মেয়েকে হারিয়েছেন সদ্য। সারাটা দিন জল পর্যন্ত মুখে তোলেননি প্রৌঢ় দম্পতি। শনিবার শাসক ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের ভিড় লেগেই ছিল সোদপুরের নাটাগড় ডাকঘরের কাছে তেতলা বাড়িটায়।
আর জি করে খুন হওয়া কর্তব্যরত চিকিৎসক-পড়ুয়া তরুণীর বাবা-মা তাঁদের সকলকে হাতজোড় করে বললেন, ‘‘বড় কষ্ট করে মেয়েটাকে ডাক্তার করেছিলাম, সকলের সেবা করবে বলে। তা-ই তো করছিল। আমাদের দুর্গা প্রতিমাকে কেড়ে নিল যারা, তাদের যেন শাস্তি হয়।’’ বাড়িতে দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন ওই চিকিৎসক। এ বারও আয়োজন শুরু করে দিয়েছিলেন। তাঁর মা বললেন, ‘‘সকলের ভাল করতে চাইত আমার মেয়ে। পুজো করতে বড় ভালবাসত। ওকে কেড়ে নিয়ে নিঃস্ব করে দিল।’’
সকাল থেকেই একের পর এক রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা তরুণী চিকিৎসকের বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে যান। একাধিক বাম নেতা দুপুরে গিয়ে কথা বলেন তাঁদের সঙ্গে। পুলিশের বিরুদ্ধে সত্য আড়াল করার অভিযোগ তুলে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘নির্ভয়া বা কামদুনি-কাণ্ডের চেয়ে কোনও অংশে কম নয় এই ঘটনা। খুবলে হত্যা করা হয়েছে মেয়েটিকে। বাবা-মাকে দেখতে দেওয়া হয়নি প্রথমে। পুলিশ সত্য আড়াল করতে চেয়েছে। তাই প্রথমে আত্মহত্যার কথা বলেছে। মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, সিবিআই তদন্তে তাঁর আপত্তি নেই। দোষীদের যেন আড়াল না করা হয়, এই বিষয়ে সকলে সহমত হোন।’’
এ দিন মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় ও সাংসদ সৌগত রায়, বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল চিকিৎসকের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। সৌগতকে পাশে নিয়ে শোভনদেব বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ওঁর পরিবার যদি অন্য তদন্তকারী সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত করাতে চায়, করাতে পারে। আমরাও সেই নির্দেশের কথাই পরিবারকে জানিয়েছি। তবে তারা পুলিশি তদন্তে আস্থা রেখেছে।’’
ময়না তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলে সুকান্ত বলেন, ‘‘এই ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু, কেন খুন করা হল, তা পরিষ্কার নয়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ রয়েছে, সূর্য ডোবার পরে ময়না তদন্ত করা যায় না। অথচ, শুক্রবার সন্ধ্যার পরে তড়িঘড়ি তা করা হয়েছে। সৎকারও হয়ে গিয়েছে। কিছু কি আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে? নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি করছি। সিবিআই তদন্তের জন্য আদালতে যাব। দোষীদের কঠোরতম শাস্তি হোক, পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে এটাই চাই।’’
নিহত চিকিৎসকের মা বলেন, ‘‘পুলিশ প্রথমে দেখতে দিতে চায়নি। মেয়ে আত্মহত্যা করেছে বলা হয়েছিল। গিয়ে দেখি, কিছু দিন আগে কেনা ওর প্রিয় নীল গাড়িটা দুমড়ে-মুচড়ে দিয়েছে। পুলিশ কিছু বলতেই পারল না। মুখ্যমন্ত্রী খোঁজ নিয়েছেন। আমরা চাই, পুলিশ সত্য উদ্ঘাটন করুক।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)