Advertisement
E-Paper

দুপুরের পাতে ‘হিট’ ঝোল-ভাতই

ধর্মতলা ও অফিসপাড়ায় চাউমিন, চিলি চিকেন, ফিশ ফ্রাই আর চিকেন স্টু-র মতো খাবারই হল ‘সুপারস্টার’। কিন্তু এ দিন তাদের গুনে গুনে দশ গোল দিয়েছে বাঙালির প্রিয় ঝোল-ভাত।

আর্যভট্ট খান ও কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৮ ০১:০২
মধ্যাহ্নভোজ। শনিবার, ডেকার্স লেনে। —নিজস্ব চিত্র।

মধ্যাহ্নভোজ। শনিবার, ডেকার্স লেনে। —নিজস্ব চিত্র।

ডেকার্স লেনের দোকানটির সামনে ফিশ ফ্রাই, ফিশ কবিরাজি আর কাটলেটের টানেই ভিড় জমান অনেকে। শনিবার শাসক দলের সমাবেশের দিন অবশ্য সে সব ছিল না। তার বদলে ৬০ টাকার থালিতে সরু চালের ভাত আর রুই মাছের কবিরাজি ঝোল রমরমিয়ে বিকিয়েছে।

অন্য দিন ধর্মতলার বাসস্ট্যান্ডে দোসা বিক্রি করেন মোহন। এ দিন দোসার চাটু তুলে রেখে রেঁধেছিলেন ভাত আর গরম গরম ডিমের ঝোল। বললেন, ‘‘এই ভি়ড়ে দোসা কে খাবে? লোকে ভাতটাই খেতে চায়।’’

ধর্মতলা ও অফিসপাড়ায় চাউমিন, চিলি চিকেন, ফিশ ফ্রাই আর চিকেন স্টু-র মতো খাবারই হল ‘সুপারস্টার’। কিন্তু এ দিন তাদের গুনে গুনে দশ গোল দিয়েছে বাঙালির প্রিয় ঝোল-ভাত। যা বিক্রি করে প্রচুর লক্ষ্মীলাভও হয়েছে দোকানিদের। ডেকার্স লেনের এক হোটেলের মালিক বললেন, ‘‘দুপুর ২টো পর্যন্ত অন্তত ২০০ প্লেট ঝোল-ভাত বিক্রি করেছি।’’

ডেকার্স লেনে স্টু ও ফ্রাইয়ের জন্য বিখ্যাত ‘চিত্তদা’র দোকানেও এ দিন মেনুতে ছিল ভাত। জানা গেল, ৮০ কিলোগ্রাম চালের ভাত রান্না হয়েছে সেখানে। সঙ্গে চারাপোনার ঝোল। বর্ষার দিনে খিচুড়ি, পাঁপড়ভাজার কাটতিও কম নয়! জেলা থেকে আসা খদ্দের সামলাতে ডেকরেটরের থেকে ভাড়ায় আনা হয়েছে চেয়ার-টেবিল।

তবে ক্ষোভ রয়েছে দোকানিদের। ডেকার্স লেনেই এক পাইস হোটেলের মালিক বলছিলেন, ‘‘আমরা রোজই মাছ, ভাত, সব্জি বিক্রি করি। কিন্তু ওই দেখুন, রাস্তার পাশে সব উটকো লোকজন হোটেল খুলে বসেছে।’’ রাগের কারণ বোঝা গেল একটু এগোতেই। রাজু নামে এক যুবক অন্য দিন ফুটপাথে জামা বিক্রি করেন। এ দিন টেবিল সাজিয়ে ২৫ টাকা দরে ডিম-ভাত বেচেছেন। পাশের চেনা রুটির দোকানে মাছ-ভাত ৪০ টাকা। রাজুর হিসেবে, সারা দিনে অন্তত দেড়শো প্লেট বিক্রি হয়েছে। পাইস হোটেলের মালিক অবশ্য বলছেন, ‘‘এক দিনের ব্যবসা তো। কোয়ালিটি নেই, তাই দাম কম।’’

নিউ রোডের পাশেও এ দিন পসরা সাজিয়েছিলেন অনেকে। সেখানে অবশ্য ভাতের সঙ্গে মুরগির মশলাদার লাল ঝোল। থালা প্রতি ৪০ টাকা। ময়দানে বাস থেকে নেমে অনেকেই পাত পেড়ে বসে গিয়েছেন সেখানে। নদিয়া থেকে আসা একটি দলের কাছে গিয়ে শোনা গেল, ‘‘ওরে, এ তো বর্ষার পিকনিক রে!’’ কেউ কেউ আবার দোকানিকে টিপ্পনীও কেটেছেন। ‘‘বলি দাদা, এ আবার সেই ভাগাড় নয় তো?’’ তা শুনেই সাত হাত জিভ কেটে দোকানির উত্তর, ‘‘না দাদা, এ এক্কেবারে জ্যান্ত চিকেন।’’

ঝোল-ভাতের এমন দাপট কেন? ডেকার্স লেনের অনেক দোকানিই বলছিলেন, গত ক’বছরে কেউ কেউ চাউমিন, পোলাও করলেও তেমন বিক্রি হয়নি। কিন্তু যাঁরা ডিম-ভাত করেছিলেন, তাঁরা প্রচুর লাভ করেন। রাজুই বলেন, ‘‘গত বছরই বুঝেছিলাম, ডিম-ভাতই লক্ষ্মী।’’

দুপুর একটার পরে বহু দোকানেই ‘ডিম নেই, ডিম নেই’ রব। এসপ্ল্যানেড মেট্রো স্টেশনের পাশে এক দোকানি বলছিলেন, ‘‘গরিব মানুষের সস্তায় ডিম-ভাতই পয়লা পছন্দ।’’ ঝোপ বুঝে কেউ কেউ দামও বাড়িয়ে দেন। স্ত্রী বিলকিসকে নিয়ে এসেছিলেন বর্ধমানের শেখ মুজিব। বললেন, ‘‘সকালে মাছ-ভাত ছিল ৪০ টাকা। ভেবেছিলাম, ভাত খেয়ে ফেরার পথ ধরব। শেষ বেলায় খেতে এসে সেই দোকানেই ৫০ টাকা দিয়ে খেতে হল!’’

Rice Curyy Lunch TMC Martyr's Day
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy