E-Paper

মেলায় ছক-ভাঙা সাতরঙা স্পর্ধার সম্ভার

সব ধরনের লিঙ্গ পরিচয়ের মানুষের জন‍্য গয়না, নানা ধরনের আদিবাসী বুনন শিল্পের পোশাক সম্ভারও এসেছে মেলায়।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২৫ ০৭:৪০
যোধপুর পার্কের তালতলা মাঠে রংধনু মেলায় চলছে কেনাকাটা। রবিবার।

যোধপুর পার্কের তালতলা মাঠে রংধনু মেলায় চলছে কেনাকাটা। রবিবার। —নিজস্ব চিত্র।

নারী, পুরুষের খোপ কাটা পরিচয়ের বাইরে নিজের সত্তার উদ্‌যাপন। কিংবা বলাই যায়, ছক-ভাঙা নারীত্ব বা পৌরুষের প্রকাশ। আজকের পৃথিবীতে সগর্বে নিজেদের ‘অদ্ভুত’ সত্তা মেলে ধরা কুইয়ার গোষ্ঠীর নিজের শর্তে বাঁচার স্পর্ধা ফুটে উঠল এ শহরের একটি মেলার মাঠে। প্রাক্‌ শীত বা প্রথম শীতের আমেজ মাখা কলকাতায় সাফো ফর ইকুয়ালিটি গোষ্ঠীর ‘রংধনু মেলা’ এক ধরনের রঙিন বিচ্ছুরণই যেন মেলে ধরল।

যোধপুর পার্কের তালতলা মাঠে দু’দিনের মেলার শেষ দিন, রবিবার সাফোর কোয়েল ঘোষ বলছিলেন, “কোভিডের সময়ে ঘরে-বাইরে নানা ধরনের প্রান্তিক বা ছক-ভাঙা মেয়ে বা কুইয়ার মানুষজনের সঙ্কট দেখেছি। এই মেলার মাঠে চেষ্টা করেছি ছোট ব্যবসায় স্বনির্ভর হতে চাওয়া অন্তত জনা ৪০ কুইয়ার মেয়েদের এক মঞ্চে নিয়ে আসার।” তবে শুধুই সমপ্রেমী, রূপান্তরকামীরাই নন, পরিবারে বিচ্ছিন্ন একলা মেয়ে এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী মেয়েরাও এ মেলার শরিক হয়েছেন। উত্তরবঙ্গে লোপচু, পেশকের চা বাগিচা থেকে আসা লড়াকু একলা মেয়েদের সঙ্গে কলকাতার সৃঞ্জয়, পৃথ্বীরাজ কিংবা বেঙ্গালুরুর নিশীথার এখানে দেখা হয়ে গেল।

“তথাকথিত যৌন সংখ‍্যালঘু কিংবা ট্রান্স, সমপ্রেমী বা কুইয়ারদের যে এখনও রোজকার জীবনে কত রকমের বাধা পেরিয়ে হাঁটতে হয়!”— বলছিলেন বেঙ্গালুরুর নিশীথা। কখনও পছন্দের পোশাক খুঁজে পাওয়া বা পরতে পারাটাও হতে পারে শৃঙ্গজয়ের সমান। কলকাতায় এখনও তত পরিচিত নয়, ট্রান্সপুরুষ, কুইয়ারদের পছন্দের পোশাক নিয়ে বেঙ্গালুরুর ব্ল‍্যাক ইগেলস বাইন্ডার্সের তরফে এসেছেন নিশীথা। আনকোরা একটি সংস্থার মাধ‍্যমে ওঁরা চেষ্টা করছেন সস্তায় আমাদের গরম দেশের উপযোগী ট্রান্সপুরুষের ‘বাইন্ডার’ সবার জন‍্য নিয়ে আসতে। কলকাতা, বেঙ্গালুরু, মুম্বই সর্বত্র নানা সংস্থার মাধ্যমে কাজ করে তারা। নিশীথার কথায়, “পছন্দের পোশাক নানা ধরনের ঝুঁকির বা খরচের শল‍্য চিকিৎসার বাইরে অনেককে ভাবতে শেখায়।”

সব ধরনের লিঙ্গ পরিচয়ের মানুষের জন‍্য গয়না, নানা ধরনের আদিবাসী বুনন শিল্পের পোশাক সম্ভারও এসেছে এ মেলায়। পৃথ্বীরাজ নাথ বলছিলেন, “ছোটবেলায় পরিবারে, স্কুলে নানা ধরনের আঘাত আসা থেকে শুরু করে ব‍্যবসা করার সময়েও ঋণ পেতে আমাদের মতো একটু আলাদা মানুষদের নানা অপমান সইতে হয়।”

সহজ রঙিন মেলার মাঠ তাই নানা রকম ছোট-বড় যুদ্ধ জয়ের ঘোষণাতেই ভরে উঠেছে। রংধনু মেলার সাংস্কৃতিক আসরের বৈচিত্র্যও হয়ে উঠেছে সেই স্পর্ধার স্মারক।লোপামুদ্রা মিত্র যেমন গান শুনিয়েছেন, তেমনই এ দেশের প্রথম শুধু মেয়েদের হিপ-হপ গানের দল বা নারীসুলভ শরীরে পুরুষ সাজের ড্র‍্যাগ কুইন শিল্পী নাজ়ের উপস্থাপনাও সাড়া ফেলল। ছক-ভাঙারা মনের আনন্দে নিজস্বী তুলেছেন, হইহুল্লোড় করেছেন এই রংধনু মেলায়। তাতে সব মিলিয়ে সমাজজীবনের সাতরঙা খুশিরই প্রকাশ।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Transgenders fair Jodhpur Park

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy