Advertisement
E-Paper

বাড়িগুলি কতটা পোক্ত, যাচাই হয়েছিল কি?

দুর্গা পিতুরি লেন ও সেকরাপাড়া লেন এলাকায় ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সুড়ঙ্গ খননের জেরে যে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে, তার পরে এমন প্রশ্নই তুলেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:৪৩
বিপদ: ক্ষতিগ্রস্ত একটি বাড়ি। সোমবার, বৌবাজারে। নিজস্ব চিত্র

বিপদ: ক্ষতিগ্রস্ত একটি বাড়ি। সোমবার, বৌবাজারে। নিজস্ব চিত্র

মেট্রোর কাজ শুরুর আগে জমি পরীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তো উঠেছিলই। কিন্তু বৌবাজারের মতো পুরনো এলাকায় সুড়ঙ্গ তৈরির ক্ষেত্রে যতটা সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত ছিল, বাস্তবে কি ততটা করা হয়েছিল?

দুর্গা পিতুরি লেন ও সেকরাপাড়া লেন এলাকায় ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সুড়ঙ্গ খননের জেরে যে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে, তার পরে এমন প্রশ্নই তুলেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের একাংশ। কারণ, ‘অ্যাকুইফার’ বা ভূগর্ভস্থ জলস্তরই শুধু নয়, সুড়ঙ্গের কাজ চলার সময়ে মাটির নীচে কম্পন বা সরণ হলে যে উপরেও তার প্রভাব পড়বে, সেটা অবধারিতই ছিল বলে জানাচ্ছেন তাঁরা।

রবিবারই দুর্ঘটনার পরে কয়েক জন বিশেষজ্ঞ নিজেদের উদ্যোগে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। পরিদর্শনের পরে তাঁরা জানান, সুড়ঙ্গ-বিপর্যয়ের একমাত্র কারণ ‘অ্যাকুইফার’ নয়। তাঁদের বক্তব্য, বৌবাজার এলাকার বাড়িগুলি এমনিতেই পুরনো। ফলে কোন বাড়ির ভিতের কী অবস্থা, সেগুলি কী ভাবে দাঁড়িয়ে আছে, তার কোনও ঠিক-ঠিকানা নেই। শুধু তা-ই নয়, একই ভিতের উপরে হয়তো কোথাও একতলা বাড়ি উঠেছে, কোথাও আবার উঠেছে চারতলা বাড়ি। তা ছাড়া, বাড়িগুলি এমন ভাবে গায়ে গায়ে অপরিকল্পিত ভাবে তৈরি হয়েছে যে, একটি বাড়ির ক্ষেত্রে ভারসাম্যে কোনও সমস্যা দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে তার প্রভাব পড়ে পাশের বাড়িতেও। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’ বিভাগের ভিজিটিং প্রফেসর বিশ্বজিৎ সোম বলেন, ‘‘বাড়িগুলির নিজস্ব আয়ুই ফুরিয়ে এসেছে। সেখানে মাটিতে সামান্য কম্পন হলেও তার প্রভাব বাড়িগুলির উপরে পড়ত। ফলে সুড়ঙ্গ তৈরির আগে ওই এলাকার বাড়িগুলির ‘স্ট্রাকচারাল স্টেবিলিটি’ যে গুরুত্ব সহকারে পরীক্ষা করার দরকার ছিল, তেমনটা করা হয়নি বলেই প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে।’’

বিশেষজ্ঞেরা এ-ও জানাচ্ছেন, সেখানকার বাসিন্দারা যাতে বাড়ি থেকে নিজেদের সম্পত্তি বা গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র বার করে আনতে পারেন, তার জন্য ‘আন্ডারপিনিং’ করা দরকার। অর্থাৎ সিমেন্ট, লোহার রড ঢুকিয়ে ভিতকে সাময়িক ভাবে শক্ত করা, যাতে মানুষ নিজেদের জিনিসপত্র বার করার সুযোগটুকু পান। সেই সঙ্গে যে সমস্ত জায়গায় ফাটল তৈরি হয়েছে, সেখানে ‘প্রপিং’ করা, অর্থাৎ লোহার বিম দিয়ে ঠেকা দেওয়া দরকার, যাতে পুরো কাঠামোই হুড়মুড় করে ভেঙে না পড়ে।

বিশেষজ্ঞেরা আরও জানাচ্ছেন, সমস্যা তৈরি হয়েছে বাড়িগুলির চুন-সুরকির গাঁথনি ও ইটের দেওয়াল হওয়ায়। কোনওটা দেড়শো বছরের, কোনওটা আবার ১৮০ বছরের পুরনো। বাড়িগুলির ভিতও ইটের। সেগুলি বিম-কলামের বাড়ি নয়। একেই দুর্বল ভিত, তার উপরে বাড়িগুলি গা ঘেঁষে থাকায় এক ভিতের ওজন অন্য ভিতের উপরে গিয়ে পড়ছে। নির্মাণবিদ্যার ক্ষেত্রে এমনিতেই যা বিপজ্জনক। সোমবার ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে গিয়েছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’ বিভাগের আর এক শিক্ষক পার্থপ্রতিম বিশ্বাস। তিনি বলছেন, ‘‘প্রতিটি ফাটল দেখে বোঝা যাচ্ছে যে, নীচের মাটি সরতে শুরু করেছে বা মাটি বসে যাচ্ছে। বসে যাওয়া ভিতের ফলে অসমান ভাবে বাড়ির এক-একটি দিকও বসে যাচ্ছে। ফলে ফাটল তৈরি হচ্ছে বা কোনও দিক ভেঙে বেরিয়ে যাচ্ছে। এখানকার সাব-সয়েল প্রোফাইলে কোনও গন্ডগোল রয়েছে, যা ধরা যায়নি বলেই মনে হচ্ছে।’’ ফলে পুরো এলাকার পরিস্থিতিই বিপজ্জনক হয়ে রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা।

Tunnel Boring Kolkata Metro Bowbazar Video
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy