Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
bagjola canal

Waterlogged: খালধারে অপরিকল্পিত ভাবে বহুতল নির্মাণেই বিপর্যয়, ফুঁসছেন বাসিন্দারা

এলাকাবাসীর অভিযোগ, “খাল সংস্কারের কথা উঠলেই জনপ্রতিনিধিরা বলেন, খালের ধার ঘেঁষে বহুতল থাকায় ড্রেজিং করতে গেলে সেগুলির ভিত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’’

ভাসছে এলাকা। সুটকেস মাথায় নিয়ে পাড়া ছাড়ছেন এক বাসিন্দা। বুধবার, বাগুইআটিতে।

ভাসছে এলাকা। সুটকেস মাথায় নিয়ে পাড়া ছাড়ছেন এক বাসিন্দা। বুধবার, বাগুইআটিতে। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:৩১
Share: Save:

এ যেন রাজার ‘পাপে’ রাজ্য নষ্ট! বাগুইআটির জ্যাংড়া, জর্দাবাগান, বিদ্যাসাগরপল্লি, রবীন্দ্রপল্লি, সাহাপাড়া, কাঠপোল ও শচীন্দ্রলাল সরণির মতো বিভিন্ন এলাকা দু’দিনের ভারী বৃষ্টিতেই দ্বীপে পরিণত। কারণ, ‘বাগজোলা বাইপাস ওয়ান’ (বিবি-১) এবং ‘বাগজোলা বাইপাস টু’ (বিবি-২) খাল দু’টির জল বহন ক্ষমতা কার্যত শেষ। বাসিন্দাদের দাবি, দুই খালেরই ধার ঘেঁষে অপরিকল্পিত ভাবে অসংখ্য বহুতল তৈরি হওয়াই এই জল-যন্ত্রণার মূলে। যার পিছনে আগের রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভারই ভূমিকা ছিল বলে অভিযোগ।

২০১৫ সালে ওই পুরসভা ও বিধাননগর পুর নিগম মিলিয়ে তৈরি হয় বিধাননগর পুরসভা (কর্পোরেশন)। তার আগে রাজারহাটের যাবতীয় বহুতলের নকশার অনুমোদন দিয়েছিল রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভা। তিন দিন জলবন্দি থাকার পরে ওই দুই খাল লাগোয়া বাসিন্দারা তোপ দাগছেন রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার দিকেই। তাঁদের প্রশ্ন, উপযুক্ত নিকাশি পরিকল্পনা ছাড়াই খালের ধারে বহুতল তৈরির অনুমোদন কী ভাবে দেওয়া হয়েছিল?

বাসিন্দাদের বক্তব্য, ওই পুরসভা তৃণমূলের আমলে বিধাননগরের সঙ্গে মিশে গিয়েছে। তৎকালীন বাম নেতৃত্বের অনেকেই এখন তৃণমূলে। তাই এ সব প্রশ্ন এখন আর ওঠে না। এলাকাবাসীর অভিযোগ, “খাল সংস্কারের কথা উঠলেই জনপ্রতিনিধিরা বলেন, খালের ধার ঘেঁষে বহুতল থাকায় ড্রেজিং করতে গেলে সেগুলির ভিত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’’

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতি বছরই খাল উপচে ওই সমস্ত এলাকা ভাসে। মানুষ বাধ্য হচ্ছেন বাড়ি বিক্রি করে চলে যেতে। এলাকায় চলছে প্রোমোটার-রাজ। পরপর দু’-তিনটি বাড়ি বিক্রি হলেই বহুতল তৈরির ছক কষেন তাঁরা। বুধবার ওই সব এলাকায় ঘুরে দেখা গেল, হাঁটুজলে বিদ্যুৎহীন, পানীয় জলহীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন বাসিন্দারা। এক ভুক্তভোগীর কথায়, “তিন দিন ধরে জলে পড়ে আছি। পানীয় জল নেই। বিদ্যুৎ নেই। ফোনের চার্জ শেষ। বাড়িতে অসুস্থ মানুষ। বিপদ হলে খবরও দিতে পারব না।”

জর্দাবাগান রবীন্দ্রপল্লিতে দেখা গেল, বিবি-২ খালের জলে পারাপারের সেতুও ডুবেছে। অপরিকল্পিত ভাবে রাস্তা উঁচু করায় খালের জল ঢুকছে আশপাশের বাড়িতে। বিদ্যাসাগরপল্লির একটি বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, গ্যাস সিলিন্ডার জলে ভাসছে। বিছানায় বসে পরিবারের সবাই। মিটার বক্স জলে ডুবে। জেনারেটর চালিয়ে পাম্পে জল তোলা হচ্ছে। সাহাপাড়ার এক বাসিন্দার কথায় “বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার ভয়ে পাম্প চালাতেও সাহস পাচ্ছি না।” এ দিন দুপুরে অবশ্য ওই খাল সংলগ্ন কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ এসেছে।

রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার এক সময়ের চেয়ারম্যান, সিপিএমের তাপস চট্টোপাধ্যায় গত পুর নির্বাচনের আগেই তৃণমূলে যোগ দেন। বিধাননগরের প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র তথা নিউ টাউনের বর্তমান বিধায়ক তাপসবাবুর অবশ্য দাবি, পরিকল্পনা সত্ত্বেও নিউ টাউন জলে ডুবেছে। তিনি বলেন, ‘‘খালের অনেক দূরে হওয়া সত্ত্বেও নিউ টাউনে বাড়িতে জল ঢুকেছে। আমরা যতটা সম্ভব পরিকল্পনা করেই এগিয়েছিলাম। নয়ানজুলি ভরিয়েই তো বাগুইআটি সার্ভিস রোড হয়েছে। উন্নয়ন কি হবে না? অতীত থেকে শিক্ষা নিয়েই এগোতে হবে।”

বিধাননগরের পুর প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তীর পাল্টা প্রশ্ন, অতীতে খালপাড়ের আবাসন নিয়ে মানুষ সরব হননি কেন? তাঁর কথায়, ‘‘আমাকেও কেউ কোনও অভিযোগ জানাননি। অতীতে ওই দিকে কী হয়েছে, জানি না। নিম্নচাপের জেরে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। খালগুলি জল বইতে পারছে না। সেচ দফতর, নগরোন্নয়ন দফতর, পুরসভা-সহ বিভিন্ন দফতর মিলে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bagjola canal Waterlogged Heavy Rainfall
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE