E-Paper

বাহিনীতে লোক কই? প্রশ্নের মুখেই যানশাসনে বড় পরীক্ষা আজ

দুর্ঘটনার পরে রাতারাতি গার্ড রেল, মুভেবল স্টপ গেট বসিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা হলেও সোমবার সবটা সামলানোর মতো পুলিশকর্মী সংশ্লিষ্ট এলাকার ট্র্যাফিক গার্ড বা থানাগুলিতে আছে তো?

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০২৩ ০৫:২৭
বিপজ্জনক: চলন্ত বাসের সামনে দিয়ে দৌড়ে রাস্তা পেরোচ্ছেন চার জন। রবিবার, ধর্মতলা।

বিপজ্জনক: চলন্ত বাসের সামনে দিয়ে দৌড়ে রাস্তা পেরোচ্ছেন চার জন। রবিবার, ধর্মতলা। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

ক্লাসের পরীক্ষা যদি শনি এবং রবিবারে হয়ে থাকে, তা হলে আজ, সোমবার অবশ্যই বড় পরীক্ষা। ডায়মন্ড হারবার রোডে ট্রাকের ধাক্কায় আট বছরের স্কুলপড়ুয়ার মৃত্যুর পরে এই পরীক্ষার মুখেই পড়তে চলেছে কলকাতা পুলিশ। বাহিনীর অন্দরেই প্রশ্ন উঠছে, দুর্ঘটনার পরে রাতারাতি গার্ড রেল, মুভেবল স্টপ গেট বসিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা হলেও সপ্তাহ শুরুর দিনে সবটা সামলানোর মতো পুলিশকর্মী সংশ্লিষ্ট এলাকার ট্র্যাফিক গার্ড বা থানাগুলিতে আছে তো?

যে পরিসংখ্যান সামনে আসছে, তা চিন্তায় ফেলেছে পুলিশেরই বড় কর্তাদের। জানা যাচ্ছে, দুর্ঘটনাস্থল-সহ প্রায় ১১ বর্গকিলোমিটার এলাকা ডায়মন্ড হারবার রোড ট্র্যাফিক গার্ডের অধীনে। তবে যত সংখ্যক পুলিশকর্মী থাকার কথা, রয়েছেন তার চেয়ে অনেক কম। সূত্রের খবর, সেখানে রয়েছেন ২৩ জন কনস্টেবল। কিন্তু থাকার কথা প্রায় ৯০ জনের। এ ছাড়া, ১২ জন ট্র্যাফিক সার্জেন্ট, ২৫ জন হোমগার্ড এবং ৪২ জন সিভিক ভলান্টিয়ার রয়েছেন। কিন্তু সব মিলিয়েও সংখ্যাটা ১০২-এর উপরে পৌঁছয়নি। অথচ থাকার কথা ২০০ জনের বেশি। এই নিয়েই ডায়মন্ড হারবার রোডের মতো ব্যস্ত এবং ঘিঞ্জি রাস্তার পাশাপাশি দেখতে হয় ৬টি পুরসভা এলাকার রাস্তা। এই ট্র্যাফিক গার্ডের এক পুলিশকর্মী বললেন, ‘‘আমাদের মোট ৩২টি বিট রয়েছে। কিন্তু সব ক’টিতে লোক দেওয়ার মতো পুলিশকর্মীই তো নেই! এ ছাড়া আছে বেহালা এলাকার বাসিন্দা ভিভিআইপি-দের যাতায়াতের রাস্তা সামলানোর দায়িত্ব। পান থেকে চুন খসলেই তখন বিক্ষোভ হয়। এ বার তো ট্র্যাফিক গার্ড জ্বালিয়ে দেওয়ার মতো চরম ঘটনা ঘটে গিয়েছে। এখন ‘ম্যানপ্যাকের’ মাধ্যমে কাজ চালাতে হচ্ছে। সব পুড়ে গিয়েছে। সোমবার থেকে কী ভাবে কাজ হবে জানি না।’’

অভিযোগ, ওই এলাকার অন্য কয়েকটি ট্র্যাফিক গার্ডেরও একই পরিস্থিতি। ২০১১ সালে কলকাতা পুলিশে যুক্ত হওয়া থানা, ট্র্যাফিক গার্ডগুলির অবস্থা আরও খারাপ। পর্যাপ্ত পুলিশকর্মী না পেয়ে তাই সিভিক ভলান্টিয়ারদের উপরে নির্ভর করতে হয় বলে দাবি। অথচ পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ তাঁদের নেই। কলকাতা হাই কোর্টও এ ব্যাপারে কড়া নির্দেশ দিয়েছে। এক পুলিশকর্মীর মন্তব্য, ‘‘এর সঙ্গেই এ বার স্কুলের সামনের নিরাপত্তার দায়িত্ব জুড়েছে। বাহিনীতে নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত তা সামলানো এক কথায় অসম্ভব ব্যাপার। কারণ, সকাল ৬টায় বেশির ভাগ স্কুল শুরু হয়। ডিউটি তখন থেকে শুরু হলে দুপুর তিনটের মধ্যেই বেশির ভাগ পুলিশকর্মীর ছুটি হয়ে যাবে। বাকি দিনটা সামলানো হবে কী করে? সিভিক ভলান্টিয়ারদের উপরেই নির্ভরতা বাড়বে। কত বাড়তি ডিউটি করানো হবে?’’ আর এক পুলিশকর্মীর বক্তব্য, ‘‘লালবাজার থেকে সিসি ক্যামেরার নিরাপত্তার কথা বলা হয়। পুলিশ কম থাকলেও নাকি ক্যামেরায় কাজ হয়ে যায়। কিন্তু ক্যামেরাও তো কাজে লাগে ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে। ঘটনা ঘটা আটকানো যাবে কী ভাবে?’’

ফলে প্রশ্ন উঠছে, সোমবার থেকে কী ভাবে যানশাসন হবে? লালবাজার সূত্রের খবর, শনিবারই শহরের সব থানা, ট্র্যাফিক গার্ড থেকে এক-দু’জন করে সিভিক ভলান্টিয়ার ও কনস্টেবল পাঠানো হয়েছিল ডায়মন্ড হারবার রোডের জন্য। যাঁরা সকাল ৬টা থেকে কাজ শুরু করেছিলেন। আজ বেশ কয়েক জন অফিসার পদমর্যাদার পুলিশকর্মীকেও পাঠানো হবে। কিন্তু এই ভাবে কত দিন? স্পষ্ট উত্তর মিলছে না পুলিশকর্তাদের থেকে। বরং পথ দুর্ঘটনা কতটা কমেছে, সেই পরিসংখ্যান তুলে ধরতেই তাঁরা ব্যস্ত।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Kolkata Traffic Police Traffic Management Kolkata Traffic Traffic Police

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy