চিঠি পাঠিয়ে কখনও কারও কাছে ৫০ লক্ষ, আবার কখনও ১০ লক্ষ টাকার দাবি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টাকা না দিলে পরিবারের সদস্যদের খুন অথবা ধর্ষণের হুমকি। গত কয়েক দিনে ঠাকুরপুকুর থানা এলাকায় একাধিক এমন হুমকি-চিঠি পেয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। চিকিৎসক থেকে ব্যবসায়ী— গত কয়েক দিনে এমন হুমকি-চিঠি পেয়ে একাধিক ব্যক্তি ঠাকুরপুকুর থানার দ্বারস্থ হয়েছেন। পুলিশ মামলা রুজু করে এই ঘটনার তদন্ত শুরু করলেও বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি।
জানা গিয়েছে, দিন পাঁচেক আগে রোগী দেখার সময়ে এমন হুমকি-চিঠি পান চিকিৎসক ডালিয়া চট্টোপাধ্যায়। সাদা কাগজে লেখা ওই চিঠিতে ৫০ লক্ষ টাকা দাবি করা হয়। নানা ভাবে হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি, ১০ দিনের মধ্যে দাবি মতো নির্দিষ্ট জায়গায় টাকা না পাঠালে তাঁর ছেলেকে খুন করা হবে বলে চিঠিতে লেখা ছিল। এমনকি থানায় গেলে চিকিৎসকের কপালে গুলি করা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়েছে চিঠিতে। রোগী দেখা শেষ করে প্রতিদিন অনেক রাত করে বাড়িতে ফেরা চিকিৎসক এমন চিঠি পেয়ে স্বাভাবিক ভাবেই আতঙ্কিত। তিনি বলেন, ‘‘যখন চিঠিটা এসেছিল, তখন আমি রোগী দেখছিলাম। হঠাৎ এমন চিঠি পেয়ে স্বাভাবিক ভাবে কিছুটা অস্বস্তি হচ্ছিল। নানা ভাবে অশ্রাব্য গালিগালাজ করা হয়েছে চিঠিতে। গোটা ঘটনার কথা বাড়িতে জানানোর পরে পুলিশকে জানানোর সিদ্ধান্ত নিই।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, ২৬ অক্টোবর থানায় লিখিত অভিযোগ জানান তিনি। ঘটনার পরে আতঙ্কিত ওই চিকিৎসক ইতিমধ্যেই আগামী কয়েক দিন তাঁর একাধিক চেম্বারে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁর নিউ আলিপুরের বাড়িতে সিসি ক্যামেরা লাগানোর তোড়জোড়ও শুরু হয়েছে। চিকিৎসকের ছেলে, কংগ্রেস নেতা আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়ও গোটা ঘটনার কথা জানিয়ে লালবাজারে চিঠি দিয়েছেন।
এলাকা সূত্রের খবর, শুধু ওই চিকিৎসক নয়। গত কয়েক দিনে ঠাকুরপুকুর থানা এলাকার একাধিক ব্যক্তি এমন হুমকি-চিঠি পেয়েছেন। দিন কয়েক আগে ওই এলাকার এক ব্যবসায়ীকে একই ভাবে হুমকি-চিঠি পাঠানো হয়। তাঁর কাছে ১০ লক্ষ টাকা দাবি করা হয়। না দিলে তাঁকে খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছে। তিনিও ঠাকুরপুকুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।
ইতিমধ্যে দু’টি অভিযোগে পৃথক মামলা রুজু করেছে পুলিশ। তদন্তে নেমে পুলিশ প্রাথমিক ভাবে মনে করছে, দু’টি চিঠি একই ব্যক্তি পাঠিয়ে থাকতে পারে। দু’টি চিঠির হাতের লেখাও এক বলে তদন্তকারীদের দাবি। তবে এর পিছনে এক জন, নাকি কোনও চক্র কাজ করছে— তা নিশ্চিত নয় পুলিশ। তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন। এক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, ‘‘কোথা থেকে চিঠিটি পোস্ট করা হয়েছিল, তা দেখা হচ্ছে। শুধু ভয় দেখানো, নাকি এর পিছনে অন্য কোনও উদ্দেশ্য রয়েছে— তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)