অনিয়ম: দুর্ঘটনায় এক বাইকচালকের মৃত্যুর পরেও নেই পুলিশি নজরদারি। রাস্তায় নেমে বাসের অপেক্ষায় নিত্যযাত্রীরা। বুধবার, বিদ্যাসাগর সেতুর টোল প্লাজ়ার কাছে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
এ যেন সাক্ষাৎ মৃত্যুফাঁদ! কখনও সেতুর রেলিং ভেঙে নীচে পড়ে যাচ্ছে লরি, কখনও আবার সেতুর ডিভাইডারে ধাক্কা মেরে মালবাহী গাড়ি উল্টে যাচ্ছে রাস্তার মাঝখানেই। শুধু তা-ই নয়, গত মঙ্গলবার ওই সেতুতে হঠাৎ গতি বাড়িয়ে এগোতে গিয়ে এক মোটরবাইক আরোহীকে পিষে দিয়েছে একটি বাস। বিদ্যাসাগর সেতুতে দুর্ঘটনার তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন সেই ঘটনা।
কলকাতা ও হাওড়ার মধ্যে যোগাযোগ রক্ষাকারী অন্যতম প্রধান এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার গাড়ি যাতায়াত করে। কিন্তু ওই সেতুর উপরে ঘটে চলা একের পর এক দুর্ঘটনা প্রশ্ন তুলে দিয়েছে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়েই। পাশাপাশি, সেতুর রেলিংয়ের একাংশ ভেঙে বাসস্টপ তৈরি হওয়ায় যাত্রী তোলা নিয়ে বাসের রেষারেষিতেও দুর্ঘটনা বাড়ছে বলে নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ। বাসে-বাসে রেষারেষির বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন হাওড়া সিটি ট্র্যাফিক পুলিশের এক কর্তাও। মঙ্গলবার সকালের ওই দুর্ঘটনায় এক জনের মৃত্যুর পিছনেও রেষারেষিই দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হল, সেতুর রেলিং ভেঙে আচমকা ওই বাসস্টপ তৈরি করা হল কেন? ওই সেতুর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনার্স (এইচআরবিসি) সূত্রে জানা গিয়েছে, সেতু তৈরি হওয়ার পরে কাজীপাড়ার দিকে ওই জায়গায় কাঁটাতার-সহ কংক্রিটের রেলিং ছিল। কিন্তু সেই কাঁটাতার মাঝে মাঝেই কেউ বা কারা কেটে দিত। তার পরে সেই কাটা অংশ দিয়ে রেলিং টপকে সেতুতে উঠে এসে যানবাহন ধরতেন এলাকার বাসিন্দারা। এইচআরবিসি যত বার ওই কাঁটাতার লাগিয়েছে, তত বারই তা কেটে দেওয়া হয়েছে। বার বার এই ঘটনা ঘটতে থাকায় এইচআরবিসি ওই রেলিং ভেঙে দিয়ে একটা পথ তৈরি করে দেয়। ফলে কাজীপাড়ার লোকজন এখন ওই পথে এসেই যানবাহন ধরেন। এ ভাবেই সেতুতে ওঠার মুখে তৈরি হয়ে যায় বাসস্টপ। এইচআরবিসি-র যুগ্ম প্রজেক্ট ম্যানেজার সুব্রত রায় বললেন, ‘‘রেলিং ভেঙে যাতায়াতের পথ তৈরির সিদ্ধান্ত এইচআরবিসি একা নিতে পারে না। আমরা শুধু তৈরি করে দিয়েছি।’’
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, মাসখানেক আগে কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের তরফে বিদ্যাসাগর সেতুর উপরে দুর্ঘটনা কমাতে এইচআরবিসি-কে বেশ কিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়। কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশ জানিয়েছে, ওই প্রস্তাবে সেতুর দু’ধারে কংক্রিটের রেলিংয়ের উচ্চতা আরও দু’ফুট বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। সেখানে উচ্চতা বাড়াতে ‘রোলিং ব্যারিয়ার’ তৈরির প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছিল। এমনকি, সেতুর কলকাতা ও হাওড়ার দিকের রাস্তায় ডিভাইডারের উচ্চতাও একই পদ্ধতিতে বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া, সেতুর উপরে উঁচু বাতিস্তম্ভ তৈরি করা যায় কি না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছিল।
গত বছর আমপান ঝড়ে সেতুর উপরের একাধিক ‘রেড ব্লিঙ্কার’ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। চিঠিতে সেই সমস্ত ব্লিঙ্কারের সংখ্যা আরও বাড়ানোর প্রস্তাবও দেওয়া হয় কলকাতা পুলিশের তরফে। কিন্তু তার পরেও অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি বলে অভিযোগ। কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘এই সমস্ত পদক্ষেপ করলে সেতুর উপরে দুর্ঘটনা যে কমবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। পাশাপাশি, রেলিংয়ের উচ্চতা বাড়ালে সেতু থেকে ঝাঁপ দেওয়ার প্রবণতাও আটকানো যাবে।’’
দুর্ঘটনা কমাতে কলকাতা পুলিশের দেওয়া প্রস্তাব অনুযায়ী কাজ না হওয়ার ব্যাপারে এইচআরবিসি-র বক্তব্য, পুলিশের প্রস্তাব পাওয়ার পরে সেতুতে আলো ও ব্লিঙ্কারের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। বাকি কাজগুলি নিয়ে আলোচনা চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy