হাসপাতালে নতুন করে র্যাম্প তৈরি করার পরিস্থিতি এখন নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy