Advertisement
E-Paper

‘আমি নির্দোষ, আমি নির্দোষ, শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাব’

অনিন্দিতা আদালতে জানান, তিনি নির্দোষ। তাঁর ছেলের বয়স সাড়ে তিন বছর। তিনি জেলে গেলে ছেলে অনাথ হয়ে যাবে। তাই তা বিবেচনায় রাখা হোক।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৩:৩৭
দোষী: আইনজীবী রজত দে-কে (ইনসেটে) খুনের অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত স্ত্রী অনিন্দিতা পাল দে। বুধবার, বারাসত আদালত চত্বরে। ছবি: সুদীপ ঘোষ

দোষী: আইনজীবী রজত দে-কে (ইনসেটে) খুনের অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত স্ত্রী অনিন্দিতা পাল দে। বুধবার, বারাসত আদালত চত্বরে। ছবি: সুদীপ ঘোষ

আইনজীবী রজত দে-কে খুনের ঘটনায় তাঁর আইনজীবী-স্ত্রী অনিন্দিতা পাল দে-কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিল বারাসত আদালত। গত সোমবার এই মামলায় অনিন্দিতাকে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন বিচারক সুজিতকুমার ঝা।

বুধবার বারাসতের তৃতীয় ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের ওই বিচারক অনিন্দিতাকে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ (খুন) ধারায় যাবজ্জীবন কারাবাস ও দশ হাজার টাকা জরিমানা (অনাদায়ে আরও ছ’মাস জেল) এবং ২০১ (প্রমাণ লোপাট) ধারায় এক বছরের কারাদণ্ড এবং দু’হাজার টাকা জরিমানার (অনাদায়ে আরও তিন মাস জেল) সাজা শোনান। দু’টি সাজাই একসঙ্গে চলবে।

এ দিন দুপুরে আদালতে তোলা হলে অনিন্দিতাকে বিচারক জানান, তাঁর বিরুদ্ধে খুন, তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগ রয়েছে। শাস্তি কী হতে পারে, তা-ও জানান বিচারক। এর পরে অনিন্দিতার বক্তব্য জানতে চায় আদালত। অনিন্দিতা আদালতে জানান, তিনি নির্দোষ। তাঁর ছেলের বয়স সাড়ে তিন বছর। তিনি জেলে গেলে ছেলে অনাথ হয়ে যাবে। তাই তা বিবেচনায় রাখা হোক।

বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি বিভাস চট্টোপাধ্যায় আদালতে জানান, রজত খুন হওয়ায় একটি শিশু তার বাবাকে হারিয়েছে। বাবা-মা তাঁদের সন্তানকে হারিয়েছেন। এক বোন তাঁর দাদাকে হারিয়েছেন। এটাও বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘‘এই খুন সমাজের কাছে একটা ধাক্কা। দাম্পত্য হচ্ছে বিশ্বাসের আর এক নাম। এ রকম ঘটনা সমাজে কী প্রভাব ফেলবে? মানুষের প্রতি মানুষের বিশ্বাসটাই নষ্ট হয়ে যাবে।’’ সেই কারণে সর্বোচ্চ শাস্তির আবেদন জানান তিনি।

আরও পড়ুন: সিগারেট সূত্রে রহস্যভেদ, সালাউদ্দিন খুনে বান্ধবী ও তাঁর প্রেমিকের যাবজ্জীবন

অনিন্দিতার আইনজীবী চন্দ্রশেখর বাগ আদালতে জানান, পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তাঁর মক্কেলকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা দেওয়া হচ্ছে। অনিন্দিতার সাড়ে তিন বছরের একটি সন্তান রয়েছে। সে বিষয়টিও আদালত বিবেচনা করুক।

সাজা ঘোষণা করার সময়ে বিচারক সুজিতকুমার ঝাকে বলতে শোনা যায়, ‘‘পুরো মামলাটাই দাঁড়িয়ে রয়েছে পারিপার্শ্বিক তথ্য-প্রমাণের উপরে। অভিযুক্ত শিক্ষিত। তাঁর সংশোধনের সুযোগ পাওয়া উচিত। সেই কারণে সর্বোচ্চ শাস্তি না দিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হল।’’ পরে আদালতের বাইরে বেরিয়ে বিভাসবাবু বলেন, ‘‘এই ধরনের ঘটনা বিরলতম। তবে এই রায় রাজ্য তথা দেশের বিচার ব্যবস্থায় একটি মাইলফলক হয়ে রইল।’’

এ দিন এজলাসে অসংখ্য আইনজীবী ভিড় করেছিলেন। সোমবার রায় ঘোষণার পরে অনিন্দিতাকে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু এ দিন শান্ত ভাবে সাজার ঘোষণা শুনেছেন তিনি। অনিন্দিতাকে এজলাস থেকে বার করে নিয়ে যাওয়ার পথে আইনজীবীদের একাংশ ‘ফাঁসি চাই’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। সে সময়ে অনিন্দিতাকে চিৎকার করে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমি নির্দোষ। আমি নির্দোষ। শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাব।’’

রজতের বাবা সমীরকুমার দে বলেন, ‘‘আমরা সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেছিলাম। আদালত যে রায় দিয়েছে, তাকে সম্মান জানাই। ঘটনার পরে তদন্ত গড়িমসি করে চলছিল। সেখান থেকে বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি যে ভাবে মামলাকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন, তাতে তাঁর প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।’’

Rajat Dey Murder Anindita Pal Dey Barasat Court
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy