দুর্ঘটনার পরে সেই গাড়ি। সোমবার। — নিজস্ব চিত্র
চিড়িয়াখানা ঘোরা হয়ে গিয়েছিল। পরের গন্তব্য ছিল ভিক্টোরিয়া। মাঝপথে যে অপেক্ষা করেছিল মৃত্যু, টের পায়নি ভাঙড়ের মথুরাপুর থেকে কলকাতা ঘুরতে আসা দলটি। আচমকাই ঘটে গেল দুর্ঘটনা। শহরে বেপরোয়া গাড়ির বলি হল তিনটি প্রাণ। জখম হয়েছেন ১৮ জন। পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার দুপুর পৌনে দু’টো নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে এ জে সি বসু রোড এবং বেলভেডিয়ার রোডের মোড়ে।
পুলিশ সূত্রে খবর, পিটিএস থেকে দ্বিতীয় হুগলি সেতুর দিকে দ্রুত গতিতে আসছিল ওই গাড়িটি। রাস্তার মোড়ে সিগন্যাল হলুদ থাকলেও গতি কমাননি চালক। বেলভেডিয়ার রোড থেকে দ্বিতীয় হুগলি সেতু যাওয়ার বাঁ দিকের রাস্তা সব সময়েই খোলা থাকে। সেখান দিয়েই কয়েকটি মোটরবাইক যখন দ্বিতীয় হুগলি সেতুর দিকে সবে মাত্র ঘুরেছে, তখনই সোজা এসে ধাক্কা মারে গাড়িটি। সে সময়ে রেলিং ঘেঁষে ফুটপাথে দাঁড়িয়ে ছিলেন ওঁরা। রাস্তা পেরোবেন বলে সিগন্যাল সবুজ হওয়ার অপেক্ষা করছিলেন। হঠাৎই পূর্ব দিক থেকে তীব্র গতিতে ধেয়ে আসে গাড়িটি। রাস্তার রেলিং ভেঙে তাঁদের গায়ের উপরে উঠে আসে। গতি সামলাতে না পেরে গাড়ির সামনের অংশে তুলে নেয় কয়েক জনকে। মুহূর্তেই আবার তাঁরা ছিটকে পড়েন রাস্তায়। কয়েক জন শিশুকে চাকায় ঘষটাতে ঘষটাতে আছড়ে ফেলে ফুটপাথের পাশে। ভিক্টোরিয়া দেখা দূরের কথা, তখন রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে কাতরাচ্ছেন প্রায় ২১ জন। রাস্তার রেলিং ভেঙে চাপা পড়েন শিশু ও মহিলা-সহ আরও কয়েক জন। পুলিশ দুর্ঘটনাগ্রস্তদের এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই দু’জনের মৃত্যু হয়। হাসপাতালে মারা যান আরও এক জন। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম সুশান্ত মণ্ডল (৫২), হালিমা খাতুন (১২) এবং রাজীব রায় (৩৫)। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এই দলের আরও তিন জন। রেড রোড-কাণ্ডের পরে আবার এমন ভয়াবহ একটি ঘটনা ঘটায় ফের প্রশ্নের মুখে শহরের পথ নিরাপত্তা।
ঘটনার পরে সেখানে গিয়ে দেখা গেল, গাড়ির ভাঙা অংশ ছড়িয়ে রয়েছে গোটা ফুটপাথ জুড়েই। আশপাশে চাপ চাপ রক্তের দাগ। সেই দাগ মুছতে রাস্তায় বালি ছড়িয়েছে পুলিশ। আর তার পাশেই পড়ে রয়েছে বেশ কয়েকটি জুতো। পুলিশ জানায়, গাড়ির এয়ার ব্যাগ বেরিয়ে যাওয়ায় জখম হয়েছেন চালক সরোজ বারিকও। গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তিনিও। আলিপুর পার্ক রোডের বাসিন্দা ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে খুনের মামলা শুরু করেছে পুলিশ।
লালবাজার সূত্রের খবর, চালক মত্ত অবস্থায় ছিলেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাঁর রক্তের নমুনা নেওয়া হয়েছে। ঘাতক গাড়িটি একটি চা-সংস্থার মালিকের বলে তদন্তে জেনেছে পুলিশ।
খবর পাওয়ার পরেই হাসপাতালে আসেন এসএসকেএমের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান অরূপ বিশ্বাস, কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। অরূপবাবু বলেন, ‘‘কী ভাবে দুর্ঘটনা ঘটেছে, তার তদন্ত করছে পুলিশ। কিন্তু সব থেকে আগে আহতদের সুস্থ করে তোলাই লক্ষ্য।’’ ফিরহাদ হাকিমও বলেন, ‘‘এই ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। গাড়িটি যে যে রাস্তা দিয়ে এসেছে, সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy