Advertisement
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

নিরাপত্তার ঘেরাটোপে প্রজাতন্ত্র দিবসের মহড়া রেড রোডে

আকাশবাণী ভবনের দিক থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছিল ছাই রঙের পুঁচকে গাড়িটা। পুলিশি ঘেরাটোপের ফাঁক গলে। সঙ্গে সঙ্গে রে রে করে ছুটে যান পুলিশ অফিসার ও স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্রধারী কমব্যাট ব্যাটেলিয়নের সদস্যরা। শনিবার সকাল তখন পৌনে সাতটা। দু’শো মিটার দূরেই রেড রোডে প্রজাতন্ত্র দিবসে সেনাবাহিনীর কুচকাওয়াজের মহড়া ততক্ষণে শুরু হয়েছে।

নিরাপত্তার ঘেরাটোপে কুচকাওয়াজ। ছবি: সুমন বল্লভ।

নিরাপত্তার ঘেরাটোপে কুচকাওয়াজ। ছবি: সুমন বল্লভ।

অভীক বন্দ্যোপাধ্যায় ও শিবাজী দে সরকার
শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৬ ১২:০৫
Share: Save:

আকাশবাণী ভবনের দিক থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছিল ছাই রঙের পুঁচকে গাড়িটা। পুলিশি ঘেরাটোপের ফাঁক গলে। সঙ্গে সঙ্গে রে রে করে ছুটে যান পুলিশ অফিসার ও স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্রধারী কমব্যাট ব্যাটেলিয়নের সদস্যরা।

শনিবার সকাল তখন পৌনে সাতটা। দু’শো মিটার দূরেই রেড রোডে প্রজাতন্ত্র দিবসে সেনাবাহিনীর কুচকাওয়াজের মহড়া ততক্ষণে শুরু হয়েছে।

তার ছবি তুলতে ক্যাসুরিনা অ্যাভিনিউয়ে পুলিশের রাখা বাঁশ ও কাঠের ব্যারিকেডে উঠে মোবাইলে ছবি তুলছিলেন জনা কয়েক প্রাতঃভ্রমণকারী। পুলিশ প্রথমে বারণ করে। তার পরেও কথা না শোনায় জোর করে নামিয়ে দেওয়া হয় তাঁদের।

এই সব দেখেশুনে পথচারী এক প্রবীণের মন্তব্য, ‘‘এই তৎপরতা আগে দেখালে সেনার অফিসারকে বেঘোরে প্রাণ দিতে হত না।’’

গত ১৩ জানুয়ারি সকালে সোহরাব পরিবারের বেপরোয়া গাড়ি পুলিশি ঘেরাটোপ ভেঙে কুচকাওয়াজের মহড়া চলাকালীন রেড রোডে ঢুকে বায়ুসেনার কর্পোরাল অভিমন্যু গৌড়কে পিষে দেয়। ওই ঘটনাই এক লহমায় সেনা কুচকাওয়াজের জন্য বরাদ্দ পুলিশি নিরাপত্তা, সতর্কতা ও তৎপরতা বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েক গুণ। যা দেখা গেল এ দিন রেড রোডের চারপাশে, গোটা ময়দান তল্লাটে।

আরও খবর:
অডি-চালক সাম্বিয়াই, দাবি ‘নিখোঁজ’ শানুর পরিবারের
সুবিচার পাবেন অভিমন্যু, প্রত্যয়ী সেনা

গত বুধবার সকালের ঘাতক গাড়ি পুলিশের তিনটি ব্যারিকেড ভেঙে দিয়েছিল। ওই ব্যারিকেড করা হয়েছিল গার্ডরেল দিয়ে। আর এ দিন রেড রোডের চতুর্দিকে দেখা গেল ত্রিস্তরীয় ব্যারিকেড। প্রথমে গার্ডরেল, তার পর কাঠ ও বাঁশ দিয়ে তৈরি ‘সিজার ব্যারিকেড’ এবং তার পরে পুলিশের চার-পাঁচটি করে গাড়ি আড়াআড়ি রাখা। যাতে কোনও গাড়ির পক্ষে ব্যারিকেড ভাঙা সম্ভব না হয়। মহড়া শুরু হওয়ার দু’ঘণ্টা আগে, ভোর সাড়ে চারটে থেকে ওই সব ব্যারিকেড তৈরি করেছিল পুলিশ।

জংলা পোশাক পরা, কমব্যাট ব্যাটেলিয়নের ৩৪ জন পুলিশকে মোতায়েন করা হয়েছিল। যাঁরা প্রত্যেকেই সমান্ডো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। সবারই হাতিয়ার স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র ইনস্যাস রাইফেল। এ ছাড়াও মেশিন কার্বাইন, সেল্ফ লোডেড রাইফেল নিয়ে ছিলেন আরও শ’দেড়েক পুলিশ। পিস্তল নিয়ে, লাঠি হাতে এবং খালি হাতেও ছিলেন আরও বহু পুলিশ। সব মিলিয়ে প্রায় পাঁচশো পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল বলে লালবাজার সূত্রের খবর।

কুচকাওয়াজের মহড়ার জায়গা, রেড রোডের চার পাশের গোটা তল্লাটকে ৩০টি পয়েন্টে ভাগ করা হয়েছিল এ দিন। জনা দশেক ইনস্পেক্টরের দায়িত্বে। তাঁদের উপরে তিন জন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার। আবার তাঁদেরও উপরে ডিসি সাউথ মুরলীধর শর্মা, ডিসি ট্রাফিক সলোমন নেসাকুমার এবং প্রথম, চতুর্থ ও পঞ্চম ব্যাটেলিয়ন আর কমব্যাট ব্যাটেলিয়নের ডিসি-রা। সশস্ত্র পুলিশের যুগ্ম কমিশনার সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন সামগ্রিক তত্ত্বাবধানে।

মহড়া শুরু আগে তন্ন তন্ন করে পুরো রেড রোড তল্লাশি চালানো হয়। পুরো রেড রোড ও লাগোয়া সব তল্লাটের ভিডিওগ্রাফিও করে রাখা হয়েছে। রেড রোডের পাশে ডাফরিন রোড ছাড়া আশপাশের রাস্তাগুলিতে সাধারণ গাড়ির গতি কমাতে ব্যবস্থা নিয়েছিল ট্রাফিক পুলিশ। সেই ভাবেই গার্ডরেল বসানো হয়েছিল আঁকাবাঁকা করে। ডাফরিন রোডের গাড়িগুলিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয় আউটট্রাম রোডের দিকে। এক পুলিশকর্মী বলেন, ‘‘ভোর তিনটে থেকে ছোটাছুটি চলছে। ভালয় ভালয় মিটলে বাঁচা যায়।’’

এর আগে ১৩ তারিখ-সহ কুচকাওয়াজের মহড়া হয়েছে ন’দিন। ৩০ ডিসেম্বর থেকে। ওই ন’দিন নিরাপত্তার দায়িত্বে খাতায়কলমে ছিলেন এক জন ডেপুটি কমিশনার। কিন্তু বাস্তবে, রাস্তায় নেমে নিরাপত্তা দেখভাল করেন দু’জন ইন্সপেক্টর। রেড রোডে আসা যাওয়ার বিভিন্ন অংশকে ন’টি ভাগে ভাগ করা ছিল। প্রতিটির দায়িত্বে ছিলেন এক জন সাব-ইনস্পেক্টর বা সার্জেন্ট। সঙ্গে বন্দুকধারী দু’জন পুলিশ।

এমন নিরাপত্তার বহর চলে আসছিল সেই আশির দশক থেকে। লালবাজারের কর্তারা নিজে থেকে তাতে বদল আনার কথা ভাবেননি। এমনকী, আমেরিকান সেন্টারের সামনে জঙ্গি হামলার পরেও নয়। ২০০২-এর ২২ জানুয়ারির সেই সকালেও কিন্তু রেড রোডে সেনা-কুচকাওয়াজের মহড়া চলছিল।

এ দিন রেড রোডে সকাল সাড়ে ছ’টায় শুরু ফোর্ট উইলিয়ামের দক্ষিণ দিক থেকে শুরু হয় প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজের মহড়া। শেষ হয় সকাল সাতটায়। এর পর আরও চার দিন মহড়া। ১৮, ২০, ২২ ও ২৪ তারিখ। লালবাজারের কর্তারা জানাচ্ছেন, ওই চার দিনও থাকবে ব্যাপক পুলিশি বন্দোবস্ত।

অন্য বিষয়গুলি:

red road republic day parade abhimanyu gaud
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy