ফাইল চিত্র
মুকুল রায় কি তৃণমূলে ফিরছেন? বাংলার রাজনীতি আপাতত এই প্রশ্ন ঘিরেই ঘুরপাক খাচ্ছে। বিজেপি-র থেকে ক্রমশ দূরত্ব বাড়ছে তাদের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতির। দলীয় বৈঠকে অনুপস্থিত থাকছেন মুকুল। বলছেন, তাঁকে কেউ বৈঠকের কথা জানায়নি। আবার দল বলছে, সকলের মতোই মুকুলকে মোবাইলে বার্তা পাঠিয়ে বৈঠকের কথা জানানো হয়েছিল। শাসক এবং বিরোধী— উভয় শিবিরই মুকুল-প্রশ্নে আপাতত নীরব। বিভিন্ন ইঙ্গিত এবং ইঙ্গিতপূর্ণ আচরণ ছাড়া বিজেপি এবং তৃণমূল— কারও তরফেই স্পষ্ট কিছু বলা হয়নি। সেই আবহেই তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করলেন তৃণমূলের প্রবীণ নেতা তথা সাংসদ সৌগত রায়।
মুকুলের প্রত্যাবর্তন প্রসঙ্গে সৌগত বলেছেন, ‘‘অনেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তাঁরা ফিরে আসতে চান। আমি মনে করি, প্রয়োজনের সময়ে তাঁরা দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন। সকলের বিষয়েই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে আমার মতে, বিষয়টিকে দু’টি ভাগে ভাগ করতে হবে— নরমপন্থী ও কট্টরপন্থী।’’ বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তৃণমূল সাংসদ বলেন, ‘‘অনেকে আছেন, যাঁরা দল ত্যাগ করেছেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কখনও অপমান করেননি। অন্যদিকে, কট্টরপন্থীরা প্রকাশ্যেই তাঁকে অপমান করেছিলেন। শুভেন্দু অধিকারী চলে যাওয়ার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বদনাম করেছেন। তবে মুকুল রায় কখনই মুখ্যমন্ত্রীকে প্রকাশ্যে অপমান করেননি।’’
সৌগতর এই মন্তব্য থেকে তৃণমূলেরই একাংশ মনে করছে, মুকুলের বিষয়ে দল অত ‘কঠোর’ অবস্থান না-ও নিতে পারে। কিন্তু রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ বাকিদের ক্ষেত্রে দল ততটা ‘নমনীয়’ থাকবে না। প্রসঙ্গত, ভোটে লড়লেও মুকুল কখনওই মমতা বা তাঁর বিরুদ্ধে ল়়ড়তে-নামা তৃণমূল প্রার্থী কৌশানী মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। ভোটে জেতার পরেও তিনি নিজেকে একপ্রকার গুটিয়েই রেখেছেন। সম্প্রতি মুকুল তাঁর অনুগামীদের নিয়ে বৈঠকও করেছেন। যে বৈঠকের নির্যাস বিজেপি-র পক্ষে উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
পক্ষান্তরে, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সম্প্রতি সৌগতর বাড়িতে গিয়েছিলেন তাঁর আশীর্বাদ এবং শুভেচ্ছা নিতে। সেখানে তাঁদের মধ্যে বিবিধ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। যাঁরা তৃণমূলে ফিরতে চাইছেন, তাঁদের নিয়েও আলোচনা হয়ে থাকলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। মুকুল সম্পর্কে সৌগতর বক্তব্য সেই আলোচনার নিহিত অর্থ বহন করছে কি না, তা নিয়েও দলের অন্দরে জল্পনা তৈরি হওয়ার অবকাশ রয়েছে।
এক সময় মমতার আস্থাভাজন এবং তৃণমূলের অঘোষিত দু’নম্বর মুকুল ২০১৭ সালে বিজেপি-তে যোগ দেন। পরের কয়েক বছরে তাঁর হাত ধরেই অনেকে তৃণমূল ছেড়ে গেরুয়া শিবিরে নাম লিখিয়েছেন। যদিও এখন তৃণমূলের একটি সূত্র দাবি করছে, বিজেপি-তে চলে-যাওয়া নেতাদের মধ্যে জনা পঁয়ত্রিশ আবার শিবির বদল করতে চাইছেন।
মুকুলকে নিয়ে জল্পনার শুরু হয়েছিল অভিষেক মুকুলের অসুস্থ স্ত্রী-কে হাসপাতালে দেখতে যান। অভিষেক যাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই হাসপাতালে যান দিলীপ। পরের দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও মুকুলকে ফোন করে তাঁর স্ত্রী-র স্বাস্থ্য সম্পর্কে খোঁজ নেন। তখন থেকেই মুকুলকে নিয়ে টানাপড়েনের শুরু। তার পরে বিজেপি-র পর্যালোচনা বৈঠকে মুকুলের অনুপস্থিতি জল্পনা আরও বাড়িয়েছে। সেই আবহেই সৌগতর গভীর ইঙ্গিত মুকুলকে নিয়ে জল্পনা এবং আলোচনা আরওই বাড়িয়ে দিল বলে মনে করছেন তৃণমূলের নেতারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy