Advertisement
E-Paper

‘বড় শান্তির জায়গা ছিল সল্টলেক’

সাদা কাগজের প্যাডে ইংরেজিতে টানা টানা অক্ষরে যা লিখলেন, বাংলায় তার তর্জমা করলে দাঁড়ায়— ‘আগে একটু-আধটু এমন হত না তা নয়। কিন্তু এ বার পুরনির্বাচনে সল্টলেকে যে ভোট-সন্ত্রাস দেখা গেল, তা সমস্ত সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে। এটা ভোট নয়, প্রহসন। পশ্চিমবঙ্গে বহু মানুষের কোনও কাজ নেই বলে সারাদিন রাজনীতির পিছনে নষ্ট করছে।’’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৫ ০১:০৪
(বাঁ দিক থেকে) লিপি পান, সৌমিত্র বিশ্বাস, মিতা বিশ্বাস, প্রতীপ মজুমদার এবং সুমনা বর্মণ। — নিজস্ব চিত্র।

(বাঁ দিক থেকে) লিপি পান, সৌমিত্র বিশ্বাস, মিতা বিশ্বাস, প্রতীপ মজুমদার এবং সুমনা বর্মণ। — নিজস্ব চিত্র।

সাদা কাগজের প্যাডে ইংরেজিতে টানা টানা অক্ষরে যা লিখলেন, বাংলায় তার তর্জমা করলে দাঁড়ায়— ‘আগে একটু-আধটু এমন হত না তা নয়। কিন্তু এ বার পুরনির্বাচনে সল্টলেকে যে ভোট-সন্ত্রাস দেখা গেল, তা সমস্ত সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে। এটা ভোট নয়, প্রহসন। পশ্চিমবঙ্গে বহু মানুষের কোনও কাজ নেই বলে সারাদিন রাজনীতির পিছনে নষ্ট করছে।’’
গলায় ব্যান্ডেজ বাঁধা। নাকের সঙ্গে নল ঝুলছে। আপাতত সেই নলে ঢেলে দেওয়া তরল খাবার দেওয়া হয় তাঁকে। সদ্য স্বরযন্ত্র কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে, কারণ তাতে ক্যানসার বাসা বেঁধেছিল। হারিয়েছেন কথা বলার ক্ষমতা। কিন্তু হাসপাতাল থেকে বাড়ি আসার পরে গত কয়েক দিনের ভোটকেন্দ্রিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তিনি এতই বীতশ্রদ্ধ এবং বিরক্ত যে, সাংবাদিকদের সামনে পেয়ে লিখিত শব্দে উগড়ে দিলেন নিজের তিক্ত অনুভব। তিনি এফডি ব্লকের বাসিন্দা, পেশায় প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী সৌমিত্র বিশ্বাস। চোখের ভাষায়, হাতের ইশারাতেই বুঝিয়ে দিলেন নিজের হতাশা।
শনিবারের সল্টলেক ততক্ষণে ঢেকে গিয়েছে সবুজ আবিরে। সর্বত্র তৃণমূলের পতাকা। রাস্তায় ঢোল-তাসার আওয়াজে অন্য কিছু শোনা যাচ্ছে না। শয়ে শয়ে সমর্থক মাথায় দলীয় পতাকা লাগিয়ে ছুটছে, চিৎকার করছে, ডিগবাজি খাচ্ছে, বিজয় মিছিলে জয়ধ্বনি দিয়ে গলা ফাটাচ্ছে। কিন্তু বহিরঙ্গে উৎসবে মোড়া সল্টলেকের অন্তরে অন্তঃসলিলা হয়ে বওয়া অসন্তোষ, অবিশ্বাস, প্রতিবাদ এ দিন স্পষ্ট হয়েছে বার বার। শিক্ষিত, চিন্তাশীল সল্টলেকবাসীর একটা বড় অংশ নিখাদ-নীরব প্রতিবাদেই নির্লিপ্ত থেকেছেন এই উৎসব থেকে। দেখেও দেখেননি। কারও প্রতিক্রিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে চাপা কষ্ট-শ্লেষ, কেউ আবার সচেতন নাগরিক হিসেবে শঙ্কিত হয়েছেন শক্তিপ্রয়োগের রাজনীতির ভবিষ্যৎ ভেবে।
এ দিন সিটি সেন্টার ১-এর সামনে সবুজ আবিরে মাখামাখি হয়ে পতাকা নিয়ে যে মিছিল বেরিয়েছিল, সে দিকে তাকিয়েই হালকা হাসলেন বছর ছাব্বিশের তরুণ। নাম জানালেও তা না লেখার অনুরোধ করলেন। ৯ তারিখ অ্যা়ডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রেনিং সেন্টারে ভোট দিতে গিয়েও দিতে পারেননি। তাঁর ভোট পড়ে গিয়েছিল। কোনও প্রতিবাদ ধোপে টেকেনি। বললেন, ‘‘এই পতাকা নিয়েই সে দিন ওরা আমাকে চলে যেতে বলেছিল। এ বার এই পতাকা নিয়েই আমাদের ওয়ার্ডের মধ্যে দিয়ে মিছিল করে পুরসভায় বসতে যাবে! ওদের কি একটুও লজ্জা করবে না?’’

তিরিশ বছর ধরে সল্টলেকের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত বাংলার শিক্ষক প্রতীপ মজুমদারও আফশোসে মাথা নাড়ছিলেন, ‘‘যে অভিজ্ঞতা এ বার হল, তা সল্টলেকে কখনও হবে ভাবিনি। বড় সম্ভ্রান্ত, শান্তির জায়গা ছিল। ৯ তারিখ লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল। টেলিভিশনে দেখে শিউড়ে উঠেছি। এই ভোটে কী লাভ, এই ফলেরও বা কী মূল্য?’’

এফডি ব্লকের বাড়িতে অসুস্থ স্বামীর পাশে বসে নিজের আশঙ্কার কথা বলছিলেন সৌমিত্র বিশ্বাসের স্ত্রী মিতা বিশ্বাস। পরিবর্তনের সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিভিন্ন মহলের টাকাপয়সার দাবি নিয়ে এই ব্যবসায়ী পরিবারকে প্রতিনিয়ত যে চাপের মধ্যে থাকতে সেই বর্ণনা দিয়ে ভয়ে ভয়ে বললেন, ‘‘এতটা খোলাখুলি যদি ক্ষমতাপ্রদর্শন হয়, গায়ের জোরে ভোট হয়, এর পরে কী হবে ভেবে পাচ্ছি না।’’ তেরো নম্বর ট্যাঙ্কের সুমনা বর্মণ বা আইএ ব্লকের লিপি পানের মতো অনেকেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জবরদস্তি জনমত নিজেদের দিকে ঘোরানোর পন্থার নিন্দা না করে পারেননি। তাঁরা নিজেরা ভোট দিতে পেরেছেন, কিন্তু সল্টলেকের বহু জায়গায় ভোট নিয়ে গোলমাল তাঁদের ব্যথিত করেছে, উদ্বিগ্ন করেছে। উৎসবের উল্লাস বড় বিসদৃশ ঠেকছে তাঁদের চোখে।

saltlake peaceful peaceful saltlake peaceful vote saltlake cancer patient saltlake resident saltlake poll violence saltlake vote result cancer patient
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy