E-Paper

বীভৎসতায় বিরলতম, প্রবীণ দম্পতিকে খুনে দোষীকে মৃত্যুদণ্ড

২০১৫ সালের জুলাইয়ে চিৎপুর থানা এলাকার রানি দেবেন্দ্রবালা রোডের ‘ইন্দ্রলোক’ আবাসনের বাসিন্দা প্রাণগোবিন্দ দাস (৭৭) এবং তাঁর স্ত্রী রেণুকা দাস (৭৭) খুন হন। খুনের পরে এক লক্ষ ৮৭ হাজার টাকা এবং প্রায় ৫০ ভরি সোনার গয়না নিয়ে চম্পট দিয়েছিল খুনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৫ ০৭:১৪
শিয়ালদহের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক অনির্বাণ দাস সঞ্জয়কে মৃত্যুদণ্ড দেন।

শিয়ালদহের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক অনির্বাণ দাস সঞ্জয়কে মৃত্যুদণ্ড দেন। —প্রতীকী চিত্র।

দশ বছর আগে ঘটা, চিৎপুরের প্রবীণ দম্পতিকে খুনের ঘটনা বিরলের মধ্যে বিরলতম বলে আখ্যা দিল শিয়ালদহ আদালত। জোড়া খুনের ওই ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দিল আদালত।

২০১৫ সালের জুলাইয়ে চিৎপুর থানা এলাকার রানি দেবেন্দ্রবালা রোডের ‘ইন্দ্রলোক’ আবাসনের বাসিন্দা প্রাণগোবিন্দ দাস (৭৭) এবং তাঁর স্ত্রী রেণুকা দাস (৭৭) খুন হন। খুনের পরে এক লক্ষ ৮৭ হাজার টাকা এবং প্রায় ৫০ ভরি সোনার গয়না নিয়ে চম্পট দিয়েছিল খুনি। এই মামলায় মঙ্গলবার আদালত দোষী সাব্যস্ত করেছিল সঞ্জয় সেন ওরফে বাপ্পাকে। বুধবার শিয়ালদহের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক অনির্বাণ দাস সঞ্জয়কে মৃত্যুদণ্ড দেন। খুনের দায়ে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।পাশাপাশি, ডাকাতির জন্য সঞ্জয়কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে আদালত।

বিচারক বলেন, ‘‘খুনের পরে মৃতদেহের যে সব ছবি আদালতে পেশ করা হয়েছে, তা দেখলে এই হত্যাকাণ্ডের বীভৎসতা সম্পর্কে কোনও সংশয় থাকে না। এই ঘটনা বিরলের মধ্যে বিরলতম। তাই মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করলাম।’’

এ দিন বিশেষ সরকারি আইনজীবী সন্দীপ ভট্টাচার্য সঞ্জয়ের চরম শাস্তির আর্জি জানিয়ে বীভৎসতার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘‘সঞ্জয়কে ছেলের মতো স্নেহ করতেন প্রাণগোবিন্দ ও রেণুকা। তাকে বিশ্বাস করতেন, ভরসা করতেন। তার পরেও সঞ্জয় নৃশংস ভাবে লোহার রড দিয়ে মাথা থেঁতলে ওই দম্পতিকে খুন করে। এই খুনের ঘটনা পূর্ব পরিকল্পিত। সকালে ওই বাড়িতে চা, জলখাবার খেয়ে গিয়েছিল সঞ্জয়। বিকেলে এসে সে দম্পতিকে খুন করে। এই ঘটনায় সমাজের বিশ্বাসের ভিত নড়ে গিয়েছে। এই খুন ভয়াবহের মধ্যেও ভয়াবহতম।’’ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর হত্যা এবং ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের মামলার প্রসঙ্গও আদালতে তুলে ধরেন সন্দীপ। সঞ্জয়ের আইনজীবী অমর্ত্য দে পাল্টা যুক্তি দিয়ে বলেন, ‘‘সঞ্জয়ের পূর্ব অপরাধের কোনও রেকর্ড নেই। বয়সটাও বিবেচনায় রাখা হোক। ১০ বছর ধরে এই মামলা চলছে, সঞ্জয়ের জামিন হয়নি। তাকে সংশোধনের একটা সুযোগ দেওয়া হোক।’’ প্রসঙ্গত, চিৎপুর থানা এলাকার বাসিন্দা সঞ্জয়ের বয়স এখন ৪৫।

পুলিশ সূত্রের খবর, ‘ইন্দ্রলোক’ আবাসনের ফ্ল্যাটের দু’টি ঘরে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল প্রাণগোবিন্দ ও রেণুকার দেহ। দু’জনেই অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। তাঁদের মেয়ে থাকেন আমেরিকায়। রেণুকার ভাইপো পার্থ সেনের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা শুরু হয়। তদন্তভার যায় গোয়েন্দাদের হাতে। আর জি কর হাসপাতালে ময়না তদন্ত হয়। নন্দীগ্রাম থেকে সঞ্জয়কে গ্রেফতার করে পুলিশ। মামলার তদন্তকারী অফিসার জগদ্বন্ধু গড়াই বলেন, ‘‘নন্দীগ্রামে সঞ্জয়ের শ্বশুরবাড়ি। সেখানে পুকুরপাড়ে গর্ত করে লুটের টাকা ও গয়না লুকিয়ে রেখেছিল সে। খুনে ব্যবহৃত লোহার পাইপটিও উদ্ধার হয় চিৎপুরে সঞ্জয়ের বাড়ির কাছে একটি পুকুর থেকে।’’

এ দিন মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার আগে সঞ্জয়ের সঙ্গে কথা বলেন বিচারক। সঞ্জয় হাতজোড় করে কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘‘আমার মা মারা গিয়েছে। বাবা অসুস্থ। আমার সাড়ে ১৩ এবং ১২ বছরের দু’টি মেয়ে রয়েছে। তাদের আমি ছাড়া দেখার কেউ নেই।’’ আদালত সূত্রের খবর, এই মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন ৩০ জন। আমেরিকা থেকে এসে সাক্ষ্য দিয়ে গিয়েছেন নিহত দম্পতির মেয়ে।

এ দিন আদালতে উপস্থিত ছিল সঞ্জয়ের দুই নাবালিকা কন্যা। ছিলেন তার মামা পিন্টু চন্দ। সঞ্জয়ের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পরে কাঁদতে থাকে দুই মেয়ে। আদালতে হাজির ছিলেন পার্থ এবং তাঁর স্ত্রী মৌসুমি সেন। চিকিৎসক পার্থ বলেন, ‘‘এই রায়ে আমরা খুশি।’’ সন্দীপের কথায়, ‘‘এক মেয়ে তাঁর বাবা-মাকে হারিয়েছেন। তিনি সুবিচার পেলেন।’’ সঞ্জয়ের আইনজীবী অমর্ত্য বলেন, ‘‘রায়ের কপি হাতে পেলে উচ্চ আদালতে আবেদন জানাব। প্রয়োজনে পুনরায় তদন্তের আর্জি জানাব।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Murder Sealdah Court

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy