এক হাসপাতাল থেকে রোগীর আত্মীয়বন্ধুরা তাঁকে বন্ড সই করে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে চান। আইনত তাতে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। সই হয়ে গেলে রোগীকে ছাড়তে দেরি হওয়ারও কথা নয়। অথচ, সেটুকু করতেই আরজিকর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কয়েক ঘণ্টা সময় নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
শুধু তা-ই নয়, রোগী যে কখন হাসপাতাল থেকে চলে গিয়েছেন সেই খবরও নাকি কেউ রাখেননি! এই অভিযোগ তুলেছেন খোদ শাসক দলের বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত। তবে রোগীকে ছাড়তে দেরির কথা মানলেও রোগী তাঁদের অজান্তে চলে গিয়েছেন এ কথা মানছেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
রোগী নাজিরউদ্দিন ওরফে চাঁদু সব্যসাচী-অনুগত হিসেবে পরিচিত এবং হাতিয়াড়া অঞ্চলের স্থানীয় তৃণমূল নেতা। বৃহস্পতিবার দুপুরে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য গত বৃহস্পতিবার রাতে সব্যসাচীবাবু ছাড়াও একাধিক নেতা-মন্ত্রীর ফোন গিয়েছিল আরজিকর কর্তৃপক্ষের কাছে। তাতেও রোগীকে ছাড়া হয়নি বলে অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত রোগীর অবস্থা খারাপ হচ্ছে দেখে হাসপাতালের অনুমতির অপেক্ষা না করেই রোগীকে উঠিয়ে নিয়ে যান বাড়ির লোক। অভিযোগ উঠেছে, এক জন রোগীকে যে হাসপাতালের শয্যা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সে দিকেও হাসপাতালের কেউ নজর রাখেননি।
আরও পড়ুন:
খোঁজ শুরু হতেই মিলিয়ে গেল বাড়তি টাকার দাবি
প্রশ্ন উঠছে, প্রথম সারির সরকারি মেডিক্যাল কলেজে কর্মসংস্কৃতি এবং রোগী নিরাপত্তার যদি এই হাল হয়, তা হলে মানুষ কোথায় একটু নিশ্চিন্ত হবে? নেতা-মন্ত্রীদের ঘনিষ্ঠদের এতটা হেনস্থা হতে হলে প্রভাব-পরিচিতিহীন সাধারণ গরিব মানুষকে কী পরিমাণ হেনস্থা হতে হয় সেই প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে।
সব্যসাচীবাবুর কথায়, ‘‘রোগী চলে যাওয়ার প্রায় ঘণ্টা তিনেক পরে ডেপুটি সুপার পরিচয় দিয়ে এক জন আমাকে ফোন করেন। তিনি জানান, একটি নথি মিলছিল না বলে রোগীকে ছাড়তে দেরি হচ্ছিল। এখন সেটা পাওয়া গিয়েছে ফলে দ্রুত তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হবে। অথচ রোগী তার বহু আগে আরজিকর থেকে চলে গিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে গিয়েছেন। চিকিৎসাও শুরু হয়ে গিয়েছে।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘নাজির আমাদের দলের পুরনো নেতা। চিকিৎসার বিষয়ে ওঁর পাশে দাঁড়াতে গিয়ে এমন খারাপ অভিজ্ঞতা হবে ভাবিনি।’’
আরজিকরের অধ্যক্ষ শুদ্ধোদন বটব্যালের কথায়, ‘‘রোগীকে ছেড়ে দিতে দেরি হচ্ছিল কারণ, রোগীর বেড টিকিট নিয়ে এক জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী স্টোর-এ ওষুধ আনতে গিয়েছিলেন। সেখানে বেড টিকিট কোনও ভাবে হারিয়ে গিয়েছিল। তার মধ্যে আবার স্টোরের নার্সের ডিউটি পরিবর্তন হয়।’’ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিন্তু দাবি করেছেন, বেড টিকিট খুঁজে পাওয়ার পরে রাত ১০টা ২০ মিনিটে মহম্মদ সেলিম নামে এক জন বন্ডে সই করেন, তার পর রাত সাড়ে দশটায় রোগী হাসপাতাল ছাড়ে। সেই সময়েই বিধায়ককে ফোনে জানানো হয় যে, রোগীকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।
রোগীর পরিবার এবং সব্যসাচীবাবু কিন্তু অন্য দাবি করছেন। আরজিকর হাসপাতাল মহম্মদ সেলিম নামে যে ব্যক্তির কথা জানিয়েছে সেই সেলিমই রোগীর বন্ধু বলে পরিচয় দিয়ে বলেছেন, ‘‘আমরা বিকেল ৩টের সময় রোগীকে আরজিকরের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করি। ওঁরা কিছু ওষুধ আমাদের দিয়ে রোগীকে খাওয়াতে বলে। এর কিছু পরে রোগীর বমি শুরু হয়। ওঁরা রোগীর চিকিৎসায় কোনও আগ্রহ দেখাচ্ছিলেন না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘সব্যসাচীবাবু, মালা সাহা, শশী পাঁজা-র ফোনেও যখন কাজ হয়নি তখন আমরা ভয় পেয়ে রোগীকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাব ঠিক করি। রাত সাড়ে আটটায় আমি নিজে বন্ডে সই করি। কিন্তু সাড়ে দশটা পর্যন্ত হাসপাতাল রোগীকে ছাড়েনি। তখন আমরা রোগীকে তুলে নিয়ে বাইপাসের ধারের এক বেসরকারি হাসপাতালে চলে যাই। কেউ আমাদের বাধা দেয়নি। আরজিকর যে দাবি করছে তা পুরোপুরি মিথ্যা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy