E-Paper

প্রয়াত ইতিহাসবিদ রজতকান্ত রায়

২০০৬ থেকে বিশ্বভারতীর উপাচার্য হিসেবে তাঁর কার্যকাল পূর্ণ করেন রজতকান্ত। তখন শিক্ষাঙ্গনের ভাস্কর্য, স্থাপত্য, রবীন্দ্রস্মৃতি জড়িত ইতিহাস রক্ষার নানা কাজ শুরু হয়। প্রেসিডেন্সিতে শেষ বার যাওয়া বছর দেড়েক আগে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০২৫ ০৮:২৬
রজতকান্ত রায়।

রজতকান্ত রায়। —ফাইল চিত্র।

প্রেসিডেন্সি কলেজের ক্লাসঘরে সবার মধ‍্যে রজতকান্ত রায়ের পড়ানোর স্বাদ পেতে বসেছেন, তখন রাজ‍্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধী। প্রেসিডেন্সির শিক্ষককুলে তিনি ছিলেন সেই গোত্রের প্রতিভূ, যাঁর পড়ানো শুনতে কাছের দূরের ভিন্ ক‍্যাম্পাস থেকে ভিড় করতেন বিচিত্র বিষয়ের শিক্ষার্থীরা। বাঙালির ইতিহাসচর্চায় মৌলিকতার স্বাক্ষর মাখা সেই বিদগ্ধ পন্ডিতের মেধা ও মননের দীপ্তি ফুটে উঠত রজতকান্তের সুদর্শন ধারালো চোখেমুখেও।

সেই শিক্ষক তথা ইতিহাসবিদ বুধবার বিকেলে প্রয়াত হয়েছেন। বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। নিউ টাউনের বাড়িতে বিকেলে ঘুমের মধ্যেই স‍্যরের চিরঘুমে মগ্ন হওয়ার কথা বললেন রজতজায়া নুপূর চৌধুরী। রজতকান্তের স্ত্রী, মেয়েরা রয়েছেন।কলকাতার শিক্ষিত বাঙালি পরিবারের সাংস্কৃতিক মূল‍্যবোধের স্বাক্ষর বহন করেছেন বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট স্কুল ও প্রেসিডেন্সি কলেজের এই প্রাক্তনী। বাবা কুমুদকান্ত রায় সাবেক আইসিএস অফিসার। কেমব্রিজে অনিল শীলের তত্ত্বাবধানে রজতকান্ত পিএইচডি সম্পন্ন করেন।

“ইতিহাসবিদ হিসেবে কেমব্রিজ ঘরানার ধারা মেনে চললেও স‍্যরের নিজস্ব সৃষ্টিশীল দৃষ্টিকোণের ঝলক টের পাওয়া যেত বারে বারেই”, বলছিলেন পুরনো ছাত্র কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কিংশুক চট্টোপাধ্যায়। শিক্ষক এবং পণ্ডিত দু’জন, রজতকান্তকেই ভুলতে পারেন না তাঁর ছাত্রেরা। কিংশুকের কথায়, “স‍্যরের কাছে ১৮৫৭-র মহাবিদ্রোহ পড়ার সময়ে ঘটনাবলির নেপথ‍্যে অর্থনৈতিক তাড়নার দিকগুলি ধরিয়ে দেওয়ার ঘোর থেকে আজও বেরোতে পারিনি! কট্টর মার্কসবাদী না হয়েও মার্কসীয় ভাবনার ধাঁচ তিনি মানতেন। আবার ভারতীয়ত্বের বিশ্লেষণে এক ধরনের যাপিত জীবন নির্ভর অনুভবের তাৎপর্যেও স‍্যর বিশ্বাসী ছিলেন।” কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় প্রধান অমিত দে-র চোখে অনুজদের প্রতি রজতকান্তের অকুণ্ঠ প্রশ্রয়ও অবিস্মরণীয়। তাঁর কথায়, “কৃষি-রাজনীতির ইতিহাসবিদ হিসেবে লেখালিখি শুরু করেও রজতকান্ত ক্রমশ সংস্কৃতি, মননের ইতিহাসকার হয়ে ওঠেন।”

২০০৬ থেকে বিশ্বভারতীর উপাচার্য হিসেবে তাঁর কার্যকাল পূর্ণ করেন রজতকান্ত। তখন শিক্ষাঙ্গনের ভাস্কর্য, স্থাপত্য, রবীন্দ্রস্মৃতি জড়িত ইতিহাস রক্ষার নানা কাজ শুরু হয়। প্রেসিডেন্সিতে শেষ বার যাওয়া বছর দেড়েক আগে। প্রাক্তনী সমিতির অতুলচন্দ্র গুপ্ত পুরস্কার নেওয়ার সময়ে রজতকান্তকে ঘিরে চাঁদের হাট বসেছিল। নুপূর বলছিলেন, শেষ দিনেও দেশ পত্রিকায় বেরোনো তাঁর রবীন্দ্র জীবন ও সাহিত‍্য বিষয়ক ধারাবাহিক ‘তিমির অবগুণ্ঠনে’ বইয়ের কাজে মেতে ছিলেন। তবে সে বইয়ের ভূমিকা লেখা শেষ করার আগেই রজতকান্ত চলে গেলেন। বাঙালির ইতিহাসচর্চার জগতে যা আক্ষরিক অর্থেই এক ইন্দ্রপতন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Presidency University Historian

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy