E-Paper

দাবি আইনি স্বীকৃতি, বিয়ের অধিকার পেতে সোমবার সুপ্রিম কোর্টে সমকামীরা

সোমবার সুপ্রিম কোর্টে সমকামী বিয়ে সংক্রান্ত মামলাগুলির শুনানি হওয়ার কথা। আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা-সহ ৩৩টি দেশে সমকামী বিয়ে আজ আইনসিদ্ধ হলেও এশিয়ায় শুধুমাত্র তাইওয়ানে এই বিয়ে স্বীকৃত।

স্বাতী মল্লিক

শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:৩০
Supreme Court will hear all cases of same se marriage

দেশের গোটা এলজিবিটিকিউ সমাজ এখন রুদ্ধশ্বাসে তাকিয়ে শীর্ষ আদালতের দিকে। প্রতীকী ছবি।

তাঁদের সম্পর্কের বয়স দশ বছরেরও বেশি। ‘বিয়ে’ করেছিলেন ২০১৫ সালে। তবে, তা কাগজেকলমে নয়। তাই আজও একসঙ্গে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে ঋণ, বাড়ি ভাড়া নেওয়া থেকে বিমা করানো— সর্বত্র সমস্যায় পড়েন যুগলে। হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে গিয়ে আর পাঁচ জন দম্পতির মতো একে অপরের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থাকে না সুচন্দ্রা দাস ও শ্রী মুখোপাধ্যায়ের। পেশায় আলোকচিত্রী সুচন্দ্রা তাই বলছেন, ‘‘আমাদের বিয়েটা আজও শুধু ছবি হয়েই রয়ে গিয়েছে। সমকামীদের বিয়ের অধিকার পাওয়া তাই প্রয়োজন। কারণ, আইন পাশে থাকলে তবেই নিজেদের কথা আরও জোরে বলতে পারব। আইনের পথে অধিকার এলে সমাজেও ক্রমে সচেতনতা আসবে।’’

আজ, সোমবার সুপ্রিম কোর্টে সমকামী বিয়ে সংক্রান্ত মামলাগুলির শুনানি হওয়ার কথা। আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা-সহ ৩৩টি দেশে সমকামী বিয়ে আজ আইনসিদ্ধ হলেও এশিয়ায় শুধুমাত্র তাইওয়ানে এই বিয়ে স্বীকৃত। তাই দেশের গোটা এলজিবিটিকিউ সমাজ এখন রুদ্ধশ্বাসে তাকিয়ে শীর্ষ আদালতের দিকে।

কেন? সমকামী অধিকার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্তেরা জানাচ্ছেন, সমকামী পরিচয়ের কারণে কী ভাবে হেনস্থা, অপমান, ঘাড়ধাক্কা, বৈবাহিক ধর্ষণের শিকার হতে হয় অনেককে। ভরা কোভিডের মধ্যে নিজের বিয়ে আটকাতে মালগাড়িতে লুকিয়ে উত্তরবঙ্গ থেকে হাওড়ায় পালিয়ে আসতে হয় কোনও এক সমকামী তরুণীকে। রূপান্তরকামী কোনও কিশোরীর ‘অসুখ’ সারাতে ১৬ বছর বয়সেই বিয়ে দেয় পরিবার। পরিণাম, দিনের পর দিন বৈবাহিক ধর্ষণ।

শুধু শহরতলি ও গ্রামাঞ্চল নয়, পিছিয়ে নেই কলকাতার মতো মেট্রো শহরও। পেশায় বিপণন উপদেষ্টা (মার্কেটিং কনসালট্যান্ট) শ্রী ও তাঁর জীবনসঙ্গী সুচন্দ্রা জানাচ্ছেন, প্রতিনিয়ত কী ভাবে হেনস্থা, বাঁকা কথা, ঠাট্টা-বিদ্রুপের শিকার তাঁরা। আজও। এত বছর পরেও সুচন্দ্রার সঙ্গে কথা বন্ধ তাঁর বাবার। দু’জনে রাস্তা গিয়ে হেঁটে গেলে লোকে ভ্রূ কুঁচকে তাকায়। রেস্তরাঁয় বসে হজম করতে হয় টিটকিরি, চাপা হাসি। সমকামী— এই ‘দোষে’ হাতছাড়া হয় বহু কাজও। তাই বহু ক্ষেত্রে সমকামী অসুখের ‘দাওয়াই’ যে বিয়ে, আইনত বিয়ে করার সেই অধিকারই এ বার হাসিল করতে চান এ দেশের সমকামীরা।

২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ৩৭৭ ধারা প্রত্যাহার করা সুপ্রিম কোর্টের সেই ঐতিহাসিক রায়ে ‘অপরাধ’ তকমা-মুক্ত হয়েছিল সমকামিতা। কিন্তু বাস্তব বলছে, দৈনন্দিন অপমান, হেনস্থা থেকে আজও মুক্তি নেই তাঁদের। গত বছর নভেম্বরে সুপ্রিম কোর্ট দুই সমকামী যুগলের বিয়ের অধিকার সংক্রান্ত মামলা সম্পর্কে অবহিত হয়। সমকামী বিয়ে নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরূপ মনোভাব, বিজেপি সাংসদের সাম্প্রতিক তির্যক মন্তব্য, ধর্মীয় নেতাদের তীব্র আপত্তি সত্ত্বেও শীর্ষ আদালত এ নিয়ে শুনানি শুরুর কথা জানিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুনন্দ রাহা বলছেন, ‘‘শীর্ষ আদালতের রায়ে এ দেশে সমকামীরা বিয়ে করলেও তা আর অপরাধ বলে গণ্য হয় না। তবে এই বিয়েকে আইনসিদ্ধ করতে হলে বিশেষ বিবাহ আইনের আওতায় আবেদন করা হলে ভাল, তাতে মান্যতা দেওয়ার পদ্ধতি সহজ হতে পারে। শীর্ষ আদালত মান্যতা দিলে এর পরে সরকারকে সংসদে আইন সংশোধন করতে হবে।’’

তবে স্বীকৃতি এলেও সমাজের দেখার চোখ এক দিনে বদলাবে না— জানেন সমকামী অধিকাররক্ষা সংগঠন ‘স্যাফো ফর ইকোয়ালিটি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা, কুইয়ার নারীবাদী সমাজকর্মী মালবিকা। তাঁর মতে, সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে লড়াই চলবে। তবে সেই সঙ্গে চাই পরিবারের সংজ্ঞার বদলও। মালবিকা বলছেন, ‘‘বিয়ে শব্দটার সঙ্গে কিছু সামাজিক স্বীকৃতি জড়িয়ে রয়েছে ঠিকই। তার সঙ্গে পরিবারের সংজ্ঞারও বদল চাইছি। বিয়ের অধিকার গ্রাম-শহরতলির সমকামীদের জীবন কতটা বদলাবে, জানি না। তবে কিছু অধিকার সঙ্গে করে আনবে! সেটাই বা কম কী।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Same Sex Marriage Supreme Court of India

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy