জোরকদমে: স্কুল খোলার প্রথম দিনেই সরস্বতী পুজোর প্রস্তুতিতে ব্যস্ত পড়ুয়া ও শিক্ষক-শিক্ষিকারা। পৌঁছে গিয়েছে প্রতিমাও। বৃহস্পতিবার, শিয়ালদহের টাকি বয়েজ়ে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
কমিটি গঠন হয়ে গিয়েছে। হাতে একদম সময় নেই। তাই চটজলদি বিশেষ কিছু বানানো যায় কি না, সেই নিয়ে ঘন ঘন বদলাচ্ছিল পরিকল্পনা। একটি দল যাবে কুমোরটুলিতে। কারা এবং কখন যাবে, তা নিয়েও বিস্তর আলোচনা, মানভঞ্জন চলেছে। স্কুল খোলার প্রথম দিনের তোড়জোড়কে এ ভাবেই হারিয়ে দিল সরস্বতী পুজোর চূড়ান্ত প্রস্তুতি। তবে সংক্রমণের ভয়ে বসে ভোগ খাওয়ানোর পরিকল্পনা যে বাদ দিতে হবে, তাতে ওরা একমত।
এ বছর যে স্কুলে সরস্বতী পুজো হবে, কিছু দিন আগে পর্যন্তও তা ভাবতে পারছিল না পড়ুয়ারা। গত ৩১ জানুয়ারি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অষ্টম থেকে দ্বাদশের পড়ুয়াদের জন্য স্কুল খোলার কথা বলতেই ছবিটা বদলাতে শুরু করে। বৃহস্পতিবার স্কুল খোলার প্রথম দিনে একদল পড়ুয়া ঢুকেই শুরু করে দেয় পুজোর পরিকল্পনা। বেশির ভাগ স্কুলেই প্রধান শিক্ষকেরা জানালেন, একাদশের পড়ুয়াদেরই পুজোর ভার দেওয়া হয়েছে।
দীর্ঘ দিন স্কুলে আসতে না-পারা পড়ুয়াদের অনেকেই এ দিন দেখল, বদলে গিয়েছে স্কুল চত্বরের ছবিটা। যেমন, স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুলের অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়ারা দু’বছর পরে স্কুলে এল এ দিন। তারা দেখল, কিছু গাছ নেই। মন খারাপ হওয়া পড়ুয়ারা স্যরেদের থেকে শুনল, সেগুলি ভেঙে গিয়েছে আমপানে। হিন্দু স্কুলের একাদশের ছাত্র সায়ন সাহা, দীপ্ত বিশ্বাসেরা জানাচ্ছে, একরাশ মন খারাপ নিয়ে তারা এত দিন ঘরে বসেছিল। সরস্বতী পুজোর আগে স্কুল খোলার ঘোষণায় তা এক লহমায় উবে গিয়েছে। প্রথম পিরিয়ড শেষ হতেই শুরু হয়েছে পুজোর প্রস্তুতি। সায়ন জানাল, তাদের ভাবনা ‘বর্ণপরিচয়’। হেয়ার স্কুলের একাদশের দীপজ্যোতি ভট্টাচার্য, সৌম্যজিৎ নায়েকরা জানাল, তাদের থিম ‘মুখ নয় মুখোশ’। তবে মূল আকর্ষণ আল্পনা। কুমোরটুলি থেকে প্রতিমা আসবে আজ, শুক্রবার।
শিয়ালদহ টাকি বয়েজ়ের যে ঘরে ঠাকুর রয়েছে, সেখানে উকিঝুঁকি দিয়ে যাচ্ছিল পড়ুয়ারা। কিন্তু প্রধান শিক্ষিকা স্বাগতা বসাক জানিয়ে দেন, পুরো ক্লাস করে তবেই পুজোর আয়োজন করা যাবে। তিনি বলেন, “অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়ারা কত বড় হয়ে গিয়েছে! ওরাই পুজোর আয়োজন করছে।” যোধপুর পার্ক বয়েজ় স্কুলে অভিভাবকেরা কিছু ক্ষণ পড়ুয়াদের ক্লাস নেন। সেখানে তাঁরা করোনা সচেতনতার বার্তা দিয়েছেন। প্রধান শিক্ষক অমিত সেন মজুমদার বলেন, “পুজোর ভাবনাও কোভিড সচেতনতা।” বহু বছর ধরে সরস্বতী প্রতিমার রং, বসার ভঙ্গি একই রকম হয় ভবানীপুরের মিত্র ইনস্টিটিউশনে। এ বারেও তেমনই হবে, জানাল একাদশের শিলাজিৎ পাল, অনীক পোড়েল, তাতাই সূত্রধর, দীপ দাসেরা। ইংরেজির শিক্ষক প্রসেনজিৎ দে-র তত্ত্বাবধানে পুজো হচ্ছে বলে জানালেন প্রধান শিক্ষক রাজা দে।
এত কম সময়ে পুজোর আয়োজন করা যাবে না, মনে করেই পিছিয়ে গিয়েছে বেথুন গার্লস। তবে বেলতলা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় বিনা লড়াইয়ে জমি, থুড়ি আনন্দ ছাড়তে নারাজ। প্রধান শিক্ষিকা অজন্তা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নারায়ণ দেবনাথের আঁকা বিভিন্ন চরিত্র ছাত্রীরাই ফুটিয়ে তুলছে। নবম ও একাদশের পড়ুয়ারাই রয়েছে পুজোর দায়িত্বে।’’
শেষবেলায় স্কুল খোলার নির্দেশিকায় কাল, শনিবার সরস্বতী বন্দনায় মেতে উঠতে দেখা যাবে শহরের বেশির ভাগ স্কুলকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy