Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Baghbazar

পাশে থাকার বার্তায় চাপা পড়ে যায় দখলের প্রশ্ন 

গত বুধবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটা নাগাদ আগুন লাগে বাগবাজারের ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ অ্যাভিনিউয়ের ফুটপাতের বড় অংশ দখল করে গজিয়ে ওঠা হাজার বস্তিতে।

সংগ্রহ: ঘরের ধ্বংসাবশেষ থেকে ইট ও লোহার অংশ সরিয়ে নিচ্ছেন বাসিন্দারা। শনিবার, বাগবাজারের হাজার বস্তিতে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

সংগ্রহ: ঘরের ধ্বংসাবশেষ থেকে ইট ও লোহার অংশ সরিয়ে নিচ্ছেন বাসিন্দারা। শনিবার, বাগবাজারের হাজার বস্তিতে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২১ ০৩:২৩
Share: Save:

প্রশ্ন ছিল, ফুটপাতের বেশির ভাগটাই দখল করে আস্ত একটা বস্তি গড়ে ওঠে কী ভাবে? কী করে সেখানেই বাঁশ-টিন দিয়ে দোতলা বা তেতলার ঘর উঠে যায়? কেনই বা তাঁদের পুনর্বাসন হয় না? বাগবাজারের পুড়ে যাওয়া হাজার বস্তি ঘিরে এই সব প্রশ্ন তোলাই যেন এ মুহূর্তে ‘অন্যায়’! খোদ রাজ্য সরকার ওই বস্তির বাসিন্দাদের পাশে দাঁড়ানোয় যে প্রশ্ন তোলা আরও কঠিন হয়েছে। অনেকেই বলছেন, ভোটের আবহে দখলদারির রোগ সারানোর প্রশাসনিক কর্তব্যটাই চাপা পড়ে গেল!

গত বুধবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটা নাগাদ আগুন লাগে বাগবাজারের ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ অ্যাভিনিউয়ের ফুটপাতের বড় অংশ দখল করে গজিয়ে ওঠা হাজার বস্তিতে। ঘটনায় পুড়ে যায় প্রায় দেড়শোটি ঘর। মুহুর্মুহু সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হতে দেখা যায়। বিপদ বাড়ে বস্তির বাসিন্দাদের একাংশের বিক্ষোভের মুখে পড়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছেও দমকল কাজ শুরু করতে না পারায়। পাশের একটি সরকারি কলেজ, মায়ের বাড়ি, উদ্বোধন কার্যালয়ে ব্যাপক ক্ষতির ঝুঁকি তৈরি হয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে থাকার তাগিদে বেআইনি বসতের প্রশ্নটা চাপা পড়তে শুরু করে।

ওই এলাকারই বাসিন্দা, কলেজ শিক্ষক সোনালি বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো অনেকেই ঘটনার দিন দুয়েক পরে বলেন, “একটা বস্তি রাস্তার ধারে জতুগৃহের মতো পড়ে থাকতে দেখলেই মনে হচ্ছে, এমন কি হওয়ার কথা ছিল? বিপদ ঘটার আগে কি এখানকার বাসিন্দাদের জন্য বিকল্প বাসস্থানের ব্যবস্থা করা যেত না! বস্তির সঙ্গেই তো আমাদের ঘরবাড়িও খাক হয়ে যেতে পারত!” অন্য এক বাসিন্দার দাবি, “ওই ভাবে সিলিন্ডার ফাটতে দেখে মনে হচ্ছিল, এ আগুন সব গিলে না খেয়ে ফেলে।”

আরও খবর: বউবাজারে বৃদ্ধ খুন, মাথায় বাড়ি প্রেসার কুকারের, গলায় ধারালো ছুরির কোপ

আরও খবর: পলাতক অভিযুক্তদের তালিকা চাইল নির্বাচন কমিশন

এ দিকে ঘটনার পরদিন বৃহস্পতিবারই ঘটনাস্থলে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে এসেছেন, “যাঁরা যেখানে যেমন ভাবে ছিলেন, তেমন ভাবেই থাকবেন। পুরসভাই পোড়া বস্তিতে নতুন করে ঘর বানিয়ে দেবে।” এ ছাড়া কি বিকল্প ছিল না? স্থানীয় পুর-প্রশাসনের সঙ্গে যুক্তেরা যদিও জানাচ্ছেন, এক সময়ে ফুটপাত জুড়ে তৈরি হওয়া এই ধ‍রনের বস্তিগুলিকে প্রশাসন বিপজ্জনক চিহ্নিত করেছিল। সেখানে বসবাসকারীদের জন্য বিকল্প বাসস্থানের বন্দোবস্ত করার কথাও বলা হয়েছিল। সেই তালিকাতেই ছিল হাজার বস্তি। কিন্তু এখানকার কেউই অন্যত্র যেতে চাননি। উপরন্তু ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় এলে ফুটপাতের এই বস্তিতে বিদ্যুতের সংযোগ আসে। বাসিন্দাদের জন্য তৈরি করে দেওয়া হয় গণ শৌচালয়। বস্তিতে জলের সংযোগও যায় তখনই। ওই এলাকার পুর-প্রশাসনিক কাজে যুক্ত এক ব্যক্তি বলেন, “সরকার জোর করে মানুষকে তুলে দেওয়ার বিরুদ্ধে। তাই এই বস্তি সরেনি। ভোটের হাওয়ায় এখন আরওই সম্ভব নয়।” কলকাতা পুরসভার সাত নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত ওই এলাকার কোঅর্ডিনেটর বাপি ঘোষ আবার বললেন, “এঁদের জন্য আমি যতটা করেছি, আর কেউ করেননি। কখনও জোর করে তুলে দিতে চাইনি। তবে হ্যাঁ, এক বার ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পে ঘর দেওয়ার কথা বলেছিলাম। কিন্তু কেউ রাজি হননি।” হাজার বস্তির বাসিন্দা স্বপ্না দলুই, রীতা দত্ত, সুকমল পাইনদের বক্তব্য, “অনেকে টাকা নিয়ে উঠে যেতে বলেছিলেন। আমরা যাইনি। অন্য কোথাও যাব না। সরকারি ঘর দেওয়া আসলে বাহানা। ওরা আমাদের একতা ভেঙে দিতে চায়।” স্বপ্নার মন্তব্য, “করোনা হয়েছে বলেও আমাদের ৪২ জনকে লকডাউনের মধ্যে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছিল। আমরা যাইনি।”

কিন্তু এই বিপদ-বাসে তো ভয় অন্যদের, ভয় আপনাদেরও...! থামিয়ে দিয়ে রীতা বলেন, “এ শহরের সব ফুটপাত যদি দখলমুক্ত হয়, আমরাও সরে যাব। তা ছাড়া সামনে ভোট। ভোটের আগে তুলবে কে?”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Baghbazar Fire Accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE