E-Paper

আইআইএমের বাইরে সান্ধ্য প্রমোদে পুলিশি ‘প্রশ্রয়’ নিয়ে প্রশ্ন

অভিযোগ, ঠাকুরপুকুর থ্রি-এ বাসস্ট‍্যান্ড থেকে আইআইএম জোকার শিক্ষাঙ্গনের ফটক পর্যন্ত তল্লাটের চেহারাটা বেশি রাতে আকছার পাল্টে যায়। শুনশান ডায়মন্ড হারবার রোডে তখন ওত পেতে থাকেন আইনরক্ষকদের একাংশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৫ ০৬:২০
আইআইএম ক‍্যাম্পাসের ভিতরে ছাত্রের দ্বারা এক মহিলার যৌন নিগ্রহের অভিযোগ ওঠার পরে পড়ুয়াদের একাংশের জীবনযাত্রার দিকে আঙুল উঠছে।

আইআইএম ক‍্যাম্পাসের ভিতরে ছাত্রের দ্বারা এক মহিলার যৌন নিগ্রহের অভিযোগ ওঠার পরে পড়ুয়াদের একাংশের জীবনযাত্রার দিকে আঙুল উঠছে। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

আইআইএম জোকার হস্টেলে জনৈক ছাত্রের বিরুদ্ধে মহিলাকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন উঠছে স্থানীয় পুলিশের একাংশের ভূমিকা ঘিরেও। জনৈক ছাত্রের বিরুদ্ধে ওঠা গুরুতর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের সঙ্গে সর্বতো ভাবে সহযোগিতা করার কথা বলছেন আইআইএম কর্তৃপক্ষ। দেশের প্রাচীনতম ম‍্যানেজমেন্ট ক‍্যাম্পাসের ভিতরে ঢোকার নিয়মের নানা কড়াকড়ি ঠেলে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কহীন অভিযোগকারিণী মহিলাকে কী করে ভিতরে নিয়ে যাওয়া হল, সেই প্রশ্নও উঠছে। এর পাশাপাশি, শিক্ষাঙ্গনের ঠিক বাইরে বেশি রাতে কিছু শিক্ষার্থীর থেকে টাকা আদায়ের ‘পুলিশি ব্যবস্থা’ নিয়েও কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন।

অভিযোগ, ঠাকুরপুকুর থ্রি-এ বাসস্ট‍্যান্ড থেকে আইআইএম জোকার শিক্ষাঙ্গনের ফটক পর্যন্ত তল্লাটের চেহারাটা বেশি রাতে আকছার পাল্টে যায়। শুনশান ডায়মন্ড হারবার রোডে তখন ওত পেতে থাকেন আইনরক্ষকদের একাংশ। সহযাত্রী মহিলার সঙ্গে অন্তরঙ্গ ভাবে ধরা পড়া ছাত্রকে ভয় দেখিয়ে ওই চত্বরে বার বারই পুলিশের বিরুদ্ধে মোটা টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।

পুলিশের ‘খপ্পরে’ পড়া ছাত্রেরা বেশির ভাগই ভিন্ রাজ‍্য থেকে আগত। অনেকেই যথেষ্ট সম্পন্ন। কলকাতায় সামাজিক পরিচিতি ততটা নেই। ওই তল্লাটের আইনরক্ষকদের থানা স্তরে একেবারে নিচুতলা থেকে ডিভিশনের উপরের দিকের একাংশ এই উপরি রোজগারে জড়িত বলেই অভিযোগ।

ওই চত্বরে ধাবমান অ‍্যাপ-ক‍্যাবগুলির দিকে শ‍্যেন দৃষ্টিতে নজর রাখেন উপরতলার ‘অভয়প্রাপ্ত’ কয়েক জন কনস্টেবল। গাড়ি আটকে ‘শিকার’ ধরা পড়লেই মোবাইলে খবর যায় তাঁদের ঠিক উপরতলার ক’জন পুলিশকর্মীর কাছে। সেখান থেকে খবর পান থানার উপর দিকের আধিকারিক। তাঁরা নির্দেশ পাঠান, কারা ধরা পড়েছে, ছবি পাঠাও! সেই ছবি দেখে এর পরে তাঁদের ‘ছাড়’ দেওয়ার দরদস্তুর ঠিক হয় বলে অভিযোগ।

আইআইএম ক‍্যাম্পাসের ভিতরে জনৈক ছাত্রের দ্বারা এক মহিলার যৌন নিগ্রহের অভিযোগ ওঠার পরে ওই তল্লাটের পড়ুয়াদের একাংশের জীবনযাত্রার দিকে আঙুল উঠছে। অভিযোগ, সচ্ছল ঘরের শিক্ষার্থীদের টাকা আদায়ের গাছ হিসেবেই ব‍্যবহার করে পুলিশ। ওই চত্বরে একদা কর্তব‍্যরত, কিছু দিন আগে অন‍্যত্র বদলি হওয়া এক পুলিশ আধিকারিকের দাবি, “এক-এক রাতে পড়ুয়াদের উপরে চাপ দিয়ে স্থানীয় পুলিশ অনায়াসে কম করে ৪০-৫০ হাজার টাকা আদায় করে। চার-পাঁচটি গাড়ি ধরলেই ওই টাকা উঠে আসে। থানার একেবারে নিচু স্তর থেকে ডিসি-র নিচুতলার অফিসারদের মধ‍্যেও টাকার বখরা যায় বলে অভিযোগ।” ক্রমশ কারও কারও ক্ষেত্রে পুলিশের এক ধরনের ‘প্রশ্রয়’ চালু হয়ে যায় বলেও অভিযোগ।

আইআইএম জোকার ক‍্যাম্পাস হরিদেবপুর থানার অন্তর্গত। কিন্তু লাগোয়া ডায়মন্ড হারবার রোডের অংশবিশেষ ঠাকুরপুকুর থানার হাতে। ট্র্যাফিক পুলিশকেও আকছার ওই চত্বরে রাতের দিকে তৎপর হয়ে উঠতে দেখা যায়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ডিসি রাহুল দে-কে ফোন করে এবং ওয়টস্যাপে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া মেলেনি। আইআইএমের শিক্ষাঙ্গনের রীতি অনুযায়ী, যথেষ্ট আগে ইমেল করে বাইরের কাউকে ঢুকতে হয়। সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন, ক‍্যাম্পাসে লেক ভিউ হস্টেলে এমন ঘটনা কী করে ঘটল?

আইআইএম কলকাতার ডিরেক্টর-ইন-চার্জ শৈবাল চট্টোপাধ্যায় শনিবার বিবৃতিতে বলেন, “আইআইএম কলকাতা কর্তৃপক্ষ এই ধরনের ঘটনায় এক ফোঁটা নমনীয়তায় বিশ্বাসী নয় এবং বরাবরই শিক্ষাঙ্গন নিরাপদ ও সম্ভ্রমপূর্ণ রাখায় দায়বদ্ধ। প্রাতিষ্ঠানিক বিধি মেনে যা করণীয় আইআইএম তা-ও করছে।” তবে শিক্ষাঙ্গনের বাইরে পড়ুয়াদের উপরে পুলিশি জুলুমের অভিযোগ নিয়েও নানা মহলে প্রশ্ন উঠছে। প্রশ্ন উঠছে, এ বিষয়ে কতটা ওয়াকিবহাল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ? আইআইএম কর্তৃপক্ষের তরফে বিবৃতিতে অবশ‍্য শুধু ছাত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে বলা হয়েছে। তাতে বলা হয়, “তদন্তের বিষয়টিতে আমরা নজর রাখছি। আর কিছু আমরা বলব না। যা ঘটেছে, সে বিষয়ে যাচাই না করে তথ্য ছড়ালে বা জল্পনা চালালে তা তদন্তের ক্ষতি করতে পারে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

IIM police

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy