তাঁকে নিয়ে বিব্রত শাসক দলের অনুগামী কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (ওয়েবকুপা) সদস্যেরাও। কিন্তু, কলেজ স্ট্রিটের সিটি কলেজ অব কমার্স অ্যান্ড বিজ়নেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের অঙ্কের শিক্ষক রাজদীপ মাইতির বিরুদ্ধে সব জেনেও এখনও পদক্ষেপ করতে পারেননি তাঁরা। ওয়েবকুপার শীর্ষ নেতৃত্ব সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার বিকেলে ডেকে পাঠানো হয়েছিল রাজদীপকে। কিন্তু তিনি যাননি। সংশ্লিষ্ট জেলা কমিটিকে বিষয়টি জানিয়ে রাজদীপকে কারণ দর্শানোর চিঠি ধরানোর কথাও ওয়েবকুপা ভাবছে বলে সূত্রের খবর।
রাজদীপ এ দিন বলেন, ‘‘আমার আসলে বামপন্থীদের সহ্য হয় না।’’ ওয়েবকুপার নেতৃত্বের তরফে তাঁর সঙ্গে কথা বলা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে জোর গলায় ‘না’ বলেছেন ওই কলেজ শিক্ষক। রাজদীপের ফেসবুক প্রোফাইলে এ দিনও প্রকাশ্য পোস্টে বামপন্থীদের নিশানা করে অপশব্দ লেখা হয়েছে। একই প্রোফাইলে রাজ্য সরকারের স্নাতকে ভর্তির কেন্দ্রীয় পোর্টাল বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের নানা প্রশস্তিগাথাও রয়েছে। এক জন কলেজ শিক্ষক প্রকাশ্যে এমন অপভাষা ব্যবহার করলে বা মেয়েদের নিশানা করে কুৎসিততম কথা বললে তাঁর ছাত্রছাত্রী বা বৃহত্তর সমাজের কাছে কী বার্তা যায়, তা নিয়ে অস্বস্তিতে অনেক শিক্ষক, অধ্যাপকই। রাজ্যের শাসক দলের সমর্থক শিক্ষক, অধ্যাপকদের একাংশ এ দিন রাজদীপকে ফোনে বোঝানোর চেষ্টা করেন, কিছু শব্দের প্রয়োগ কলেজের শিক্ষকোচিত নয়।
সূত্রের খবর, রাজদীপ ওয়েবকুপার নেতৃত্বকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, প্রতিবাদ আন্দোলনের নামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অপমানে তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তাঁকে রাজনৈতিক ভাবে শিক্ষকসুলভ ভঙ্গিতেই রাজনৈতিক তর্ক করার কথা বলা হয়। তবে ওয়েবকুপার একাংশ চান, রাজদীপ সমাজমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে ক্ষমা চান। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, তিনি ওই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সংগঠনের একেবারে সাধারণ সদস্য। তাই তাঁর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা মুশকিল। রাজদীপ নিজেও দাবি করেছেন, তিনি সব কিছুই ব্যক্তিগত ভাবে করেছেন।
তবে একাধিক মানবাধিকার সংগঠন বা নারী অধিকার রক্ষা মঞ্চ মনে করে, রাজদীপ তাঁর বিরোধী দলের নেতা, সমর্থকদের যে ভাষায় আক্রমণ করেছেন, তাতে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ঘটনার পরে গঠিত রাতদখল ঐক্য মঞ্চও রাজদীপের কলেজের অধ্যক্ষকে চিঠি দিয়েছে। তাতে এই ধরনের নারী বিদ্বেষমূলক মন্তব্যে কলেজের অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটি বা পরিচালন সমিতির ভূমিকা কী, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
সিটি কলেজ অব কমার্স অ্যান্ড বিজ়নেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা শিবানী বাগচী এ দিন বলেন, ‘‘রাজদীপ আজ (বৃহস্পতিবার) কলেজে আসেননি। তাই এ বিষয়ে কারও সঙ্গে কথা হয়নি।’’ বিষয়টি নিয়ে নানা মহলে চর্চা চললেও কলকাতা পুলিশের তরফে এখনও কোনও সাড়া মেলেনি।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)