এখান দিয়েই নিত্য যাতায়াত। ছবি: অরুণ লোধ।
রাস্তা তো নয়, যেন ছোটখাটো পুকুর!
বন্দর এলাকায় সোনাই রোড, হাইড রোড গ্রামের রাস্তাকেও হার মানাবে। পুরো রাস্তা খানাখন্দে ভর্তি, জায়গায় জায়গায় বড় বড় গর্ত। বেহাল রাস্তার জেরে দুর্ঘটনা, যানজট রোজকার সমস্যা। দুর্দশার একই ছবি সিজিআর রোড, কোল ডক রোডে। পুলিশ জানিয়েছে, অগস্টে বন্দর এলাকায় পথ দুর্ঘটনায় চার জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত ৬ জন। রাস্তার দুর্দশা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে খোদ পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম সম্প্রতি পুরভবনে জরুরি বৈঠক করেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, শুধুমাত্র তাপ্পি মারা নয়, ভাঙা রাস্তার পুরোটাই সারাতে হবে।
বন্দর এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, তাঁদের এলাকায় রাস্তা সারাইয়ে উন্নত বিটুমিন ব্যবহার করা হয় না। শুধু দায়সারা গোছের ইট, বালি ঢেলে তাপ্পি মারা হয়। রবিবার সিজিআর রোড ও হাইড রোডের মোড়ে পথ দুর্ঘটনায় মারা যান পেশায় স্কুলশিক্ষক অরবিন্দকুমার মাহাতো। হাইড রোডের পাশেই টিনাবাজার বস্তি এলাকায় তাঁর বাড়ি। অরবিন্দবাবুর বাবা মধুসূদন মাহাতো বলেন, ‘‘এখন রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটতে ভয় করে। আমি এখানে রয়েছি ৪০ বছর। রাস্তা কখনও ভাল করে সারানো হয় না। কেবল তাপ্পি দিয়ে কাজ চলছে।’’ এলাকাবাসীদের ক্ষোভ, রাস্তা ভাল ভাবে সারালে এই দুর্দশা হয় না। হাইড রোডে বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন বলরাম মণ্ডল। তাঁর কথায়, ‘‘সকালে ব্রেস ব্রিজ থেকে হেঁটে অফিস আসি। রাস্তা খারাপ হওয়ার জন্য গাড়ি যেতেই পারে না। তাই বাসের বদলে হেঁটে আসতে হয়।’’ একে রাস্তার শোচনীয় হাল, তার উপরে রাস্তার দু’পাশে বড় বড় ট্রেলার, লরি সব সময়েই সার দিয়ে দাঁড়িয়ে। হাইড রোডে ২৫ বছর চায়ের দোকান চালাচ্ছেন পরিমল কর্মকার। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এ বছরে অবস্থা আরও খারাপ।’’ এর জন্য নিকাশি ব্যবস্থাকেও দায়ী করেছেন এলাকাবাসী। হাইড রোড সংলগ্ন টিনাবাজার বস্তির বাসিন্দা বাবুরাম সর্দারের কথায়, ‘‘নিকাশি ব্যবস্থা যথাযথ না হওয়ায় একটু বৃষ্টিতেই জল রাস্তায় চলে আসে। জল জমে রাস্তাও তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’’
বারবার একই এলাকায় পথ দুর্ঘটনা বাড়ছে, তাই গত সোমবার পোর্ট ট্রাস্টের অফিসে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় বাসিন্দারা। স্থানীয় কাউন্সিলর মহম্মদ আনোয়ার খান বলেন, ‘‘রাস্তার অবস্থা এতটাই খারাপ যে বাচ্চারা আতঙ্কে স্কুলে যেতে পারছে না। রাস্তার মালিকানা পোর্ট ট্রাস্ট-এর। বারবার বলা সত্ত্বেও তারা রাস্তা সংস্কার করছে না।’’ বন্দর কতৃর্পক্ষ জানান, শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।
ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, হাইড রোডে রাস্তার মাঝখানে বড় গর্তে চাকা ঢুকে আটকে গিয়েছে একটি মালবাহী যান। তার পিছনে সার দিয়ে গাড়ি দাঁড়িয়ে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, এটা হাইড রোডের রোজকার ছবি। বাটানগর, মহেশতলা, তারাতলা যেতে হাইড রোডই ভরসা। কিন্তু রাস্তার বেহাল দশার জন্য আতঙ্কের যাত্রা নিয়েই সাধারণ মানুষকে পথ চলতে হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, বন্দর এলাকায় অগস্টে পথ দুর্ঘটনায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে, জখম হন তিন মোটরবাইক চালক। হাইড রোডে কর্তব্যরত এক ট্রাফিক পুলিশের কথায়, ‘‘রাস্তায় বড় গর্তে মোটরবাইকের চাকা আটকে বিপত্তি বাড়ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy