জেনারেটরের ক্ষমতা ১২৫ কেভি। এক দিন তার ভাড়া ২০ হাজার টাকা। আর এক দিন দ্বিগুণ, ৪০ হাজার টাকা। আর সেই বিল অনায়াসে পাশও হয়ে গিয়েছে খোদ কলকাতা পুরসভায়।
এক কাপ চায়ের দাম ধরা হয়েছে ১৫ টাকা। এমন ৫ হাজার কাপ চায়ের জন্য ৭৫ হাজার টাকা খরচ করেছে পুরসভা। আর একটি টিউবলাইটের দৈনিক ভাড়া ধরা হয়েছে ২০০ টাকা। তা-ও পাশ হয়ে গিয়েছে পুরসভার ভাঁড়ার থেকে। বছরভর পুরসভার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জেনারেটর, টিউবলাইট থেকে চা সরবরাহ করেছে একাধিক ডেকরেটর সংস্থা। তাদের বিল মেটানোর নথি অডিট করতে গিয়ে এমনই সব ‘তথ্য’ ধরা পড়েছে কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (ক্যাগ)-এর কাছে। পুরসভার নিজস্ব অডিট
সংস্থা সূত্রের খবর, ক্যাগের রেসিডেন্ট অডিট শাখার ‘অবজারভেশন’ চিঠি পেয়ে রীতিমতো অস্বস্তিতে পুর প্রশাসন। পুরো ঘটনা শুনে অবাক মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ও। তাঁর মন্তব্য, ‘‘এমনটা তো হওয়া উচিত নয়।’’ এ বিষয়ে তিনি খোঁজখবর নেবেন বলে মঙ্গলবার জানান।
পুরসভা সূত্রের খবর, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য পুর সচিবালয়ের দফতরের মাধ্যমে খরচের হিসেব নিয়ে অডিট করে রেসিডেন্ট অডিট শাখা। গত তিন বছরে ওই দফতরের মাধ্যমে যথাক্রমে ২ কোটি ৭৭ লক্ষ, ৪ কোটি ৭ লক্ষ এবং ৪ কোটি ২০ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। সেই খরচের মধ্যে ২৭টি ভাউচার পরীক্ষা করে দেখেছে ক্যাগ। সেখানেই উঠে এসেছে, শুধু জেনারেটরই নয়, চা-বিস্কুটের ক্ষেত্রেও বাজারদরের চেয়ে বেশি দরে দেওয়া বিল অনায়াসে পাশ হয়ে গিয়েছে। ক্যাগের অডিটে বলা হয়েছে, ভাউচার পরীক্ষা করেই বোঝা গিয়েছে পুর-আইনের তোয়াক্কা না করেই ওই সব খরচ করা হয়েছে।
ক্যাগের দেওয়া অবজারভেশনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৫-র ৯ মে ১২৫ কেভি ক্ষমতাসম্পন্ন একটি জেনারেটরের ভাড়া (জ্বালানি-সহ) দেওয়া হয়েছে দৈনিক ২০ হাজার টাকা। ৯ তারিখ ওই রকম ৫টি জেনারেটর নিয়েছিল পুরসভা। ২০১৬ সালের ৮ মে একই ক্ষমতাসম্পন্ন জেনারেটরের (জ্বালানি-সহ) ভাড়া ছিল দৈনিক ৪০ হাজার টাকা। ওই বছরেরই জানুয়ারিতে সেটির ভাড়া দেওয়া হয়েছিল ১৮ হাজার টাকা। এই তিন ক্ষেত্রে একটিই সংস্থা জেনারেটর ভাড়া দিয়েছিল। একই শর্তে অন্য আর এক সংস্থা ২০১৬-র ১৭ জুলাই জেনারেটর ভাড়া দিয়েছে ১১ হাজার টাকায়। ভাড়ার এই তারতম্য তুলে ধরে ক্যাগ জানিয়েছে, এ সব কিছুই পুর আইন মেনে হয়নি।
টেন্ডার করা হয়েছিল কি?
তারও উত্তর পাওয়া গিয়েছে ক্যাগের অবজারভেশনে। সেখানে বলা হয়েছে, পুরসভার নিয়মানুযায়ী ৫ লক্ষ টাকার উপরে কোনও বরাত দিতে হলে টেন্ডার ডেকে করতে হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে নিয়ম মানেনি পুর প্রশাসন। ৫ লক্ষ টাকার নীচে তো নয়ই, একটি বিলেই প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার বরাত দেওয়া হয়েছে টেন্ডার না ডেকেই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তিনটি করে কোটেশন নিয়ে কাজের বরাত দিয়েছে পুর প্রশাসন।
এই সব জিনিস সরবরাহের ক্ষেত্রে আরও একটি বিষয় নজরে এনেছে ক্যাগ। তা হল, মাল সরবরাহের জন্য গাড়ি ভাড়াও দেওয়া হয়েছে বরাত পাওয়া সংস্থাকে। অবজারভেশনে বলা হয়েছে, মালপত্র আনা-নেওয়ার জন্য ২ লক্ষ ১৬ হাজার টাকা ভাড়া দিয়েছে পুর প্রশাসন। যা কোটেশনের শর্তে উল্লেখ করা ছিল না।
কিন্তু ওই বিল পাশ হল কী ভাবে? এ ব্যাপারে পুরসভার কেউ মুখ খুলতে চাননি। তবে ক্যাগের অবজারভেশনের পরে বিষয়টি যে আর চেপে রাখা যাবে না, তা বুঝেছেন পুরকর্তারা। অর্থ দফতরের এক আধিকারিক জানান, ভবিষ্যতে এমন ভুল যাতে আর না হয়, তা দেখা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy