E-Paper

দশ মাস আইসিইউ-এ, ওষুধের অপেক্ষায় একরত্তি

গত বছরের জুলাইয়ে রাজারহাটের শিবতলার বাসিন্দা সীমা মণ্ডল ও মাছ ব্যবসায়ী সুবিনয় মণ্ডলের মেয়ে আদৃতি মণ্ডলের জন্ম। সেই বছরেরই ২৬ ডিসেম্বর থেকে যার ঠিকানা পার্ক সার্কাসের একটি শিশু হাসপাতালের আইসিইউ। ভেন্টিলেশন-নির্ভর জীবন আদৃতির।

জয়তী রাহা

শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০২৫ ০৯:১৭
হাসপাতালে মায়ের সঙ্গে সেই শিশু।

হাসপাতালে মায়ের সঙ্গে সেই শিশু। —নিজস্ব চিত্র।

যেন ছোট্ট দুর্গা। বড় বড় চোখ। সেই চোখ মেলে তাকায় কখনও-সখনও। তবে, বেশির ভাগ সময়েই নিস্তেজ হয়ে থাকে। চার দিকে নলের ঘেরাটোপে শৈশব ছটফট করে হাসপাতালের আইসিইউ-এর শয্যায়। দশ মাস ধরে সে যে ‘বন্দি’ এই হাসপাতালে। কিন্তু, অচেনা মুখ দেখলে এখনও হেসে ওঠে ১৫ মাসের সেই শিশু।

গত বছরের জুলাইয়ে রাজারহাটের শিবতলার বাসিন্দা সীমা মণ্ডল ও মাছ ব্যবসায়ী সুবিনয় মণ্ডলের মেয়ে আদৃতি মণ্ডলের জন্ম। সেই বছরেরই ২৬ ডিসেম্বর থেকে যার ঠিকানা পার্ক সার্কাসের একটি শিশু হাসপাতালের আইসিইউ। ভেন্টিলেশন-নির্ভর জীবন আদৃতির।

জন্মের পরে দেড় মাস বয়সেই ধরা পড়ে, জিনঘটিত বিরল রোগ স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রফি (এসএমএ) টাইপ ওয়ানে আক্রান্ত আদৃতি। সেই রোগ নির্ণয় হতে হতেই প্রবল শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল সে। কয়েক মাসের চিকিৎসায় খানিকটা সুস্থ হতেই গত এপ্রিলে ছোট্ট দুর্বল শরীরে অ্যাডিনোভাইরাস আঘাত হানে। যার পর থেকে ফের আদৃতির জীবন ভেন্টিলেশন-নির্ভর হয়ে ঠিকানা সেই আইসিইউ।

মৃত্যুর সঙ্গে কোলের মেয়ের প্রতিনিয়ত এই পাঞ্জা কষা দেখে জেদ বেড়েছে সীমারও। দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চলছে মেয়ের শরীরে ১৬ কোটির জিন থেরাপি দেওয়ানোর। কিন্তু এই পাহাড়প্রমাণ টাকা আসবে কোথা থেকে? উত্তর জানা নেই সীমার। আছে শুধু মেয়েকে সুস্থ করার জেদ আর মানুষের প্রতি অগাধ ভরসা (যোগাযোগের নম্বর ৯৮৭৪২৪৮৪৭০)।

অগাধ ভরসা থাকলেই হয়তো ভেঙে পড়ার মতো পরিস্থিতিতেও জেদে অনড় থাকা যায়। তাই হিন্দি সিনেমার বাঙালি সুপারস্টারের কাছে মেয়ের চিকিৎসার জন্য গিয়েও খালি হাতে ফিরেছেন সীমা। বিধায়ক বা সাংসদের কাছে গিয়েও আকারে-ইঙ্গিতে শুনতে হয়েছে, “যে বাচ্চা বাঁচবেই না, তার জন্য খরচ করে কী হবে!”

এক দিকে ঘরে রয়েছে বছর বারোর মেয়ে, যাকে এখনও পর্যন্ত সুস্থ বলেই জানে পরিবার। সারা দিন একা থেকেই বেড়ে উঠছে সে। তার জন্যও মন পড়ে থাকে মায়ের। অন্য দিকে, ছোট্ট মেয়ের এই কষ্ট। হাসপাতালে থেকে রাতে ঘরে ফেরেন সীমা। দিনে ব্যবসা সামলে প্রতি সন্ধ্যায় স্বামী সুবিনয় হাসপাতালে আসেন, ফেরেন সকালে। গত ন’মাস বিনিদ্র রজনী কাটাচ্ছেন তিনি।

সকলের কাছে সাহায্যের আর্জি জানিয়ে সুবিনয় ও সীমা অনলাইনে ক্রাউড ফান্ডিংয়ে মেয়ের চিকিৎসার যাবতীয় তথ্য দিয়েছেন। কিন্তু, সেখানেও তেমন সাড়া মিলছে না। সীমা বলেন, ‘‘প্রায় ১৫ বছর আগে প্রথম সন্তান ছেলেটাকে জন্ম দিয়েও হারিয়েছি এই রোগেই। তখন কোনও চিকিৎসা ছিল না। পরে বার বার ডাক্তারদের সেই কথা জানিয়েছি। জিজ্ঞাসা করেছি, আমার সন্তানধারণে সমস্যা আছে কিনা। যা যা বলেছেন তাঁরা, সব শুনেছি। কিন্তু এ‌খন জানছি, আসল কথাই আমাকে বলা হয়নি যে, সন্তান গর্ভে থাকতেইজানা যায়, সে এই রোগে আক্রান্ত কিনা। যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে, এখন যে আছে তার চিকিৎসা করানোই আমাদের জীবনের অন্যতম লক্ষ্য। সকলের সাহায্য ছাড়া তা কোনও মতেই সম্ভব নয়।’’

আদৃতির চিকিৎসা করছেন শিশুরোগ চিকিৎসক প্রভাসপ্রসূন গিরি। তিনি বলেন, ‘‘আদৃতি এখনও ভেন্টিলেশনে রয়েছে। তবে জ্ঞান আছে। মাঝেমধ্যেই তাকায়। এসএমএ টাইপ ওয়ান আক্রান্ত বাচ্চাটির রোগের প্রভাব শরীরে দ্রুত ছড়াচ্ছে। আগেই জিন থেরাপি দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু এখনও সময় পেরিয়ে যায়নি। বাচ্চাটি যে অমানুষিক কষ্ট পাচ্ছে, তার থেকে রেহাইয়ের একমাত্র পথ জিন থেরাপি। তা যত দ্রুত দেওয়া সম্ভব, ততই ওর পক্ষে ভাল।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Medical medical treatment

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy