মা উড়ালপুলের একাংশে মাঞ্জা সুতো থেকে দুর্ঘটনা এড়াতে ফেন্সিং করা হয়েছে। শনিবার। নিজস্ব চিত্র —নিজস্ব চিত্র।
গলায় চেপে বসছে মাঞ্জা সুতোর মরণফাঁদ! যত এগোবেন, ততই বেশি বিপদ! তবু মোটরবাইকের ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে পড়া যাচ্ছে না। কারণ, পিছন থেকে দ্রুত গতিতে ছুটে আসছে একের পর এক গাড়ি। সুতোর জেরে যা বিপদ, হঠাৎ ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে পড়লে গাড়ির ধাক্কায় ঘটে যেতে পারে আরও মারাত্মক কিছু! শুক্রবার বিকেলে মা উড়ালপুলে এমনই পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছিলেন টালিগঞ্জের বাসিন্দা এক যুবক। কোনও মতে প্রাণে বাঁচলেও তাঁর প্রশ্ন, ‘‘মাঞ্জা সুতোর জেরে এত দুর্ঘটনা ঘটলেও প্রশাসন কেন সতর্ক হয় না? কেনই বা উড়ালপুলের খোলা অংশ জাল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয় না?’’
জানা গিয়েছে, পেশায় স্থপতি ওই যুবকের নাম শেখ মহম্মদ সইদ। শুক্রবার বিকেলে তিনি সল্টলেকের অফিস থেকে বেরিয়ে টালিগঞ্জে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। সমাজমাধ্যমে করা একটি পোস্টে ওই যুবক লিখেছেন, বাইক চালানোর নিয়ম মেনে মাথায় হেলমেট ও পরনে বাইকার জ্যাকেট ছিল তাঁর। হাতেও ছিল দস্তানা। মা উড়ালপুলের পার্ক সার্কাসের দিকের অংশে নেমে বাঁ দিকে ঘুরে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁর। ওই যুবক শনিবার বলেন, ‘‘হঠাৎ বুঝতে পারি, গলার কাছে ঘুড়ির সুতো চেপে বসছে। বাঁ হাত দিয়ে দ্রুত সুতো সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে থাকি। ডান হাত আর ডান পায়ে ব্রেক কষতে শুরু করি। পিছন থেকে তখন দ্রুত গতিতে গাড়ি আসছিল। আমার বাইকের গতি তিরিশ থেকে চল্লিশ কিলোমিটারের মধ্যে থাকায় দ্রুত দাঁড়িয়ে পড়তে সমস্যা হয়নি। তা-ও দেখি, সুতোয় বাঁ হাতের দস্তানা ছিঁড়ে গিয়েছে। আঙুলও কেটে গিয়েছে। তত ক্ষণে গলার কাছে ব্যথা শুরু হয়েছে। গলায় গভীর ক্ষত নিয়ে এর পরে এম আর বাঙুর হাসপাতালে যাই।’’
কিন্তু বার বার এমন ঘটনা ঘটে চললেও পরিস্থিতির বদল হয় না কেন? ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, কাচের গুঁড়ো মিশ্রিত এমন সুতোর বিপদ কাটাতে রাজধানী দিল্লিতে পাঁচ বছরের জেল এবং এক লক্ষ টাকা জরিমানার কড়াকড়ি করা হলেও এই শহরে কিছুই হয় না। এমন সুতো বিক্রির অপরাধে মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনীতে এক ব্যবসায়ীর বাড়ি সরকার বুলডোজ়ার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিলেও এই রাজ্যে তেমন নজির দেখা যায় না। যদিও একের পর এক দুর্ঘটনার জেরে ২০১৬ সালের ১৪ ডিসেম্বর জাতীয় পরিবেশ আদালত দেশ জুড়ে চিনা মাঞ্জা নিষিদ্ধ করেছিল। এই সুতো বা মাঞ্জার উপকরণ বিদেশ থেকে আমদানি করার উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। বলা হয়, নির্দেশিকা অমান্য করে কেউ চিনা মাঞ্জা দেওয়া সুতো ব্যবহার করলে ১৯৮৬ সালের পরিবেশ রক্ষা আইন এবং ১৯৭২ সালের বন্যপ্রাণ সুরক্ষা আইনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। সুপ্রিম কোর্টও সেই নির্দেশই বহাল রাখে। কিন্তু তার পরেও পরিস্থিতি বদলায় না কেন?
লালবাজারের কর্তারা এ প্রসঙ্গে দাবি করেছেন, তাঁদের রিপোর্টের ভিত্তিতেই বছর দুয়েক আগে মা উড়ালপুলের বিপজ্জনক অংশ তারের জাল দিয়ে ঘিরে দেওয়ার ব্যবস্থা করে উড়ালপুলের রক্ষণাবেক্ষণকারী সংস্থা ‘কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’ (কেএমডিএ)। প্রায় ২০ লক্ষ টাকা খরচ করে বোট ক্লাব থেকে চার নম্বর সেতু পর্যন্ত উড়ালপুলের ৯০০ মিটার অংশ তারের জাল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হলেও চার নম্বর সেতু থেকে পার্ক সার্কাসের দিকের কয়েকশো মিটার অংশ এবং পরমা আইল্যান্ডের দিকের অরক্ষিত অংশের বিপদ কাটেনি। ওই অংশে প্রায়ই সুতো থেকে দুর্ঘটনা ঘটায় পুলিশের তরফে আশঙ্কা প্রকাশ করে কেএমডিএ-কে একাধিক চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ হচ্ছে না। কেএমডিএ সূত্রে যদিও দাবি করা হয়েছে, দরপত্র হয়ে গিয়েছে। ওই অংশেও তারের জাল লাগানোর কাজ দ্রুত শেষ হবে।
কিন্তু তত দিন সুরক্ষার কী বন্দোবস্ত হবে? কোনও পক্ষ থেকেই স্পষ্ট উত্তর মেলে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy