Advertisement
E-Paper

চকোলেট-মিষ্টিতে মাস্টার শেফের খোঁজ

সেটা গত শতকের চল্লিশের দশকের কথা। নতুন বাজারের চেনা ময়রাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন উত্তর কলকাতার পাথুরিয়াঘাটার অভিজাত ঘোষ-বাড়ির এক গিন্নি।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০০:৩৮

সেটা গত শতকের চল্লিশের দশকের কথা। নতুন বাজারের চেনা ময়রাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন উত্তর কলকাতার পাথুরিয়াঘাটার অভিজাত ঘোষ-বাড়ির এক গিন্নি। নির্মলাবালাদেবীর ছেলেরা সক্কলে চকোলেট অন্ত প্রাণ। তাই হাতে-ধরে মিষ্টিওয়ালাকে ডেকে চকোলেট সন্দেশ গড়ার তুকতাক শেখালেন গিন্নি মা। এ কালের বঙ্গসংস্কৃতির অঙ্গাঙ্গী চকোলেট সন্দেশের সম্ভবত সেটাই সূচনা।

নতুন বাজারের ভিতরের দু’টি চিলতে খোপের পড়শি দুই সন্দেশ-স্রষ্টা— মাখনলাল ও নলিন দাশ। চকোলেট সন্দেশের জন্য বিখ্যাত দু’পক্ষই। এ সৃষ্টির নেপথ্যে বড়-বাড়ির গিন্নিদের ভূমিকার কথাও দু’পক্ষই স্বীকার করেন। ঘরোয়া লক্ষ্মীমন্ত স্নেহস্পর্শের স্মারক সেই সন্দেশ, এ যুগে গোটা বাংলা জুড়ে মিষ্টির বাণিজ্যলক্ষ্মীও বটে! চকোলেট-মিষ্টির নানা অবতার মিষ্টিস্রষ্টাদের উদ্ভাবনী শক্তিরও পরিচয় দিচ্ছে। এবিপি গোষ্ঠীর ‘ক্যাডবেরি মিষ্টি সেরা সৃষ্টি’ প্রতিযোগিতাও যুগপৎ আমবাঙালির মিষ্টি ও চকোলেট প্রেমের প্রতীক।

পাঁচ বছরে দাঁড়িয়ে ‘ক্যাডবেরি মিষ্টি’-র লড়াই যেন তার উৎসের কাছেই ফিরে আসছে। শুধু নতুন বাজারের বিখ্যাত চকোলেট সন্দেশ নয়, এ যুগের পালা-পার্বনে জনপ্রিয় বহু মিষ্টিই গেরস্ত বাঙালির অন্দরমহল থেকে যাত্রা শুরু করেছিল। ঘরোয়া নারকেলছাপা, চন্দ্রপুলি-পেরাকির মতো অনেক সৃষ্টির আদিতেই দক্ষ গিন্নিদের হাতযশ। এত বছর বাদে ক্যাডবেরি মিষ্টির প্রতিযোগিতা সেই ঘরোয়া প্রতিভাই মেলে ধরতে চাইছে। বরং বলা ভাল, এ বারের প্রতিযোগিতার শেষ-পর্বে অপেশাদার ঘরোয়া ‘মাস্টার শেফ’দের শ্রেষ্ঠ রেসিপি-র সেরা উপস্থাপনার কীর্তিতেই যাচাই হবে, কোন ময়রা কত করিতকর্মা।

খাদ্য বিশেষজ্ঞ বিচারকমণ্ডলীর রায়ে গিন্নিদের সেরা সৃষ্টি বলে সাব্যস্ত হলে ‘ক্যা়ডবেরি মিষ্টি’র সেই রেসিপি এ বার ঠাঁই পাবে নামজাদা মিষ্টি-বিপণির শো-কেসে। সাধারণ রান্নাপাগল প্রতিভাবানদের সৃষ্টির সেরা তিনটি রেসিপি অনুযায়ী, মিষ্টি গড়বেন পেশাদার মিষ্টি-স্রষ্টারা। কলকাতা, হাওড়া-হুগলি, দুই ২৪ পরগনার ২৪টি মিষ্টি-চেনের প্রায় ৫০টি আউটলেটে দেখা মিলবে সেই নতুন ক্যা়ডবেরি মিষ্টির। উদ্যোক্তারা বলছেন, ঘরোয়া রান্না-প্রতিভাকে কে কতটা দক্ষতার সঙ্গে তুলে ধরলেন, চূড়ান্ত পর্বে ভোটাভুটিতে তারও একটা পরীক্ষা হবে।

‘‘সাধারণ মিষ্টিখোর বাঙালি বা ঘরোয়া রন্ধনপটিয়সীদের সঙ্গে পেশাদার মিষ্টিস্রষ্টাদের সেতুবন্ধের কাজটাও পোক্ত হবে এমন অভিনব প্রয়াসে!’’— বলছেন বিজ্ঞাপন নির্মাতা সৌভিক মিশ্র। তাঁর মতে, ‘‘মিষ্টির জগতে ক্যাডবেরির অনুপ্রবেশটা কেউ কেউ সংঘাত হিসেবে দেখে থাকেন। কিন্তু ফ্ল্যান, টার্ট, ম্যুজ, পেস্ট্রিতে মত্ত বাঙালিকে নিজেদের শিকড়ে কাছে ফেরাতেও এ-সব চর্চা তাৎপর্যপূর্ণ।’’

এই প্রতিযোগিতায় সামিল শতাব্দী-প্রাচীন বলরামের কর্ণধার সুদীপ মল্লিক বা রিষ়়ড়ার ফেলু মোদকের অমিতাভ মোদকেরা ঘরোয়া প্রতিভাদের দক্ষতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন ফোরাম সাক্ষী, গোটা দেশ জুড়েই ‘হোম শেফ’-এর দল ইদানীং দারুণ সব সৃষ্টিতে নিজেদের জাত চেনাচ্ছেন। ইউ টিউব বা বিভিন্ন ওয়েবসাইটে নানা কিসিমের বাঙালি মিষ্টি নিয়ে জল্পনাও সতত তুঙ্গে। এ প্রতিযোগিতায় নাম লেখানোর পরে কর্মশালায় সামিল হওয়ার সুযোগ পাবেন মিষ্টির ‘মাস্টার শেফ’-এরা। তারপরই চূড়ান্ত বাছাই-পর্ব। উদ্যোক্তারা বলছেন, নির্দিষ্ট নম্বর (০৮০৮০৯৪৫০৩০)-এ ‘মিস্‌ড কল’ দিয়ে প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে তুমুল উৎসাহ বাঙালি গিন্নিদের।

অনেকের মনে পড়ে যাচ্ছে, একদা তেলিনিপাড়ার জমিদার-গিন্নির বুদ্ধিতে জামাই ঠকানো সন্দেশ গড়ার চেষ্টা থেকেই চন্দননগরের সূর্য মোদকের ভিয়েনে জন্ম হয় মিষ্টি-আইকন ‘জলভরা তালশাঁসে’র। সার্ধ শতবর্ষ পার করে নতুন সৃষ্টির আশায় সেই ‘ঘরোয়া-শিল্পী’দেরই দ্বারস্থ আজকের বাঙালি।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy