Advertisement
E-Paper

দিনেদুপুরে তাণ্ডব মহিলা কামরায়

বিকেল ৩টে ৪০-এর আপ শিয়ালদহ লোকাল। ডায়মন্ড হারবার থেকে ছেড়ে দু’টো স্টেশন পেরিয়ে দেউলা। স্টেশন ছাড়তেই চলন্ত ট্রেনের মহিলা কামরায় আচমকা দেখা গেল দুই যুবককে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৬ ০১:৪০

বিকেল ৩টে ৪০-এর আপ শিয়ালদহ লোকাল। ডায়মন্ড হারবার থেকে ছেড়ে দু’টো স্টেশন পেরিয়ে দেউলা। স্টেশন ছাড়তেই চলন্ত ট্রেনের মহিলা কামরায় আচমকা দেখা গেল দুই যুবককে। শুধু তা-ই নয়, চলল মহিলাদের গালে চড়-থাপ্পড় মারা, কানের দুলে টান, ব্যাগ-মোবাইল টানা-হ্যাঁচড়া, ছিনতাই। প্রতিবাদ করতেই উঁচিয়ে এল আগ্নেয়াস্ত্র। মহিলারা সিঁটিয়ে যেতেই পরের স্টেশন সংগ্রামপুরে লাফিয়ে নেমে ধাঁ দু’জনেই।

শুক্রবার বিকেলের এই ঘটনা নজরদারি-নিরাপত্তার বিষয়টিকেই বড়সড় প্রশ্নের মুকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, একে মহিলা কামরায় পুরুষ উঠে আসা, তাতে এ ভাবে অকুতোভয়ে মারধর-ছিনতাই করে নির্বিবাদে নেমে পড়া— এমনটা সম্ভব হল কী করে? রেল সুপার অবশ্য নিজেই স্বীকার করেছেন দুপুর-বিকেলের ওই সময়ে নজরদারি শিথিল থাকে। এর পিছনে তাঁর যুক্তি লোকবলের অভাব।

কসবার বাসিন্দা অপর্ণা সিংহ মাস দুয়েক আগেই যোগ দিয়েছেন ডায়মন্ড হারবার মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ে। যাদবপুরের বাসিন্দা ডালিয়া ঘোষ পড়ান উস্তির সরাচি হাইস্কুলে। ডালিয়াদেবী বলেন, ‘‘হঠাৎ কামরায় চিৎকার-চেঁচামেচি শুনলাম। দেখি এক মহিলাকে দু’টো অল্পবয়সী ছেলে মারধর করছে। আর কিছু একটা দিয়ে দিতে বলছে। তখনও বুঝিনি ওরা ছিনতাইবাজ। আমরা প্রতিবাদ করতেই ওরা ধেয়ে এল আমাদের দিকে। যে ভাবে বন্দুক তাক করেছিল, তাতে একটু ঘাবড়েই গিয়েছিলাম।’’ ধস্তাধস্তিতে হাতে সামান্য চোট পান ডালিয়াদেবী। আর অপর্ণার কথায়, ‘‘প্রতিদিন এই ট্রেনে যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু এমন ঘটনা তো রীতিমতো ভয় ধরিয়ে দিল।’’ নিত্যযাত্রীদের অনেকেই অবশ্য তাঁকে সাহস জোগাচ্ছেন। বলছেন, এমন ঘটনা তো রোজ ঘটে না।

সংগ্রামপুর স্টেশনে ট্রেন থামার পরে ডালিয়া-অপর্ণাদের সঙ্গে হইহই করে নেমে পড়েন বাকি সহযাত্রীরাও। দুই যুবককে খুঁজতে নেমে পড়ে জনতা। ভিড়ের মধ্যে থেকে ধরেও ফেলে একজনকে। মহিলা কামরার যাত্রীরা শনাক্ত করেন তাকে। হাঁসু গায়েন নামে ওই যুবককে পরে গ্রেফতার করেছে রেল পুলিশ। রেল পুলিশের এক আধিকারিক জানান, ধৃতকে জেরা করে জানা গিয়েছে, অন্য দুষ্কৃতীর নাম টুটু লস্কর। বাড়ি সংগ্রামপুরেই। টুটুর কাছেই আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। ছিনতাই করা জিনিসপত্রও আছে তার কাছে। ওই যুবকের খোঁজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।

মহিলারা জানিয়েছেন, এ দিন মহিলা কামরায় কোনও পুলিশকর্মী ছিলেন না। নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, এ দিন সংগ্রামপুরের স্টেশন ম্যানেজারও প্রথমটায় অভিযোগ নিতে চাননি। তিনি জানিয়ে দেন, ডায়মন্ড হারবার জিআরপি-র কাছে অভিযোগ করতে হবে। পরে অবশ্য ডালিয়া-অপর্ণারা অভিযোগ দায়ের করেছেন স্টেশন ম্যানেজারের কাছেই।

কিন্তু মহিলা কামরায় পুলিশ ছিল না কেন? রেল পুলিশ সুপার দেবাশিস বেজ বলেন, ‘‘সকাল বা সূর্যাস্তের পর থেকে মহিলা কামরায় পুলিশ থাকে। কিন্তু বাকি সময়টায় কোনও পুলিশ থাকে না। এতগুলো ট্রেনে সর্বক্ষণ নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয়। অত লোক নেই আমাদের।’’

সে ক্ষেত্রে রেল সুপার নিজেই কার্যত মেনে নিচ্ছেন, দুপুর-বিকেলে মহিলা কামরায় শিথিল থাকে নজরদারি।

দুষ্কৃতীরা কি তা জেনেই এসেছিল?

উত্তর মেলেনি।

Rampage women compartment
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy