Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Residential Complex

পঞ্চায়েত এলাকায় বহুতলের রমরমা, বাসিন্দা বাড়ায় প্রশ্ন পরিষেবা নিয়ে

বেশ কয়েক বছর ধরেই শহর লাগোয়া পঞ্চায়েতগুলি নির্মাণ ব্যবসায়ীদের পছন্দের জায়গা হয়ে উঠেছে। স্থানীয় সূত্রের খবর, পুরসভা এলাকায় নিয়মকানুনের কড়াকড়ি রয়েছে। রয়েছে নজরদারিও।

An image of the residential building

রমরমা: সোনারপুর ঘেঁষা পঞ্চায়েত এলাকায় তৈরি হচ্ছে এমনই সব বহুতল আবাসন। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বারুইপুর শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০২৩ ০৭:৩২
Share: Save:

গত কয়েক বছরে একের পর এক বহুতল আবাসনে ছেয়ে গিয়েছে বারুইপুর-সোনারপুরের শহর ঘেঁষা পঞ্চায়েতগুলি। বাইরে থেকে বহু মানুষ এসে বসবাস করছেন। এলাকার জনসংখ্যা বাড়ছে হু হু করে। ফলে পরিষেবা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। একের পর এক বহুতল তৈরি হওয়ায় এলাকায় পানীয় জল, নিকাশির মতো পরিষেবা যে ব্যাহত হচ্ছে, তা মেনে নিচ্ছে পঞ্চায়েতও।

বেশ কয়েক বছর ধরেই শহর লাগোয়া পঞ্চায়েতগুলি নির্মাণ ব্যবসায়ীদের পছন্দের জায়গা হয়ে উঠেছে। স্থানীয় সূত্রের খবর, পুরসভা এলাকায় নিয়মকানুনের কড়াকড়ি রয়েছে। রয়েছে নজরদারিও। কিন্তু পঞ্চায়েত এলাকায় তা অনেকটাই শিথিল। বড় আবাসনগুলির ক্ষেত্রে তা-ও জেলা পরিষদের অনুমতির প্রয়োজন হয়। কিন্তু ছোট আবাসনের ক্ষেত্রে সে সবের তেমন বালাই নেই বলেই দাবি। ফলে চারতলা, পাঁচতলা বাড়ি তৈরি হয়েই চলেছে। পঞ্চায়েত এলাকার সুযোগ নিয়ে অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নিয়মও মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। বহু ক্ষেত্রে চড়া দামে চাষের জমি কিনে নিয়ে সেখানে তোলা হচ্ছে ফ্ল্যাট। আবার পুকুর বা জলাজমি ভরাট করেও বহুতল নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে অনেক জায়গায়।

বহুতলের এ হেন রমরমায় বিরক্ত পঞ্চায়েত প্রশাসনের একাংশও। বারুইপুরের মল্লিকপুর পঞ্চায়েতের তরফে সম্প্রতি বহুতলের বাড়বাড়ন্ত নিয়ন্ত্রণের দাবি জানিয়ে জেলা ও মহকুমা প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। পঞ্চায়েতের বিদায়ী উপপ্রধান হবিবুর রহমান বৈদ্য বলেন, “আমার এলাকায় গত কয়েক বছরে অন্তত শ’তিনেক ফ্ল্যাট তৈরি হয়েছে। বাইরের লোকজন এখানে জায়গা কিনে জমির চরিত্র বদল না করে বেআইনি ভাবে বহুতল বানিয়ে বিক্রি করে দিচ্ছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিয়ম মানা হচ্ছে না। পঞ্চায়েত প্রশাসনের পক্ষে গোটা বিষয়টি দেখা সম্ভব নয়। তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।”

বহুতলের এই রমরমার প্রভাব পড়ছে পঞ্চায়েতের পরিষেবাতেও। ভোটের আগে যা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন এলাকার মানুষ। স্থানীয় সূত্রের খবর, বহুতলের বাসিন্দাদের বাড়তি চাপ সামলাতে গিয়ে এলাকার পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে। বারুইপুর পুরসভা লাগোয়া মল্লিকপুর-হরিহরপুর পঞ্চায়েতে পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। এর মধ্যেই ফ্ল্যাট বা আবাসন কর্তৃপক্ষ নিজেদের মতো করে সাবমার্সিবল পাম্প বসিয়ে বাসিন্দাদের জলের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। ফলে, বিপুল পরিমাণ ভূগর্ভস্থ জল তোলা হচ্ছে রোজ। এর জেরে এলাকার ভূগর্ভস্থ জলাধারে টান পড়ছে। অধিকাংশ নলকূপে জল পাওয়া যাচ্ছে না। নিয়ম ভেঙে বহুতল তৈরির প্রভাব পড়ছে এলাকার নিকাশি ব্যবস্থাতেও।

এর পাশাপাশি অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রেই নির্মাণের সময়ে নিকাশির জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা ছাড়া হচ্ছে না। ফলে, অল্প বৃষ্টিতেই জলমগ্ন হচ্ছে এলাকা। হবিবুর বলেন, “গত কয়েক বছরে এলাকায় কয়েক হাজার নতুন বাসিন্দা এসে থাকতে শুরু করেছেন। ফলে পরিষেবায় একটা প্রভাব তো পড়ছেই। তার পরেও সকলের কাছে ঠিক মতো পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আমরা।”

এলাকায় অনুমতি না নিয়েই অনেক বহুতল তৈরি হচ্ছে বলে মেনে নিয়েছেন সোনারপুর উত্তরেরবিধায়ক ফিরদৌসি বেগম। তাঁর কথায়, “অনেক ক্ষেত্রেই পঞ্চায়েত এলাকাগুলিতে বিনা অনুমতিতে বহুতল তৈরি হচ্ছে। আমরা অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নিই। তবে, স্থানীয় বাসিন্দারা যাতে কোনও পরিষেবা থেকে বঞ্চিত না হন, সে দিকে লক্ষ রাখা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই পঞ্চায়েত এলাকায় পানীয় জল-সহ বিভিন্ন পরিষেবার জন্য একাধিক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Residential area Residential complex Sonarpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE