E-Paper

মেট্রো চালুর আড়ম্বরে বিস্মৃত বৌবাজারের দুই পাড়ার ঘরছাড়ারা

২০১৯ সালের ৩১ অগস্টের সেই রাত এখনও ভুলতে পারেন না বৌবাজারের ওই বাসিন্দারা। ৩১ অগস্ট রাতে হঠাৎই তাঁরা দেখেন, বাড়ি হেলে পড়েছে। দেওয়ালে দেখা যাচ্ছে বড় বড় ফাটল।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০২৫ ০৯:৩৭
অসমাপ্ত: মেট্রোর কাজের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত বৌবাজারের দুর্গা পিতুরি লেন এবং সেকরাপাড়া লেনের বেশির ভাগ বাড়ি এখনও তৈরি হয়নি।

অসমাপ্ত: মেট্রোর কাজের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত বৌবাজারের দুর্গা পিতুরি লেন এবং সেকরাপাড়া লেনের বেশির ভাগ বাড়ি এখনও তৈরি হয়নি। বুধবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

ছ’বছর পেরোতে চলল, মেট্রোর কাজের জন্য বাড়ি ভেঙে তাঁরা ঘরছাড়া হয়েছেন। ঘটনাচক্রে, তাঁদের বাড়ির নীচ দিয়েই মেট্রো চলতে শুরু করবে আগামী কাল, শুক্রবার থেকে। অথচ, এখনও তাঁদের ফেরা হল না নতুন বাড়িতে। কবে হবে, তা-ও তাঁরা জানেন না। বৌবাজারের সেকরাপাড়া লেন আর দুর্গা পিতুরি লেনের ঘর হারানো বাসিন্দাদের অবস্থা অনেকটা প্রদীপের নীচে অন্ধকারের মতো।

২০১৯ সালের ৩১ অগস্টের সেই রাত এখনও ভুলতে পারেন না বৌবাজারের ওই বাসিন্দারা। ৩১ অগস্ট রাতে হঠাৎই তাঁরা দেখেন, বাড়ি হেলে পড়েছে। দেওয়ালে দেখা যাচ্ছে বড় বড় ফাটল। জানতে পারেন, মেট্রোর সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজের জন্য কোনও কারণে তাঁদের বাড়িতে ফাটল ধরেছে। মেট্রো কর্তৃপক্ষ রাতেই ওই বাসিন্দাদের বাড়ি ছেড়ে দিতে বলেন। সব জিনিস রেখে কার্যত এক কাপড়ে বেরিয়ে আসতে হয় তাঁদের।

সেই বেরিয়ে আসা যে এমন দীর্ঘস্থায়ী হবে, তা আঁচ করতে পারেননি দুর্গা পিতুরি লেন ও সেকরাপাড়া লেনের বাসিন্দারা। পরের দিন সকালে এসে তাঁরা দেখেন, গোটা বাড়ি কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। জানা যায়, সেকরাপাড়া লেন ও দুর্গা পিতুরি লেন মিলিয়ে মোট ২৬টি বাড়ি পুরোপুরি ভেঙে গিয়েছে। এ ছাড়াও, দুই পাড়ার বেশ কিছু বাড়ির দেওয়ালে ফাটল ধরেছে। ফাটল ধরেছে পাড়ার গলিপথেও।

১০/২, সেকরাপাড়া লেনে বাড়ি ছিল সুব্রত সেনের। সুব্রত বলেন, ‘‘প্রথম কয়েক মাস হোটেলে ছিলাম। গত ছ’বছর ধরে যদুনাথ দে রোডে ভাড়া আছি। মেট্রো কর্তৃপক্ষ শুধু বাড়ি ভাড়া মিটিয়েই খালাস। তাঁরা আশ্বাস দিয়েছিলেন, দু’বছরের মধ্যে নতুন বাড়ি তৈরি হবে। ছ’বছর কাটতে চলল, একটা ইটও বসেনি।’’

৮বি, সেকরাপাড়া লেনের বাসিন্দা আশিস সেন এখন থাকেন কেশবচন্দ্র সেন স্ট্রিটে মেট্রোর ভাড়া করে দেওয়া একটি ফ্ল্যাটে। তাঁর কথায়, ‘‘ছ’বছর কেটে গেল। মা মারা গিয়েছেন। মায়ের শেষ ইচ্ছা ছিল, নিজের ভিটেতে ফিরে যাবেন। তাঁর সেই ইচ্ছা পূরণ হয়নি। শুধু মা নন, এমন আরও বেশ কয়েক জন ইতিমধ্যে প্রয়াত। আমাদের তো কোনও দোষ ছিল না। কেন আমরা এখনও ঘরছাড়া?’’

২, দুর্গা পিতুরি লেনে সঞ্জয় বসাকের বাড়িতে ধুমধাম করে ঝুলন পূর্ণিমা হত। এলাকার লোকজন বাড়িটির নাম দিয়েছিলেন ‘ঝুলন বাড়ি’। সঞ্জয় বলেন, ‘‘সেই ঝুলন বাড়ি এখন ধ্বংসস্তূপ। মূল্যবান সব সমগ্রী, দেবদেবীর মূর্তি— কিছুই বাঁচেনি। এখন বেলেঘাটায় ভাড়া থাকি। বাড়ির নীচ দিয়ে মেট্রো চালু হতে চলেছে। কিন্তু আমাদের যন্ত্রণা কমল না।’’

তবে সঞ্জয় জানালেন, দুর্গা পিতুরি লেনে তাঁদের বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। যদিও কত দিনে তা শেষ হবে, জানা নেই তাঁর। দুর্গা পিতুরি লেনেরই বাসিন্দা সোনাক্ষী সরকারের বাড়িও ভেঙেছিল ৩১ অগস্টের রাতে। সোনাক্ষী এখন বেলেঘাটার একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন। তিনি বলেন, ‘‘পুরোটাই অনিশ্চিত। নতুন বাড়ি তৈরি কবে শেষ হবে জানি না। এই আশঙ্কাও উঁকি দেয়, মাটির নীচ দিয়ে মেট্রো গেলে নতুন বাড়িও কাঁপবে না তো?’’

ওই দুই পাড়ার যে সব বাড়িতে ফাটল ধরেছিল কিংবা আংশিক ভেঙেছিল, সেগুলি অবশ্য মেট্রো কর্তৃপক্ষ মেরামত করে দিয়েছেন। কিন্তু, ভেঙে পড়া বাড়ির জায়গায় নতুন বাড়ি তৈরি শেষ হবে কবে? মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ওই এলাকায় বাড়ি বানানোর জন্য নির্দিষ্ট সংস্থাকে বরাত দেওয়া হয়ে গিয়েছে। তারা কাজ করছে। যাঁদের বাড়ি ভেঙেছে, তাঁরা চেয়েছেন, পুরনো বাড়ির নকশা অনুযায়ী যেন নতুন বাড়ি তৈরি করা হয়। সেই মতোই কাজ চলছে। দ্রুত তা শেষ হবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

metro Metro Rail

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy