Advertisement
E-Paper

শব্দ জব্দে অভিযান বাজিঘরেই

পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র নির্দেশ দিয়েছেন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার সুব্রত ঘোষের নেতৃত্বে একটি দল ওই কারখানাগুলিতে দফায় দফায় গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবে।

সুরবেক বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:৩৯
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

অবশেষে সর্বনাশের আঁতুড়ঘরে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত। কারণ, শব্দের বিপদ বড় বালাই।

ব্যবসায়ীদের হিসেবে, এই রাজ্যে বাজি কারখানা ৩০ হাজারের বেশি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের হিসেবে বাজির বৈধ কারখানার সংখ্যা ১১। আর সেই কারখানাগুলি শুধু আলোর বাজি তৈরি করছে নাকি নিষিদ্ধ শব্দবাজিও তৈরি করছে, এ বার সরেজমিনে গিয়ে তা দেখবেন পর্ষদের অফিসারেরা।

পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র নির্দেশ দিয়েছেন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার সুব্রত ঘোষের নেতৃত্বে একটি দল ওই কারখানাগুলিতে দফায় দফায় গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবে। মাস দু’য়েক পরে শুরু হবে অভিযান। চলবে আগামী জুন-জুলাই পর্যন্ত। নতুন বাজি তৈরি শুরু হবে জানুয়ারি থেকে।

একই সঙ্গে পর্ষদের দল অভিযান চালাবে কলকাতার আশপাশের ম্যাগাজিন বা বাজির ব়ড় বড় গুদামে। উলুবেড়িয়া ও তারকেশ্বরে বাজির এমন চার-পাঁচটি ম্যাগাজিন আছে। সে সব জায়গায় শিবকাশীর বাজি পৌঁছে যায় ফেব্রুয়ারিতে। যার একটি অংশ আলোর বাজির ছদ্মবেশে থাকা শব্দবাজি। আবার কলকাতায় বসা পাঁচটি বাজি বাজারের ২০ শতাংশের বেশি বাজি এ বার বিক্রি হয়নি বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরাই। ওই অবিক্রিত বাজির বড় অংশও ঢুকবে ম্যাগাজিনে।

কল্যাণবাবু জানান, ১১টি বাদে রাজ্যের হাজার হাজার বাজি কারখানা বেআইনি ভাবে চলছে। সেগুলিকে কী ভাবে আইনের আওতায় আনা যায়, সেই চেষ্টা হচ্ছে। যাতে তাদের উপরে নজরদারি চালানো যায়। কিন্তু যে সব কারখানার সব রকম অনুমোদন আছে, তারাই বা কী ধরনের বাজি তৈরি করছে, সেটাও দেখতে হবে।

ডিজে-র দাপট কমলেও এ বার উৎসবের মরসুমে শব্দবাজির তাণ্ডব কেন রোখা গেল না, তার উত্তর হাতড়ে বেড়াচ্ছে পর্ষদ। কল্যাণবাবুর কথায়, ‘‘এ বার এত প্রচার করা হল! তার পরেও শব্দবাজির এতটা বাড়াবাড়ি হবে ভাবা যায়নি।’’

লালবাজার ও পরিবেশ দফতরের কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ বার ডিজে বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ফলে পুলিশ তো বটেই, বহু পাড়ার ক্লাবও ডিজে বন্ধ করতে তৎপর ছিল। কিন্তু শব্দবাজি বন্ধ করার ব্যাপারে খোদ প্রশাসনের শীর্ষ মহল থেকে সুস্পষ্ট, কঠোর নির্দেশ আসেনি। যদিও ডিজে এবং শব্দবাজি— দু’টোই সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী নিষিদ্ধ।

জাতীয় পরিবেশ আদালতে জমা দেওয়া পর্ষদের রিপোর্ট অনুযায়ী, কলকাতা ও আশপাশের আবাসিক এলাকার গড় শব্দমাত্রা অন্য সাধারণ দিনের চেয়ে দীপাবলিতে ১৩ ডেসিবেল বেড়ে যায়। পর্ষদের বক্তব্য, এর কারণ মূলত শব্দবাজি।

এ বার যেমন বিরাটি। ওই এলাকায় দীপাবলির সকালে ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত শব্দের গড় মাত্রা ছিল ৬৯ ডেসিবেল। তার পরের ১২ ঘণ্টায় ৫৫ ডেসিবেল। সোমবার যখন পুজো বা বিসর্জন কিছুই নেই, তখন বিরাটিতে প্রথম ১২ ঘণ্টার গড় শব্দমাত্রা ৫৮.৪ ডেসিবেল, পরের ১২ ঘণ্টায় ৫২ ডেসিবেল। আর এক আবাসিক তল্লাট, বাগবাজারে দীপাবলির প্রথম ১২ ঘণ্টার গড় শব্দমাত্রা ছিল ৭৭ ডেসিবেল, পরের ১২ ঘণ্টায় ৭১ ডেসিবেল। অথচ সোমবার সেখানে দু’টি অর্ধে গড় শব্দমাত্রা কমে হয় যথাক্রমে ৭১.৬ এবং ৬৭.৬ ডেসিবেল।

তবে পর্ষদের অনুসন্ধানে আগেই বেরিয়েছে, সাধারণ দিনে কলকাতার শব্দমাত্রা নির্ধারিত সীমার চেয়ে বেশি। আবাসিক তল্লাট হিসেবে বিরাটি ও বাগবাজারে প্রথম ও শেষ ১২ ঘণ্টার গড় শব্দমাত্রার সীমা যথাক্রমে ৫৫ ডেসিবেল ও ৪৫ ডেসিবেল। দু’টি এলাকাই সোমবার কখনওই সেই শব্দমাত্রার মধ্যে থাকতে পারেনি। পর্ষদের বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, অকারণ হর্ন বাজানো, গাড়ির শব্দ, মানুষের চলাফেরা ও কথাবার্তা কলকাতাকে মারাত্মক ভাবে শব্দময় করে তুলছে। বাড়তি যন্ত্রণা শব্দবাজি।

পর্ষদের অবসরপ্রাপ্ত মুখ্য আইন আধিকারিক, বর্তমানে পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘দিল্লির বায়ুদূষণ এমনিতেই বেশি। তা যাতে আরও না বাড়ে, সে জন্য সেখানে সুপ্রিম কোর্ট সব রকম বাজি নিষিদ্ধ করেছে। কলকাতাতেও শব্দদূষণ বেশি। সেই জন্যই কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গে শব্দবাজি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অথচ সেই নিষেধ কেউ মানছে না।’’

Sound Pollution Fire Crackers Sound Crackers West Bengal Pollution Control Board পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy