Advertisement
E-Paper

আতঙ্ক কাটাতে পথে বাসিন্দারা

গত শনিবার, ভোটের দিন জীবন বিপন্ন করে বহিরাগতদের রুখেছিলেন এবি ব্লকের বাসিন্দা প্রীতিকুমার সেন। মূলত তাঁর প্রতিরোধেই বিধাননগরের ‘ছাপ্পা ভোটের’ চালচিত্র চলে আসে খবরের শিরোনামে। সেই তিনি জোর গলায় বলে বেড়ালেন, সল্টলেকে শান্তি ফেরাতে প্রতি ব্লকে প্রতিরোধ কমিটি গড়ে তুলতে হবে। বিধাননগরে নাগরিকদের ডাকে এক সভায় ভোটের দিন বহিরাগতদের হাতে নিজের মার খাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে সে কথাই জানালেন প্রীতিকুমারবাবু।

অনুপ চট্টোপাধ্যায় ও কাজল গুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০০:৪৭
ভোটের দিন সল্টলেকের এবি ব্লকের সামনে এ ভাবেই নিগৃহীত হন প্রীতিকুমার সেন। — নিজস্ব চিত্র

ভোটের দিন সল্টলেকের এবি ব্লকের সামনে এ ভাবেই নিগৃহীত হন প্রীতিকুমার সেন। — নিজস্ব চিত্র

গত শনিবার, ভোটের দিন জীবন বিপন্ন করে বহিরাগতদের রুখেছিলেন এবি ব্লকের বাসিন্দা প্রীতিকুমার সেন। মূলত তাঁর প্রতিরোধেই বিধাননগরের ‘ছাপ্পা ভোটের’ চালচিত্র চলে আসে খবরের শিরোনামে। সেই তিনি জোর গলায় বলে বেড়ালেন, সল্টলেকে শান্তি ফেরাতে প্রতি ব্লকে প্রতিরোধ কমিটি গড়ে তুলতে হবে। বিধাননগরে নাগরিকদের ডাকে এক সভায় ভোটের দিন বহিরাগতদের হাতে নিজের মার খাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে সে কথাই জানালেন প্রীতিকুমারবাবু।
বৃহস্পতিবার বিধাননগর পুর-নিগমের চারটি ওয়ার্ডের ৯টি বুথে ফের ভোট করার কথা ঘোষণা করেছে কমিশন। যে বুথে বহিরাগতের তাণ্ডব রুখতে সে দিন সক্রিয় হয়েছিলেন প্রীতিকুমারবাবু, তাঁর ভোটকেন্দ্রে এবি কমিউনিটি সেন্টারে আজ, শুক্রবার পুনর্নির্বাচন হচ্ছে। শাসক দলের ‘শাসানি’ রয়েছে এই পুনর্নির্বাচনেও। তবু আর এক দফা প্রতিবাদের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন তিনি।
শনিবার বিধাননগর পুর-নিগমের নির্বাচনে সকাল থেকেই বহিরাগতের ‘তাণ্ডব’ শুরু হয় এবি ব্লকের কমিউনিটি সেন্টারে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বেলা বাড়ার সঙ্গে তা বাড়ে অন্যত্রও। পরে যা চরম আকার নেয় ৩৩ নম্বরের দু’টি বুথে বিধায়কের উপস্থিতিতে সাংবাদিক পেটানোর ঘটনায়। তার জেরে তোলপাড় হয় রাজ্য-রাজনীতি। থমকে যায় ভোট প্রক্রিয়া। ফের ভোটের দাবিতে কমিশনের অফিসে অবস্থান করেন বিরোধীরা। একাধিক ওয়ার্ডে ফের ভোট হতে পারে, এমনই ইঙ্গিত দেয় কমিশন। তাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে শাসক দল। মন্ত্রী থেকে শুরু করে সাংসদ, বিধায়কেরা ধর্না শুরু করেন কমিশনের অফিসের সামনে। কোন কোন বুথে ভোট হবে, কবে গণনা হবে— তা নিয়ে শাসক ও বিরোধীদের টানাপড়েনে শেষে পদত্যাগ করেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার।
শনিবার পুর-নিগমের ভোটে বহিরাগতের ‘তাণ্ডব’ দেখে বিরক্ত সল্টলেকের মানুষ। কেউ প্রতিবাদ করেছেন বুথে দাঁড়িয়েই। কেউ বা জানিয়েছেন ভাষায়। বুধবারও তেমনই এক প্রতিবাদ মিছিলে সামিল হন এজে ব্লকের দীপক পত্রনবীশ। বয়স ৮০ ছুঁই ছুঁই। পায়ে ভর দিয়ে চলার শক্তি দেহে নেই। বিজে ব্লকের মার্কেটের সামনে শুরু হয়েছিল ওই প্রতিবাদ মিছিল। মিছিলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হাঁটতে পারেননি ঠিকই, তবুও প্রতিবাদের স্বর এতটুকুও কম ছিল না। বললেন, ‘‘সল্টলেকের প্রায় জন্ম লগ্ন থেকে আমি এখানকার বাসিন্দা। কত বার ভোট দিয়েছি। এমনটা আগে দেখিনি।’’ তিনি জানান, পুজোয়-অনুষ্ঠানে মিলেমিশে থাকে সকলেই। এ বার সেই পরিবেশ বিঘ্নিত হতে বসেছে। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘শেষ বয়সে এ সব দেখতে হবে ভাবিনি। বাইরের কিছু লোক এসে সল্টলেকের ঐতিহ্যে আঘাত হানল।’’ তারই প্রতিবাদে রাস্তায় দীপকবাবুর মতো অনেক প্রবীণ। ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে বহিরাগতের দাপটে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন স্থানীয় অনেকেই। পরে যা চরম আকার নেয় ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের একাধিক বুথে।

বুধবার সল্টলেকের বিভিন্ন ব্লকে প্রবীণ বাসিন্দাদের সঙ্গে হাজির ছিলেন প্রীতিকুমারবাবু, বামপন্থী আজিজুল হক, অসীম চট্টোপাধ্যায়-সহ সিটিজেনস্‌ ফোরামের অরুণাভ ঘোষ, অমিতাভ মজুমদারেরা। ওই মিছিলে যোগ দেন বিজেপি-র পারমিতা সাহা, কংগ্রেস প্রার্থী সুদীপ দে, সিপিএমের শাশ্বতী মণ্ডল-সহ আরও অনেকেই।

প্রীতিকুমারবাবু বলেন, ‘‘বহিরাগতদের ঠেকানোয় আমাকে ও ছেলেকে ওরা মারধর করে। সে কথা জানাতেই ঘুরছি বিধাননগরের বিভিন্ন এলাকায়।’’ ভোটের সেই ভয়ঙ্কর চিত্র আর যাতে সল্টলেকে না ফেরে, তার জন্য প্রতি ব্লকে প্রতিরোধ কমিটি গড়তে চান তিনি। মিছিলে হাজিরার সংখ্যা কম থাকলেও, প্রতিবাদের সুর চড়াই ছিল। যদিও এ দিন রাতেই প্রীতিকুমারবাবুর বাড়ির সামনে মোটরবাইক-বাহিনীর দাপাদাপির অভিযোগ ওঠে। খবর পাওয়া যায় বোমাবাজিরও।

এ দিকে, আজ ভোট বয়কটের ডাক দিয়েছে সদ্যগঠিত সিটিজেনস্‌ ফোরাম। তবে তা কতটা সফল হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গিয়েছে। বয়কটের পথে না গেলেও স্থানীয়দের অভিযোগ, অল্প সময়ের নোটিসে ফের ভোট করছে কমিশন। আচমকা ঘোষণা হওয়ায় অনেকেই ভোট দিতে যেতে পারবেন না বলে তাঁদের আশঙ্কা। সঙ্গে রয়েছে আগের দিনের সেই আতঙ্কও। পুলিশের উপরে ভরসা উঠে যাওয়াই এর প্রধান কারণ বলে মনে করছেন তাঁরা।

এ দিকে সল্টলেকের ৩৩, ৩৪ ও ৪১ নম্বর ওয়ার্ড ও রাজারহাটে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু বুথে পুনর্নির্বাচনের ঘোষণা নিয়ে ক্ষুব্ধ সব ক’টি রাজনৈতিক দলই। যেমন, সল্টলেকের ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ভোটের দিন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ মেলেনি বলেই কমিশন জানিয়েছিল। অথচ সেখানে তিনটি কেন্দ্রে একটি করে বুথে ভোট হবে। বিরোধীদের অভিযোগ, যে ওয়ার্ড ঘিরে অভিযোগ নেই, সেখানেই পুনর্নির্বাচনের ঘোষণা করা হল।

উল্টো দিকে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে যে বুথের সামনে ভোটের দিন ২২ জন সাংবাদিক মার খান, সেখানে মাত্র একটি বুথে কেন পুনর্নির্বাচন হচ্ছে, তা নিয়ে সরব বিরোধীরা। তেমনই ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে তিনটি জায়গায় ভোট হচ্ছে। সেখানে অবশ্য তিনি লড়াই চালিয়ে যাবেন বলে জানান নির্দল প্রার্থী অনুপম দত্ত। ‘সল্টলেক ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর তরফে কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, ‘‘ভোট প্রত্যেকের ব্যক্তিগত অধিকার। তা নিয়ে আমরা কোনও মতামত দিতে পারি না। তবে বাসিন্দারা গোটা ঘটনায় দুঃখ পেয়েছেন।’’

বিধাননগর কমিশনারেট সূত্রে খবর, প্রতি বুথে ২১ জন পুলিশকর্মীর পাশাপাশি এক জন করে ইনস্পেক্টর পদমর্যাদার অফিসার থাকবেন। সঙ্গে কুইক রেসপন্স টিম, হেভি রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াড থেকে শুরু করে কমিশনারেটের শীর্ষ কর্তারা নজরদারিতে থাকবেন।

saltlake resident protest rally repolling saltlake epolli saltlake panic
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy